গোপন অঙ্গের ভিতরে মরিচের গুঁড়ো পড়তেই অসহ্য যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠেন তিনি। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে লাথি ছুড়তে থাকেন আক্রমণকারীদের উদ্দেশ্যে।
দুই জমাদারনি তাঁকে নিজের সেল থেকে বের করে এনে ভিন্ন সেলে নিয়ে আসার সময়ই তিনি জানতেন অত্যাচার করা হবে তাঁর উপরে। এটা তাঁর জন্য নিয়মিত ঘটনা। জেলে আসার পর থেকে প্রতিদিনই তাঁর উপরে অত্যাচার চালানো হচ্ছে কথা বের করার জন্য। বিপ্লবীদের হদিস জানতে গালিগালাজ থেকে মারধোর, হেন কোনো অত্যাচার নেই যা করা হচ্ছে না তাঁর উপরে। কাশীর জেলে আসার পর থেকে অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেছে। এখানকার ডেপুটি পুলিশ সুপারিটেন্ডেন্ট জিতেন ব্যানার্জী কোনো কারণে বিপ্লবীদের উপর মহাখাপ্পা। কঠোর ভাষায় তাঁকে প্রতিদিন জেরা করে লোকটা। নানা ধরনের হুমকি-ধামকি দেয়, অপমান করে, গায়ে হাত তোলে। তিনি সব সহ্য করে যান দাঁতে দাঁত চেপে। নির্বিকারভাবে অস্বীকার করেন বিপ্লবীদের কথা। তাঁদের কাউকে চেনেন না তিনি, কারো সাথে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি একজন অসহায় বিধবা নারী। জিতেন ব্যানার্জী বিশ্বাস করে না তাঁর এইসব কথা। তাঁর বিষয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য রয়েছে তার কাছে। সে কারণে অত্যাচারের মাত্রা প্রতিদিন বাড়তে থাকে।
কিন্তু, আজ যে অত্যাচার তাঁর উপরে করা হলো, সেটার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। এরকম অত্যাচার হতে পারে, সেটা আসলেও স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। তিনি ভেবেছিলেন অন্যদিনের মতোই গতানুগতিক অত্যাচার চালানো হবে তাঁর ওপরে। তারপর ক্লান্ত হয়ে একসময় ক্ষান্ত দিয়ে তাঁকে পাঠিয়ে দেবে তাঁর নিজের সেলে।
নির্জন সেলে এনে দুই জমাদারনি তাঁকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো। একজন চেপে বসলো তাঁর বুকের উপরে। অন্যজন তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা নিচের অংশ থেকে শাড়ি তুলে আনলো কোমরের কাছে। তারপর যৌনাঙ্গের মধ্যে পুরে দিলো এক গাদা মরিচের গুড়ো। অসহ্য ব্যথায় অপার্থিব চিৎকার বেরিয়ে এলো তাঁর গলা দিয়ে। শরীরে অসুরের শক্তি। ক্রমাগত লাথি মারতে থাকলেন তিনি দুই জমাদারনিকে। তাঁর সঙ্গে ধস্তাধস্তাতিতে না পেরে দুজনে তাঁকে নিয়ে এলো অফিস ঘরে। জিতেন ব্যানার্জী অপেক্ষা করছে সেখানে তাঁর জন্য।
‘কী জানো বলো।’ হাতের মধ্যে শক্ত রুলারটাকে ঘোরাতে ঘোরাতে জিতেন ব্যানার্জী বলে।
‘বলবো না কিছু।’ তাঁর দু’চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে।
‘আরো কঠোর শাস্তি দেবো।’ ইশারায় দুই জমাদারনিকে দেখায় জিতেন ব্যানার্জী।
‘যতো খুশি দিন, আমি কিছুই বলবো না।’
‘কিছু বলা লাগবে না। অমর চ্যাটার্জী কোথায় আছে সেটা বললেই হবে শুধু।’
‘বলবো না।’
‘শাস্তি পাবে কিন্তু। কেমন শাস্তি নিশ্চয়ই বুঝেছো এতক্ষণে।’ ঠোঁট বাঁকা করে সশব্দে হাসে জিতেন ব্যানার্জী।
‘যা খুশি করতে পারেন। আমি কিছুই বলবো না।’ কঠোর শোনায় তাঁর কণ্ঠ। এই কণ্ঠ শুনেই জিতেন ব্যানার্জী বুঝে যায়, এই অতি সাধারণ সাধারণ চেহারার বাঙালি বিধবা নারীটি সাধারণ কেউ না। একে ভাঙতে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে তাকে।
কাশীর জেল পুরনো আমলের। মাটির নীচে একটা শাস্তি কক্ষ আছে। সেখানে তাঁকে পুরে দেবার নির্দেশ দেয় জিতেন ব্যানার্জী। এই শাস্তি কক্ষে একটাই দরজা। আলো, বাতাস প্রবেশ করার জন্য কোনো জানালা সেখানে নেই। সেই অন্ধকার কক্ষে প্রতিদিন আধা ঘণ্টা করে রাখা হবে তাঁকে। এখানে দশ মিনিট কাউকে রাখলেই সে ভয়ে আধমরা হয়ে যায়।
প্রথম দিনের আধা ঘণ্টা পরে দরজা খুলে দেখা গেলো অর্ধমৃত অবস্থায় পড়ে আছেন তিনি। তারপরেও মুখ খুলবেন না। দ্বিতীয় দিনেও একই দশা। তৃতীয় দিনে আধাঘণ্টার বদলে বাড়িয়ে পঁয়তাল্লিশ মিনিট করা হলো শাস্তির মেয়াদ। তাঁর স্নায়ুকে একেবারে ভেঙে দেবার চূড়ান্ত প্রচেষ্টা। কবরের মতো হিম অন্ধকার ভূগর্ভস্থ কক্ষে একাকী তিনি পড়ে রইলেন পঁয়তাল্লিশ মিনিট। দরজা খুলে দেখা গেলো অজ্ঞান পড়ে আছেন তিনি। জ্ঞান হবার পরেও সেই একই কথা, কিছুই বলবেন না তিনি।
কাশীর পুলিশ হাল ছেড়ে দিলো। এরকম ইস্পাত কঠিন একজন নারীর মুখ থেকে কথা বের করার আর কোনো উপায় তাদের জানা নেই। তাঁকে নিয়ে আসা হলো কোলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে।
এতক্ষণ যে ইস্পাত কঠিন নারীটির কথা বললাম, তাঁর নাম হচ্ছে ননীবালা দেবী। তিনি জন্মেছিলেন ১৮৮৮ সালে, হাওড়া জেলার বালিতে। মাত্র এগারো বছর বয়সে বিয়ে হয় তাঁর। চলে যান শ্বশুর বাড়িতে। ষোলো বছর হতে না হতেই বিধবা হয়ে পিতৃগৃহে ফিরে আসেন তিনি।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হয় ১৯১৪ সালে। ব্রিটেনকে এক হাত দেখে নেবার বাসনায় ভারতের বিপ্লবীদের অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে জার্মান। এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় বিপ্লবী দল যুগান্তরের পক্ষে থেকে। জার্মানি থেকে অস্ত্র এনে ভারতব্যাপী একটা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে বিপ্লবের পথ প্রশস্ত করে ভারতের স্বাধীনতা আনাই ছিলো এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। জাহাজে করে বার্মা সীমান্তে অস্ত্র আনা হবে। সেখানে বিপ্লবীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কোলকাতা দখল করা হবে, এরকম পরিকল্পনা নিয়েই বিপ্লবীরা এগোচ্ছিলেন। এর নেতৃত্বে ছিলেন যতীন্দ্রনাথ মুখার্জী। এই পরিকল্পনাটা অবশ্য বেশি দূর এগোয় না। ব্রিটিশ সরকার গুপ্তচর মারফত এই পরিকল্পনার কথা জেনে যায়। যে জাহাজে করে অস্ত্র আনার কথা ছিলো, সেটাকে আমেরিকাতে আটকে দেওয়া হয়। ব্রিটিশ সরকার সর্বাত্মক আক্রমণ চালায় বিপ্লবীদের ঘাটিগুলোতে। বালেশ্বরের যুদ্ধে বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখার্জী নিহত হন। বিপ্লবীদের তখন ছিন্ন ভিন্ন অবস্থা। কাউকে ধরে ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে, কাউকে বা দ্বীপান্তর।
এরকম এক ক্রান্তিকালে বিপ্লবে দীক্ষা নিলেন ননীবালা দেবী। তাঁকে বিপ্লবের এই পথে নিয়ে এলো তাঁরই ভ্রাতুষ্পুত্র অমরেন্দ্রনাথ চ্যাটার্জী। পুলিশের অত্যাচারে বিপ্লবীদের তখন পালিয়ে থাকা দায়। কোথাও আশ্রয় পাওয়া যায় না। সাথে মহিলা না থাকলে কেউ বাড়ি ভাড়াও দিতে চায় না। ননীবালা দেবী এদের উদ্ধারে এগিয়ে এলেন। রিষড়াতে বাড়ি ভাড়া নিলেন তিনি। অমরেন্দ্রনাথসহ আরো কয়েকজন বিপ্লবী এই বাড়িতে লুকিয়ে থাকতো।
কোলকাতার শ্রমজীবী সমবায় প্রতিষ্ঠানে বিপ্লবীরা খুব গোপনে মিলিত হয়ে সভা করতো। একদিন পুলিশ এখানে তল্লাশি চালায়। অমরেন্দ্রনাথ কোনোক্রমে পালিয়ে যেতে পারে। কিন্তু তার সহ-বিপ্লবী রামচন্দ্র মজুমদার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায়। রা্মচন্দ্র মজুমদারের কাছে একটা মসার পিস্তল ছিলো। সেটাকে সে কোথায় লুকিয়ে রেখেছে, এটা কাউকে বলে যাবার সময় পায়নি। এই তথ্য জানার জন্য ননীবালা দেবী অভিনব এক উপায় বের করলেন। রামচন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী সেজে প্রেসিডেন্সি জেলে তার সাথে দেখা করলেন তিনি। জেনে নিলেন মসার পিস্তলের অবস্থান।
পুলিশ কোনোভাবে জেনে গেলো ননীবালা দেবী আসলে রামচন্দ্রের স্ত্রী না। বরং এর আশ্রয়েই রিষড়াতে বিপ্লবীরা থাকতো। তাদের চোখ পড়লো ননীবালা দেবীর প্রতি। রিষড়া ছেড়ে চন্দননগরে চলে এলেন ননীবালা দেবী। আবার বাড়ি ভাড়া নিলেন, আশ্রিত হিসাবে সেখানে রাখলেন বিপ্লবীদের। বেশিদিন এখানেও নিরাপদে থাকলেন না তিনি। গ্রে হাউন্ডের মতো গন্ধ শুঁকে শুঁকে পুলিশ হাজির হলো এখানেও। নানা জায়গায় খানা তল্লাশি করা শুরু করলো তারা। ননীবালার বাবা সূর্যকান্তি ব্যানার্জীকে পুলিশ ডেকে নিয়ে যেতো অফিসে। সারাদিন বসিয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো। জানতে চাওয়া হতো তাঁর মেয়ের সন্ধান।
এ’রকম পরিস্থিতিতে বাংলায় থাকার জন্য আর ভরসা পেলেন না তিনি। তাঁর এক বাল্যকালের বান্ধবীর বড় ভাই পেশোয়ার যাচ্ছিলেন কোনো এক কাজে। অনেক অনুনয় বিনয় করে তিনি তাঁর সঙ্গ নিলেন। পেশোয়ারে পলাতক হয়ে খুব একটা লাভ হলো না তাঁর অবশ্য। পনেরো ষোলো দিনের মধ্যেই পুলিশ তাঁর সন্ধান পেয়ে গেলো। পুলিশ যখন তাঁকে গ্রেফতার করতে এলো, তখন তাঁর নড়ার অবস্থাও নেই। পেশোয়ারে গিয়েই কলেরা বাধিয়েছেন তিনি। স্ট্রেচারে করে পুলিশ তাঁকে নিয়ে গেলো থানায়। পরের দিন চালান করে দিলো কাশীর জেলে।
সেই কাশী থেকে এখন আবার তাঁকে পাঠানো হলো কোলকাতায়। এখানে এসেই অনশন ধর্মঘট করলেন তিনি। তাঁকে জেল থেকে মুক্ত করে না দেওয়া পর্যন্ত তিনি খাবেন না, এই ঘোষণা দিয়ে দিলেন তিনি। জেল কর্তৃপক্ষ, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কারো অনুরোধেই তিনি অনশন ভাঙতে রাজি হলেন না। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো আইবি পুলিশের স্পেশাল সুপারিন্টেনডেন্ট গোল্ডি সাহেবের কাছে।
‘যতোই অনশন করুন না কেনো, জেল থেকে আপনি মুক্তি পাবেন না। অন্য কী করলে আপনি খাবেন?’
‘যা চাইবো তাই করবেন?’
‘হ্যাঁ, করবো।’
‘আমাকে বাগবাজারে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের স্ত্রীর কাছে রেখে দিন, তাহলে খাবো।’
‘আপনি দরখাস্ত লিখে দিন, দেখছি।’
ননীবালা দেবী সাথে সাথেই দরখাস্ত লিখে দিলেন। তাঁকে বিস্মিত করে গোল্ডি সেই দরখাস্তকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে দি্লো ওয়েস্টপেপার বাস্কেটে।
বারুদে যেন আগুনের ফুলকি পড়লো। ক্ষিপ্ত ননীবালা আহত বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লেন গোল্ডি সাহেবের উপর। সজোরে চড় বসালেন গোল্ডির গালে। দ্বিতীয় চড় মারার আগেই পুলিশের অন্যান্য কর্মচারীরা সরিয়ে নিলো ননীবালাকে। তিনি তখনও ফুঁসছেন।
‘ছিঁড়ে ফেলবেতো আমায় দিয়ে দরখাস্ত লেখালো কেনো? আমাদের দেশের মানুষের কোনো মান-সম্মান থাকতে নেই?’
জেলে ফেরত আনা হলো ননীবালা দেবী। স্টেট প্রিজনার হিসাবে রাখা হলো। নারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম স্টেট প্রিজনার। অনশন তখনও তাঁর চলছে। এর মধ্যেই তাঁর কানে এলো জেলে আরেক নারী কয়েদী এসেছেন। তাঁর নাম দুকড়িবালা। তাঁর বাড়িতে সাতটা মসার পিস্তল পাবার অপরাধে তাকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রাজবন্দীর মর্যাদা দুকড়িবালা পাননি। জেলে তাঁকে রাখা হয়েছে তৃতীয় শ্রেণির কয়েদী হিসাবে।
দুকড়িবালা নামের এই নারীটিও বিপ্লবী দলের সদস্য হয়েছিলেন। তাঁর বোনপো নিবারণ ঘটক ছিলো বিপ্লবী। তাকে দেখে তিনিও এই পথে আসার আগ্রহ দেখান। নিবারণ তাঁকে নিষেধ করে বলে, ‘এমন বিপদের মুখে পা বাড়াতে নাই বা এলে মাসিমা?’
নিবারণের এই কথা শুনে গর্জে উঠেছিলেন দুকড়িবালা।
‘তুমি যদি দেশের জন্য প্রাণ দিতে পারো, তোমার মা-ও পারে।’
এই গর্জন শোনার পরে নিবারণের আর কিছু বলার সাহস জোটেনি।
রডা কোম্পানির অস্ত্রের ব্যবসা ছিলো। জাহাজে করে একদিন এই কোম্পানির অস্ত্রের সরবরাহ এসেছে। সাতটা গরুর গাড়িতে করে দুইশো বাক্স অস্ত্র জাহাজ থেকে খালাস করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কোম্পানির গুদামে। একটা গাড়ির গাড়োয়ান যে বিপ্লবী হরিদাস দত্ত, সেটা কেউ জানে না। এমনই নিখুঁত তাঁর ছদ্মবেশ। তিনি এক গাড়ি অস্ত্র নিয়ে উধাও হয়ে গেলেন। সেই গাড়িতে নয়টা বাক্সে কার্টিজ আর পঞ্চাশটা মসার পিস্তল ছিলো। এগুলো পরে চালান হয়ে যায় বিপ্লবীদের বিভিন্ন কেন্দ্রে। নিবারণ সাতটি পিস্তল এনে রেখেছিলো তাঁর মাসির কাছে।
দুকড়িবালাকে প্রতিদিন আধমণ ডাল ভাঙতে হতো সশ্রম কারাদণ্ডের শর্ত হিসাবে। এখান থেকে তাঁকে উদ্ধারের পরিকল্পনা করেন ননীবালা দেবী।
অনশনের উনিশ-বিশ দিন চলছে তখন। ম্যাজিস্ট্রেট আবার এসেছে অনশন ভাঙার অনুরোধ নিয়ে।
‘জেল থেকে তো আপনি মুক্তি পাবেন না। খামোখাই কষ্ট করছেন আপনি। কী করলে খাবেন বলুন?’
‘আমার ইচ্ছামতো হবে?’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন।
‘হ্যাঁ, হবে।’
‘তাহলে আমার রান্না করবার জন্য একজন ব্রাহ্মণ-কন্যা চাই।’
‘ব্রাহ্মণ কন্যা কি কেউ আছেন এখানে?’ ভ্রু কুঁচকে ম্যাজিস্ট্রেট বলেন।
‘হ্যাঁ, আছেন, দুকড়িবালা দেবী।’
‘আচ্ছা, তাই হবে।’ অনশন ভাঙছেন ননীবালা দেবী, এই স্বস্তিতে সহজেই অনুমতি প্রদান করেন ম্যাজিস্ট্রেট।
দুই বছর বন্দিজীবন কাটানোর পরে ১৯১৯ সালে মুক্তি পান ননীবালা দেবী। বাইরে এসে আরো কঠিন বিপদের মধ্যে পড়লেন তিনি। পুলিশের ভয়ে কেউ তাঁকে আশ্রয় দিতে চায় না। জীবনের মায়া যিনি করেন না, দেশ যাঁর কাছে সবার উপরে, এই সামান্য সমস্যায় কাতর হওয়া তাঁর সাজে না। সাজেও নি। একটা আধাঘুপচি ঘর ভাড়া নিয়ে জীবন সংগ্রাম শুরু করেন তিনি। আত্মীয়স্বজনের অনাদর আর অবহেলা, কঠোর দারিদ্র, সবকিছুকে এক পাশে ফেলে রেখে মেরুদণ্ড সোজা করে মাথা উঁচু করে চলেছেন তিনি বাকিটা জীবন। পরাধীন এই দেশ একদিন স্বাধীন হবে, মানুষের মুক্তি আসবে, পাখির ডানায় ভর করে উড়বে সবাই আসমুদ্র-হিমাচল, এই স্বপ্নের বাইরে আর কোনো নিজস্ব স্বপ্ন ছিলো না তাঁর জীবনে।