তানবীরা তালুকদার

জন্ম ২৯শে আষাঢ়, ঢাকা। আপাতত নেদারল্যান্ডস প্রবাসিনী। কিন্তু দেশের সাথে নাড়ির যোগাযোগ কাটেনি। পেশায় একাউনটেন্ট। বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের নানান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে আছেন। অবসর সময়ে আবৃত্তি, নাচ ও নাটকের পাশাপাশি লেখালেখি করার চেষ্টা করেন। তাঁর লেখায় নিছক গল্প নেই; রয়েছে সত্যের ওপর দাঁড়ানো এবং জীবন দিয়ে উপলব্ধি করা অনুভূতির কথা। লিখছেন ছোটবেলা থেকেই। প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ “পাহাড় আর নদীর গল্প” (২০১৩) এবং উপন্যাস “একদিন অহনার অভিবাসন” (২০১৪)। ২০১১ সালে ডয়েচে ভেল আয়োজিত “ববস” সেরা ব্লগ নির্বাচন প্রতিযোগিতায় তাঁর নিজস্ব ব্লগ http://ratjagapakhi.blogspot.nl/ মনোনয়ন পেয়েছিল। “ইয়েপ আর ইয়ান্নেকে” ডাচ ভাষা থেকে বাংলায় তাঁর প্রথম অনূদিত বই।

১০১ দোররার আঘাতে কিশোরী এবং গৃহকর্তার নির্যাতনে কিশোরের মৃত্যু

নিউজফীডে বার বার এক কিশোর আর কিশোরীর মুখ ভেসে আসছে। গৃহভৃত্য হিসেবে কৈশোরে প্রাণ দিলো এই বেচারা বালকটি। জীবন কি, পৃথিবী কি জানার আগেই চির বিদায়। মানুষের জীবন এত সস্তা! হবে হয়তো। একশ একটি দোরা’র কারণে মৃত্যু হয়েছে এই বালিকা’র। নিতান্তই বালিকা, আহারে।

আচ্ছা, ভারতীয় উপমহাদেশের পরিবার গুলো যদি তাদের নিজেদের মেয়েদের পাশে দাঁড়াতো তাহলে পারিবারিক নির্যাতন কোন পর্যায়ে থাকতো?

ছেলেরা যেহেতু জানেই, একবার বিয়ে করে নিয়ে এলে কেউ ধরতে আসবে না, বলতে আসবে না, সামাজিক এবং ধার্মিক পদমর্যাদায় তারা তাদের স্ত্রীদের প্রভু, তাহলে পছন্দ না হলে কিংবা ইচ্ছে হলে স্ত্রীকে যে কোনো ধরনের শাসনে বাধা কোথায়? প্রতি বছর কত মেয়ে মারা যায় নির্যাতনের শিকার হয়ে? কত মেয়ে আত্মহত্যা করে?

শিক্ষিত, অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল, ক্ষমতাশীল, সচেতন কোন পরিবারটি তাদের মেয়ের পাশে দাঁড়ায়? টেলিফোন করে কাঁদতে কাঁদতে যখন মেয়ে বলে, বাবা, আমাকে নিয়ে যাও, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে, তাও বাবা কি নিতে আসে? কত হাজার বছর ধরে কত মেয়ে তার বাবাকে, ভাইকে আর্তনাদ জানিয়ে আসছে। সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠা ধরে রাখতে এবং পূন্য লাভের উদ্দেশ্যে “সহমরনে” পাঠিয়ে দেয়া সংস্কৃতি’র মানুষ তো আদতে আমরা, মেয়েরা কি শুধু শাশুড়ি, ননদের হাতেই পুড়েছে, বাবা – ভাইদের হাতে কি পোড়ে নি? মেয়ে’রা কোথায় না বলি’র শিকার, কার কাছে না উটকো ঝামেলা? কে চায় সেধে কাঁধে দায় নিতে?

যে মেয়ে গুলো বিভিন্ন কারণে পারিবারিক ভাবে নির্যাতিত হয়ে হাসপাতাল বা পুলিশ পর্যন্ত যায় তাদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, পরিবার জানতো, জেনেই মরতে ছেড়ে দিয়ে রেখেছিলো। অর্তকিতে ঘটে যাওয়া কোনো দুর্ঘটনা নয় এগুলো। মরে গেলে তখন পুলিশ, মামলা কিন্তু বেঁচে থাকতে মেয়ে’র পাশে নেই। আত্মজা’র কান্না, আত্মজা’র যন্ত্রণা কত সহজেই উপেক্ষা করা যায়। নিজের বাবা মায়েরই যেহেতু মন গলে না, অন্যের মা-বাবা’র কাছ থেকে সহানুভূতি পাওয়ার আশা তো বাতুলতা মাত্র। কি অদ্ভূত সেলুকাস এই পৃথিবী, কি বিচিত্র এর মানুষেরা। রাষ্ট্র নির্লিপ্ত, নির্লিপ্ত পরিবারও, যাবে তো কোথায় যাবে। ঠোঁটে হাসির ক্যামোফ্ল্যাজ ধরে রেখে, কষ্টের দাগ লুকাবে। তারপর একদিন নিউজফীডে চেহারা আসবে ........................

3510 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।