ধর্ষণ আদিতেও ছিলো, এখনো আছে এবং ভবিষতেও থাকবে। এর থেকে সম্পূর্ণ মুক্তির কোনো পথ কোনোকালেই ছিলো না। মানুষের আদিম ও অকৃত্রিম এই তাড়নাকে বধ করার জন্য বা প্রতিহত করার জন্য আইনের শক্ত প্রয়োগ হচ্ছে বটে। তবে, মানুষের মনুষ্যত্ব যতক্ষণ না পুরোপুরি জাগ্রত হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ধর্ষণ চলতেই থাকবে। যেভাবে এখন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রতিদিন ঘটে যাচ্ছে এবং ঘটছে নির্মম, নৃশংসভাবে; যেখানে শিক্ষা, মনুষ্যত্ব কিছুই নাই।
তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল এবং ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ধর্ষণের পরিমাণ অতিমাত্রায় লক্ষ্য করা যায়। এখানে ধর্ষণ হয় ঘরে ঘরে। ঘরে ভাই, চাচা, মামা, খালাতো-চাচাতো ভাই, বাবা, এদের থেকে কোনো মেয়ে কি নিস্তার পায়! উঠতে বসতে, চলতে ফিরতে, যখন তখন নানা উছিলায় মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়া তাদের একটা অভ্যাসের ব্যাপার। শুধু কি নানা ছুতায় গায়ে হাত দেয়, পারলে বিছানা পর্যন্ত নিয়ে প্র্যাগনেন্ট বানিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। এসবের প্রতিবাদ তথাকথিত সভ্য, শিক্ষিত, নাগরিক সমাজে কতটুকু হয়েছে বা হচ্ছে। সবাই মানসম্মানের দোহাই দিয়ে মেয়েটির মুখচাপা দিয়েছে। কিম্বা মেয়েটি ভয়ে মুখ খুলে নি। একাত্তরের অনেক বীরাঙ্গনা আছেন, যারা আজো মুখ খুলেন নি। এমন লজ্জার কোনো মূল্য নেই, যে লজ্জায় একটি দেশ, জাতি, সমাজ এমন কি নিজের জীবনও বিপন্ন হয়। নিজেকে বাঁচার মতো বাঁচিয়ে রাখতে হলে রুখে দাঁড়াতেই হবে। যা উন্নত দেশের মেয়েদের মধ্যে লক্ষ্য করি।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধর্ষণের হার বেশি। কারণ, তাদের মধ্যে শিক্ষা নেই, দীক্ষা নেই, নেই কোনো মনুষ্যত্বের চর্চা। তাই তারা ধর্ষণ শেষে টুকরো টুকরো করে কেটে হলি খেলা করে। যেদেশে বিচারের নামে চলে প্রহসন, সেদেশে এমনটা হবে এটাই স্বাভাবিক। যেখানে সভ্য, নাগরিক সমাজে ধর্ষণকে আইনের আওতায় এনে সমাধান দিচ্ছে না, সেখানে গ্রাম্য, অজ পাড়াগাঁয়ের ধর্ষণ তো খুবই স্বাভাবিক। তারপরেও এইটুকু বলতে পারি, প্রত্যন্ত অঞ্চলের ধর্ষণ যতটা প্রকাশ পায়, নাগরিক সমাজের ধর্ষণের ঘটনা ততটা প্রকাশ পায় না। অনেক পুরুষ আছেন যারা ধর্ষণটাকে মামুলি ব্যাপার মনে করেন। কারণ, তারাও, আড়ালে আবডালে এ কাজ করে আসছেন কিনা! তাই অনেকক্ষেত্রে ধর্ষক আর পুরুষ প্রায়ই সমার্থক হয়ে দাঁড়ায়। একধরণের সভ্য, অসভ্য, শিক্ষিত, অশিক্ষিত পুরুষের মধ্যে ধর্ষণের লালসা বাস করে। কেউ প্রকাশ্যে করে ফেলে, কেউ মনে মনে করে। এই যা পার্থক্য। সেক্ষেত্রে ধর্ষণের সুবিচার আসবে কেমন করে! একমাত্র নারীকেই সোচ্চার হতে হবে, এর প্রতিকারের জন্য।
যুগের পর যুগ ধর্ষণের মতো ক্ষতকে পাথর চাপা দিতে দিতে আজ সমাজে তা সকল মানবিকতার ঊর্ধ্ব উঠে বিস্ফারিত হচ্ছে। এর থেকে প্রতিকার পেতে হলে ঘরে ঘরে প্রতিরোধ গড়ে উঠুক। প্রতিটি মেয়েকে সচেতন করে তোলা হোক, বুঝিয়ে দেওয়া হোক কিভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখা যায়। বর্তমান সময়ে ধর্ষণ যেভাবে আগ্রাসী রূপ নিয়েছে, তার প্রতিকার একটাই, কর্তন করো লিঙ্গ, নতুবা ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড।