লাইলী মজনুর প্রেম কাহিনীতে, বোন লাইলী কে মজনুর সাথে প্রেম করতে দেখে তলোয়ার নিয়ে তেড়ে এসেছিলো ভাই তাবরেজ। তারপর তাদের হাতাহাতির এক পর্যায়ে তাবরেজ মজনুর হাতে খুন হয় এবং মজনু কে পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
এইরকম ঘটনা যত প্রেম কাহিনী আছে সব গুলোতেই আছে। ভারতীয় প্রেম লোক গাঁথা , হির-রাঞ্ঝা, মির্জা-সাহিবা, কিংবা সেক্সপিয়ারের রোমিও-জুলিয়েট, কিংবা বাংলাদেশের মৈমনসিংহ গীতিকার মহুয়া, সব প্রেম কাহিনীতে অনার কিলিং এর একটা ব্যাপার প্রচলিত। মানে প্রেমের জন্য হয় মেরে ফেলার আয়োজন করা হয়, নইলে প্রেমিক প্রেমিকা অন্যের হাতে মরার চাইতে নিজেরাই আত্মহত্যা করে ফেলে। মনে আছে, কেয়ামত থেকে কেয়ামত পর্যন্ত, কিংবা হিন্দীতে কায়ামাত সে কায়ামাত তাক... চলচ্চিত্র?তো সম্প্রতি, শেরপুরে এইরকম একটি ঘটনা ঘটেছে। ভাই তাঁর বোনের প্রেমিক কে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে ছুরি দিয়ে হত্যা করে। এতে সেই ভাই কী প্রতিষ্ঠা করতে চাইলো? নারীর পছন্দ অপছন্দ, সিদ্ধান্ত, কোনো কিছুর আসলে মূল্য নাই এইটাই প্রতিষ্ঠিত হলো। যে প্রয়োজনে খুন করে জেলে যাবো, তবুও ঘরের মা বোন মেয়েকে প্রেম করতে দেয়া যাবে না। এই পৃথিবীতেই এমন নজীর আছে যে, মেয়ে অন্য ছেলের সাথে প্রেম করে সেই জিদে নিজের পিতাই তাঁর কন্যাকে ধর্ষণ করেছে, যুক্তি কী? যুক্তি হচ্ছে, আচ্ছা তোর শরীরের এতই যখন ক্ষিদা আমরাই মিটাই, বাইরে যাওয়ার দরকার কী।
নারীর যে কোনো ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি ভয় পুরুষতন্ত্র প্রিয় মৌলবাদী সমাজের। নারীদের ফুটবল খেলার বিরোধীতা করে মিছিল বের হয় এখানে, নারীকে আটকে ফেললেই দুই তৃতীয়াংশ ইসলাম কায়েম হয়ে যায় তাদের। শুধু দাঁড়ি টুপি পরা মোল্লা না, ইয়ো ইয়ো ড্রেস আপ এর থুতনীতে দাঁড়ি রাখা ডিজুস মোল্লাও রয়েছে এখানে, যারা ফেসবুক চালায় এবং যে কোনো ইস্যুতে নারী বিদ্বেষমূলক বাকোয়াজ পেশ করে।
এই হেফাজতী, মোল্লাতান্ত্রিক জন (বরাহ শাবক) গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কিছু বলা যায় না, বুবু রাগ করে, ম্যাডাম রাগ করে, রাশু আপুও রাগ করে। মৌলবাদের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে আগে বলে নিতে হয় যে কোরআন শরীফ দরদ দিয়ে পড়েছি, তারপর আমি সায়েন্স ফিকশন লিখেছি, আমি ভালো আমাকে মারবেন না, ওরাও ভালো ওদেরো মারবেন না, আমিও ভালো তুমিও ভালো, এলোনা বেলোনা কলা গাছের ঝুপ, সালেকা মালেকা, সালামালাইকুম, মায়ের কোলে ছোট্ট শিশু একদম চুপ।
এই দেশে মেয়েদের জন্য আলাদা টয়লেট নির্মাণ করলে তা ভেঙে দেয়া হয়, মেয়ে প্রেম করলে খুন করে ফেলা হবে সেই মেয়েকে বা মেয়ের প্রেমিক কে স্বাভাবিক। মেয়েদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়াটাই যেখানে প্রথম শর্ত, কিংবা যে কোনো শর্তের অধীনে মেয়েদের চলতে বাধ্য করা হয় যেখানে, সেই দেশ এর নাম এখন বাংলাদেশ।
একবার আমার সামন্তবাদী দাদী, পত্রিকায় পড়লেন, কোনো এক কাঠমোল্লা ফতোয়া দিয়েছে, নারীর ব্যবহৃত শাড়ি দিয়ে বানানো কাঁথা গায়ে দেয়া হারাম। দাদী সেই পেপার কে কিছুক্ষণ ঠুয়া দিলেন, এবং সেই কাঠমোল্লার উদ্দেশ্যে বলতে থাকলেন, গুলামের ঘরের গুলাম, খালি বেইট্টাইনের পিছে লাইগগা থাওছ ক্যা তরা...
আমার আর দাদীর চিন্তা চেতনা আদর্শের অনেক অনেক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এই ডায়লগ টাই দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।
পুরুষতন্ত্র নিপাত যাক।
জয় হোক মানবতার, জয় হোক মেহনতি মানুষের।