ফরিদ আহমেদ

লেখক, অনুবাদক, দেশে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। দীর্ঘ সময় মুক্তমনা ব্লগের মডারেশনের সাথে জড়িত ছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ের অনুবাদ করেছেন। বর্তমানে ক্যানাডা রেভেন্যু এজেন্সিতে কর্মরত অবস্থায় আছেন। টরন্টোতে বসবাস করেন।

নারী দিবসের বিরুদ্ধে যত মত

ডেইলি মেইলের নিয়মিত কলামিস্ট হচ্ছেন সারা ভাইন। বছর দু’য়েক আগে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে একটা কলাম লিখেছিলেন তিনি। সেই কলামের শিরোনাম হচ্ছে, “How the smugness of Women's Day drives me insane”. এই কলামে তিনি লিখেছেন যে তিনি আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে একেবারেই সহ্য করতে পারেন না। যারা এই দিবস নিয়ে বেশি লাফালাফি করে, হই হল্লা করে, তারা যে এটা মূলত ব্যবসায়িক কারণে কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তিগত লাভের উদ্দেশ্যে করে, সেটা বলতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন নি তিনি।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে ঘৃণা করার মূল কারণ হিসাবে সারা বলেছেন, আমি এতো বোকা নই যে বিশ্বাস করবো এরকম একটা অগভীর সংহতি ক্ষণকালের জন্য হলেও সারা বিশ্ব জুড়ে নির্যাতিত নারীদের অবস্থার উন্নতি করতে পারে। দাসশ্রম, পর্দাপ্রথা, ধর্মীয় আইন বা শরিয়া আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সমাজে নারী আটকে আছে খাঁচায় বন্দি পাখির মতো। এদের উন্নতির জন্য সামান্যতমও অবদান নেই আন্তর্জাতিক নারী দিবসের। বড় বড় বুলি বা বক্তৃতার প্রয়োজন নেই এইসব অবহেলিত নারীদের। এর বদলে এদের প্রয়োজন এমন এক বিশ্ব, যে বিশ্ব তত্ত্বে এবং প্রয়োগে, দুইভাবেই তাদের সম্মান প্রদর্শন করবে।

নারী দিবসের দুধের উপর ভেসে ওঠা সর ভক্ষণকারী লোক হচ্ছে লবিয়িস্ট গ্রুপ, ব্যবসায়ী শ্রেণি এবং কিছু সংখ্যক ব্যক্তি, যাদের কায়েমি স্বার্থ জড়িত রয়েছে এই দিবসকে কেন্দ্র করে।

সারা একা নন। তাঁর সাথে সুর মিলিয়ে স্কাউট ম্যাকক্রো-ও টরন্টো অবজার্ভারে লিখেছেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবস আমাকে ব্লাক হিস্ট্রি মান্থ যে সমালোচনার সম্মুখীন হয় সেটাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। শত শত বছর ধরে যে অন্যায্য আচরণ হয়েছে কালোদের উপরে, সেই অপরাধবোধ আমরা ঢাকি এক মাসব্যাপী ব্লাক হিস্ট্রি মান্থ সেলিব্রেট করে। একদল লোক অতীতে নির্যাতিত হয়েছে, অসম্মানিত হয়েছে, শোষিত হয়েছে, প্রতারিত হয়েছে। কাজেই, সেটার জন্য একটা কিছু দরকার আমাদের পঞ্জিকাতে। এই মাস ফুরোলেই যে লাউ সেই কদুই হয়ে যাবে।

স্কাউট আরো বলেন যে, শুধু এটাই নয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে আমার আরো সমস্যা আছে। প্রতি বছর মার্চ মাসের আট তারিখে সব নারীরা একত্রিত হচ্ছে শুধুমাত্র এ কারণেই যে তারা নারী। এটা দিয়ে বোঝায় যে আমাদের যেহেতু দুটো এক্স ক্রোমোজম রয়েছে, কাজেই আমাদের সবার সমস্যাই এক, সবাই একই ধরনের সংগ্রাম করছি। কিন্তু, এটা সত্যি নয়। বিশ্বজুড়ে নারীর সমস্যা এবং সংগ্রাম বহুমাত্রিক। এর সঙ্গে অসংখ্য সামাজিক, জাতিগত, রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক বিষয় জড়িত রয়েছে।

শেষ করি আলিসন পিয়ারসনকে দিয়ে। তিনি নারী দিবস একেবারে উচ্ছেদের পক্ষে। নারীর জন্য যে কোনো ধরনের বিশেষ ব্যবস্থাই অপছন্দের তাঁর। তিনি চমৎকার একটা কথা লিখেছেন নারী দিবসকে নিয়ে। সেটা এরকম:

আমাদের জন্য বিশেষ মর্যাদা দাবী করে, সারাক্ষণ নিজেদের আক্রান্ত প্রমাণ করে, আন্তর্জাতিক নারী দিবস যে বিষয় নিয়ে লড়ছে সেটারই বিরোধিতা করে। নারী পুরুষের চেয়ে উত্তম কিছু না যেমন, তেমনি নিশ্চিতভাবে তার চেয়ে অধমও না। এই বোধটাতেই একমাত্র নারী পুরুষের প্রকৃত সমতার অবস্থান বিদ্যমান রয়েছে।

1508 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।