সমাজ পত্তনের শুরু থেকেই নারী শ্রেণি শাসন ও পুরুষ শাসনে নিষ্পেষিত। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতি স্তরে নারীর ওপর ধনতন্ত্র, দাসতন্ত্র, সামন্ততন্ত্র কখনো কৌশলে কখনো কখনো সরাসরি চাপিয়ে দেয়া হলেও কোনো স্তরে কোনোভাবেই পুরুষের অবস্থানের কোনোরূপ নড়চড় ঘটেনি, আজও নড়চড় ঘটে না। নারীর প্রতি পুরুষ তার আধিপত্যকে ধরে রেখেছে প্রচণ্ড ও প্রবলভাবে। এই আধিপত্যকে ধরে রাখার জন্য তারা প্রণয়ন করেছে নানান ধর্মীয় বিধান, পরিবারতন্ত্র, পিতৃতন্ত্র। পিতৃতান্ত্রিক পরিবারে পিতা বা পুরুষের ইচ্ছার ওপরই নির্ভর করে সেই পরিবারের নারীর সবকিছু। সেখানে নারীর ইচ্ছা অনিচ্ছার কোনোই মূল্য নেই বললেই বোধকরি মানানসই হয়। কারণ প্রতিটি পিতৃতান্ত্রিক পরিবারেই নারীদেরকে গড়ে তোলা হয় একেকজন দম দেয়া পুতুল হিসেবে।
সব যুগে সব সমাজেই পুরুষতন্ত্র তার পছন্দমতো নারীর আদর্শ নির্ধারিত করে রেখেছে; নারীর চলাফেরা, আচার-আচরণ, পোষাক-পরিচ্ছদ, পছন্দ-অপছন্দ এমনকি ভাবনার সীমাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে এবং নারী যাতে সেই সীমা অতিক্রম না করে তার জন্য প্রনয়ণ করেছে তাদের সুবিধামত বিভিন্ন অনুশাসন। হাজার বছর ধরে পুরুষতান্ত্রিক ও পিতৃতান্ত্রিক পরিবার ও সমাজব্যবস্থার উক্ত অনুশাসনগুলোর বাস্তবিক সফল প্রয়োগে প্রায় প্রত্যেকেই এখন পুরুষতন্ত্রকে ধারণ করেন মননে-মগজে। এ থেকে পিছিয়ে নেই নারী, শিশু, আবাল, বৃদ্ধ কেউই। তাই নারী আজও পুরুষতন্ত্রের সংজ্ঞায় বন্দী।
রাষ্ট্রযন্ত্রে দীর্ঘকাল ধরে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, সাবেক স্পীকার ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে ধারাবাহিকভাবে নারীর শক্ত অবস্থানকে আপাতদৃষ্টিতে নারীর অগ্রগতি মনে হলেও সামগ্রীকভাবে নারীর ক্ষমতায়নের ইঙ্গিত দেয় না, নারী মুক্তিরতো নয়ই- যদি পুরুষ ও পুরুষতন্ত্রের সবটুকু চেতনায় নারী শিকল পড়া থাকে, যদি নারীকে আজ্ঞাবহ, অধীনস্থ, দূর্বল মনে করা হয়, যদি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মনস্তত্ত্বে নারীকে রাখা হয় পুতুলরূপে।
বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিক্ষা ও আর্থসামাজিকভাবে এগিয়ে গেলেও নারী বিষয়ে আমাদের মানসিকতার কোনোরূপ অগ্রগতি হয়নি অদ্যাবধি। পুরুষের দৃষ্টিতে নারী আজও অবলা, একখণ্ড মাংসপিণ্ড। এ কারণেই অবলাকে রক্ষার নামে মাংসপিণ্ডকে ভক্ষণ করার মানসিকতাকে কোনো পুরুষই পরিহার করতে পারে না। পুরুষ কখনই চায় না নারী অবলা তকমাটাকে ঝেড়ে ফেলে সবল হয়ে উঠুক, নিজের ইচ্ছায় নিজের পায়ে হাঁটতে শিখুক। বরং তারা নিজেদের পছন্দমতো ছাঁচে ফেলে নারীকে মনমতো গড়ে তুলতে সদা সচেষ্ট। নারীকে অধীনস্থ করে প্রভু বনে যাওয়ার প্রবণতা প্রত্যেক পুরুষের মাঝেই পরিলক্ষিত হয়। কানা, ল্যাংড়া, ধ্বজভঙ্গ কোনো পুরুষই এই প্রভুত্বের দৌড় থেকে পিছিয়ে পড়তে আগ্রহী নয়। বড় পুরুষ, ছোট পুরুষ, মাঝারি পুরুষ এমনকি শিশু পুরুষও নারীর কর্তা বা প্রভু হয়ে ওঠার গৌরব থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে আগ্রহী নয়।
কয়েকদিন যাবৎ Sabbir_Orpon নামক এক স্টুপিডের একটি শর্টফিল্ম বা ভিডিও ভেসে বেড়াচ্ছে ফেসবুকে। এসব সস্তা সেন্টিমেন্টের ভিডিও ফিডিও আমি সাধারণত এড়িয়ে যাই। কিন্তু আমার একজন পছন্দের মানুষ Atiqua Roma'র আমন্ত্রণের কারণে সাব্বির অর্পণ নামক ফাদার ফাকারের ভিডিওটি না দেখে পারি নি।
নিম্নমানের ভিডিওটিতে একজন পুরুষের চিরাচরিত মানসিকতাই ফুটে উঠেছে, একজন নারীর ধুমপান করা নিয়ে এই বরাহ শাবকের দৃষ্টিভঙ্গীকে তুলে ধরা হয়েছে। তার বন্ধুরা প্রকাশ্যে ধুমপান করলেও তাতে তার কোনো আপত্তি নেই- কারণ তারা পুরুষ। মেয়েটা কেনো প্রকাশ্যে ধুমপান করলো তা নিয়েই তার যতো মাথাব্যথা। ধুমপান সবার জন্যই ক্ষতিকর হোক নারী কিংবা পুরুষ। কিন্তু এই বালেশ্বরের বাল হরিদাস পাল বারবার বলছে- 'আপনি সিগারেট খান তাতে আমার আপত্তি নেই, কিন্তু 'মেয়ে' হয়ে পাবলিক প্লেসে সিগারেট খেয়ে পরিবেশ দূষিত করছেন কেনো?' কতবড় আবাল হলে এমনটা ভাবতে পারে! তার দৃষ্টিতে সিগারেটের ধোয়ায় পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে না; পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে একজন নারী ধুমপান করাতে! রামছাগলের বাচ্চায় প্রশ্ন করেছে আমি এখানে পোষাক খুলতে পারবো, আপনি পারবেন? এই উজবুকের জানা নেই উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে পাবলিক প্লেসে পোষাক খোলা, সুনির্দিষ্ট কারণ ব্যতিত খালি গায়ে রাস্তায় বের হওয়া অপরাধ। এই অপরাধে আর্থিক জরিমানা করা হয় আইনগতভাবে। এমনকি আন্ডারওয়্যার ব্যতিত লুঙ্গী পরিধান করে বাসার বাইরে যাওয়ার অপরাধেও আর্থিক জরিমানা করা হয়। অথচ পোষাক খুলতে পারাকেই পুরুষের এক ভয়ংকর রকমের গৌরবের কর্ম হিসেবে উপস্থাপন করেছে সে। শুকরের শিশ্ন ফেটে জন্ম নেয়া গর্দভটায় পুরুষের আরেক মহান কীর্তি প্রকাশ্যে খাড়াইয়া মুততে পারার বিষয়টি ভুলে গিয়েছিলো মেয়েটিকে চ্যালেঞ্জ দেয়ার জন্য। ভুলে যাওয়ার কারণেই মেয়েটিকে কুপোকাত করার জন্য এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেয়ার বিষয়টি অব্যক্ত রয়ে গেছে। অব্যক্ত রাখলেই কী আর অব্যক্ত থাকেরে আবাল- উত্তর যেহেতু জানা রয়েছে? মেয়েরাও খাড়াইয়া মুততে পারে, তবে তোদের মতো যেখানে সেখানে না। মেয়েরা খাড়াইয়া মুততে পারে তোদের মতো বরাহ শাবকের মুখে।