নাঈমাহ তানজিম

ভবিষ্যতে চাইল্ড সাইকোলজি নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক নাঈমাহ তানজিম ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থী। কিছুদিন স্কুলেও শিক্ষকতা করেছেন। লেখালেখি করেন বিবেকবোধের দায় থেকে।

এশা, শায়লারা কেন বারবার নেত্রী হয়

হলের রাজনীতি অনেক বড় রাজনীতি। এইটা বোঝা আপনার-আমার মতন সাধারণ মানুষ, যে হলের ভিতরে নেই, সে বুঝবে না। এমনকি হলের ভিতরের ছেলে-মেয়েরাও পুরোপুরি বুঝে না।

এই রাজনীতি অনেকটা সোশ্যাল-পলিটিকাল সিস্টেম এর মতন। সব স্তরে শোষণ, সব স্তরে দুর্নীতি।

বুঝায়ে বলি। আপনারা দেখলেন সুফিয়া কামাল হলের সভানেত্রী এশাকে জুতার মালা আর কিঞ্চিত চড়থাপ্পর দিয়ে হল থেকে বের করা হলো। কিন্তু সে যে গত কয়েক বছর ধরে কী করে আসছে হলের মেয়েদের সাথে সেইটা কেউ ভিডিও করে রাখে নাই।

সবচেয়ে আগে প্রশ্ন। এশা কোন বর্ষের ছাত্রী? তার ভাইস প্রেসিডেন্ট যদি ৪র্থ বর্ষের হয়, সে কি আরো সিনিয়র? তার হলের সিট কি বৈধ? মাস্টার্স এর ছাত্রীরা কি হলে থাকতে পারে? পারলেও হলের সভাপতি হতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর জানলে সেশন জটের অনেক কিছুই বুঝতে পারবেন। কেনো দিনের পর দিন বিশ্ববিদ্যালয় এর পরীক্ষা পিছায়? পরীক্ষার আগে আগে কেনো পলিটিক্যাল ছেলেরা মারামারি করে পরীক্ষা স্থগিত করে? প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট তো বটেই, হলের পলিটিকাল ছেলে-মেয়েরাও যে সুবিধা ভোগ করে যায় সাধারণ ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে, সেই লোভ ছেড়ে দেওয়া বড় কঠিন গো মানবতার আফা। সুতরাং, ছাত্রজীবন যত লম্বা করা যায় ততই সুবিধা। মাশুল দেয় কে? সাধারণ ছেলে-মেয়েরা। শুধু স্টুডেন্ট ভাড়া দেওয়া ছাড়া বিলম্বিত ছাত্রজীবন এর আর কোনো সুবিধাই তারা পায় না।

কী সুবিধা ভোগ করে তারা? আচ্ছা ধরেন, আপনার মিড পরীক্ষার আগে জুনিয়র কেউ যদি আপনার অ্যাসাইনমেন্টটা করে দেয়? অথবা রেগুলার যদি কেউ আপনার ক্লাসের হোমওয়ার্ক করে দেয়? আপনি তো রাজনৈতিক কাজে ব্যস্ত থাকতেই পারেন, তাই না?? শুধু পরীক্ষার সময় গিয়ে পরীক্ষাটা দিয়ে আসলেন। রেজাল্টও সমস্যা না। ফেল করে আরো বেশিদিন থাকলেই বরং ভালো। আরো বেশিদিন সার্ভিস পাওয়া যাবে।

কী টাইপ সার্ভিস? ধরেন নেত্রী শপিং এ যাবেন, একা যেতে ভালো লাগে না, জুনিয়র কাউকে পেলে ভালো হতো। আবার ধরেন নেত্রীর মাথাব্যথা, কেউ মাথায় তেল দিয়ে দিলে ভালো হতো। এভাবে জামাটা আয়রন করে দেওয়া, রাজনৈতিক কাজে সারাদিন হাঁটাহাঁটি করে টায়ার্ড হয়ে গেলে হাত-পা একটু তেলমালিশ করে দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।

এই নেত্রীরা র‍্যাগ দেয় কীভাবে জানেন? ছাত্রীদের পোল ড্যান্স করতে বলে। গ্রাম থেকে আসা একটা মেয়ে কেবল ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে, হলে ঢুকেই এরকম একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, তার হল জীবন কেমন হয়?

কই যান? লজ্জা পাইলেন? আরে নোংরামি তো কেবল শুরু! নেত্রীরা গায়ে হাত দেয়। হ্যাঁ, মেয়েরাও মেয়েদের হ্যারাস করে, মোলেস্ট করে। গেস্টরুম নামে একটা জঘন্য কালচার আছে মেয়েদের হলগুলাতে। একটু ভিতরে মানুষজনদের জিজ্ঞেস করেন, অনেক কিছু জানতে পারবেন।

এশা দরজা বন্ধ করে শুধুই মারতো? জ্বি না, শুধু মারলে মেয়েগুলা বলতো, আমাকে মারছে। সে শুধু মারতো না, রীতিমতো মোলেস্ট করতো। আসলেই ওরা সব ভাই-বোন। ভাইরা ৭ই মার্চে ভীড়ের সুযোগে 'জয় বাংলা' বলে রাস্তায় মোলেস্ট করে, আর বোনরা রুমে ডেকে দরজা বন্ধ করে মোলেস্ট করে। কী মিল এই ভাই-বোনদের!

জোর করে ছাত্রলীগ এর মিছিলে নিয়ে যাওয়া, জাতির জনক এর মৃত্যুমাস উপলক্ষে গোটা আগস্ট মাসজুড়ে জোর করে সমাবেশে নিয়ে যাওয়া, ইচ্ছা না থাকলেও বড়ভাইদের সাথে কথা বলানো, এইসব চলতেই থাকে। আর যারা ভিকটিম হয়, তারা কাউকে বলে না, তাদের সাথে চলতেই থাকে, তারপর সেও একসময় সিনিয়রদের মতন হয়ে যায়। সেও জুনিয়রদের শোষণ করতে আরম্ভ করে। এইটা একটা গোলকধাঁধার মতন চক্র।

হায় রে চক্র, হায় রে সিস্টেম, তুই কবে ভালো হবি বল তো?? হবি না? কেনো হবি না? কী বললি? কেউ বলে না? কী বলে না? ভিতরের কথা বলে না? তাদের সাথে কী হয়, কী হইছে, কী হয়ে আসতেছে, কিচ্ছু বলে না? হ্যাঁ? আর কী বললি? সত্য বলে না? সত্য বলে না! সত্যিটাই বলে না? ভয় পায়? সত্যি বলতে ভয় পায়? ভয়ে মিথ্যা বলে কিন্তু সত্যি বলতে ভয় পায়?

তাহলে আর তোর কী দোষ রে সিস্টেম? তোরে কেনো গালি দেই!? তুই এমনই থাক। এইসব ভীতু-মিথ্যাবাদীরা হুমকী পাক, গালি খাক, মাইর খাক, মোলেস্ট হোক। এভাবেই চলুক।

এশারাই থাকুক হলে, শায়লারাই নেত্রী হোক। আর তোমরা পড়াশোনা করে টিকে থাকা মেয়েগুলা হল ছেড়ে, ভার্সিটি ছেড়ে, পড়াশোনা ছেড়ে, দুনিয়া ছেড়ে চলে যাও যদি সত্যি বলতে না পারো।

1826 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।