ডিয়ার পিপিপি, আশা করি ভালো আছেন। খাড়ান, ‘পিপিপি’র এলাবোরেশানটা আগে কইরা লই। পিপিপি মানে হইতেছে প্র্যাগমাটিক পুরুষতান্ত্রিক পুরুষ। যিনি নিজের পুরুষতান্ত্রিক হওয়ার যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেন, তিনিই পিপিপি। ভাই, আপনার পুরা লেখাটা পড়লাম। আমার স্তনের উপর আমার প্রাক্তন প্রেমিক কবি ব্রাত্য রাইসুর সিগনেচারের ট্যাটু নিয়া আপনাদের মাথা ব্যাথা, সেই নিয়া আপনাদের প্রেম, তা থিকা আমার চরিত্র বিশ্লেষন, তা থিকা সমাজের সামগ্রিক মনঃস্তত্ব বিচার ইত্যাদিও দেখলাম। আপনি বলছেন, আমি যেহেতু স্তন দেখাইয়া বেড়াই, তাই লেখক মইনুল আহসান সাবেরেরও ‘রাইট’ আছে আমারে যৌন প্রস্তাব দেওয়ার।
আপনি বলছেন, “তুমি তোমার সৌন্দর্য দেখাবা, আমি তোমার প্রশংসা করবো এটাই তো ভদ্রতা! সেই ভদ্রতায় যখন তুমি প্রশ্রয় দিবা, আরেকটু প্রশংসা পাবার জন্য উস্কে দিবা সেই প্রশংসা ধীরে ধীরে প্রেম নিবেদন এবং তারপর বিছানায় নেয়ার বাসনায় পরিণত হইতেই পারে। এই স্বাভাবিক নিয়মকে যদি কেউ বাঙ্গালি মুসলমানের মন নিয়া লুচ্চামি বলে তাকে তো বলতেই হয় যে, সেকুলারের মন নিয়া গতর দেখাইলা, সেকুলারের মন নিয়া প্রশংসা গ্রহণ করলা, সেকুলারের মন নিয়া কারো কারো সাথে প্রেম করলা, কিন্তু যেই অপছন্দের কেউ তোমাকে বেডে নিতে চাইলো অমনি তাকে ধার্মিকের মন নিয়া সমালোচনা করা শুরু করলা- এইটা কেমন বিচার!”
আমি বলবো, এইটা খুবই ন্যায় বিচার। বিচার মাত্রই নানীর তরকারীর মতো জায়গায় জায়গায় ঝাল। প্রগতিশীলের মন নিয়া পোশাক পইরা ধর্ষণের জন্য রক্ষণশীলের মন নিয়া বিচার করা বিচারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে। কারণ পোশাক পরা মানুষের ব্যাক্তিগত ও সামাজিক অধিকার, কিন্তু ধর্ষণ কোনো অধিকারের মধ্যে পড়ে না, বরং ধর্ষণ এক প্রকার অপরাধ। আপনার কথা শুইনা মনে হইতেছে আপনি ভিক্টিম ব্লেইমিং এবং স্লাট শেইমিং এর পক্ষের লোক। আপনি ধর্ষণের জন্য ধর্ষিতার কাপড়রে দায়ী করেন। যেহেতু আমি স্তন দেখাইয়া বেড়াই, তাই আমার স্তনে আপনার হাত দেওয়া মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে, হিহি!
হ্যাঁ, আমি স্তন দেখাইয়াই বেড়াই। শুধু স্তন না, স্তনের আশেপাশের বাকি মাংসমণ্ডলীও আমি দেখাইয়া বেড়াই। তাতে আপনার আমার স্তনে হাত দেওয়ার অধিকার জন্মায় না। আমার স্তন আপনার বাপের তালুক না। আমার স্তন শত্রু সম্পত্তির অংশ না। আমার স্তনরে আমি ইস্ট পাকিস্তানে আপনার জিম্মায় রাইখা ভারত চইলা যাইতে বাধ্য হই নাই। আমার স্তন প্যাকেট বিহীন লজেন্স না এবং আপনি শান বাঁধা এই আঙ্গিনাতে জাল বুইনা ফরাশ পাইতা বইসা থাকা মূর্খ মাছি না যে আমারে দেখার সাথে সাথে আপনার আমার উপর লাফাইয়া পড়তে হবে।
ব্রাত্য রাইসু আমার প্রাক্তন প্রেমিক। মইনুল আহসান সাবের আমার প্রেমিক না। তিনি এমনকি আমার বন্ধুও না। তিনি আমার পরিচিত ব্যক্তি। তার সাথে আমি এক টেবিলে বইসা মদ খাই। এবং সেই মদের আসরে আমি তার দিকে তাকাইয়া মধুর হাসি দেই না, উনারে আমার হাত ধরতে দেই না, কোনো প্রশ্রয়ের ইঙ্গিতও দেই না। এখন উনি যেহেতু লেখক, এবং লেখক মাত্রই কল্পনানির্ভর প্রাণী, তাই উনি যদি আমার নিরবতারে ‘মৌনতার’ সম্মতি কল্পনা কইরা ধইরা নেন আমি উনার ব্যাপারে বা উনার সাথে শোওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী, তাইলে আমি উনারে এবং আপনারে বলবো, ভাই থামেন। আপনাদের আর কল্পনা করার দরকার নাই। বাংলাদেশের পাঠক আপনাদের কল্পনার এত এত এত নমুনা দেখছেন। আপনাদের কল্পনা যদি স্বল্পবসনা একজনরে বিছানায় নিয়া যাওয়া পর্যন্ত হয়, তাইলে এই বেলা কল্পনা কইরা বই লেখা বন্ধ কইরা পরিবেশ দূষণ বন্ধ করেন। একেকটা বই ছাপাইতে কয়েকশ’ গাছ কাটতে হয়, আর সাবের ভাই যেইভাবে বইয়ের ‘মাস-প্রডাকশান’ দেন, তাতে উনার একেকটা বইয়ের জন্য ভাওয়ালের গড়ের একাংশ গাছ নাই হইয়া যাওয়া কোনো অসম্ভব ব্যাপার না। তাই আপনার অদরকারী কল্পনার অদরকারী বইয়ের জন্য দরকারী গাছেদের বিলুপ্ত হইয়া যাওয়া কাজের কোনো কথা না।
আপনি বলছেন, “সেই (লেখক) সমাজে মদ চলে, মাগীবাজী চলে, পরকীয়া চলে, গাঁজাও চলে। এসব না চললে তাদের অনেকের সৃজনশীলতা বন্ধ হয়ে যায়, তারা লেখতে পারে না। অনেকে তো বলেই থাকেন, নারীর কাছ থেকে যে কখনো আঘাত পায়নি সে কবি হতে পারে না।”
খাড়ান ভাই, হাইসা লই। লেখকের এই সংজ্ঞা কি আপনার লেখা? বাংলাদেশে কাউয়া এবং বিউটি পার্লারের মতো প্রতিদিন একজন কইরা লেখক এবং সেই লেখকের প্রতিদিন একটা কইরা বই বাইর হওয়ার পিছনের রহস্য বুঝতে পারলাম এতদিনে। ভাই শোনেন, লেখক হইতে গেলে ভাই মদ বা গাঞ্জা খাওয়া, মাগীবাজী করা, এইসবের কিছুই করতে হয় না। এইটা বাংলাদেশী লেখকরা ঠিক কইরা নিছেন হয়তো। যেহেতু বাংলাদেশ একটা সেক্সুয়ালি ডিপ্রাইভ্ড্ রাষ্ট্র, তাই এইসব চালবাজি কথা লেখক এবং বুদ্ধিজীবিদের একটা পলায়নের রাস্তা মাত্র। যেই দেশে এমনকি একজন ছেলে নিজের খুশিমতো চুলও লম্বা রাখতে পারেন না এবং সামান্য চুল লম্বা রাখার জন্য উনারে চারুকলা, ফিল্ম এ্যান্ড মিডিয়া এইসবের নাটক করতে হয়, সেই দেশে একজন লেখকরেও হয়তো নিজের খুশীমত চলতে হইলে বা বহুগামিতা প্র্যাকটিস করতে হইলে ‘লেখকরা এমন একটু হয়েই থাকেন’ মার্কা এ্যাপলজিস্ট কথাবার্তা চালু করতেই হয়।
নিজের খুশীমতো চলা অন্যায় না। স্বাধীনতা চর্চা করা অন্যায় না। কিন্তু নিজে স্বাধীনমতো চলতে গিয়া অন্যের স্বাধীনতা খর্ব করা অন্যায়। আমি স্বল্প কাপড় পরলেই বা লেখকদের সাথে আমার বন্ধুত্ব থাকলেই বা লেখকদের সাথে এক টেবিলে বইসা মদ খাইলেই এবং আমি নিজে লেখক হইলেই এবং অন্য লেখকের সিগনেচার নিজের স্তনের উপর ট্যাটু করলেই আপনি আরেকজন লেখক হিসাবে আমারে যৌন প্রস্তাব দেওয়ার অধিকার পান না। যৌন প্রস্তাব একজন আরেকজনরে অবশ্যই দিতে পারেন, কিন্তু সেই প্রস্তাব দেওয়ার আগে আপনার খেয়াল রাখা জরুরী, অপর পক্ষ সেই প্রস্তাব শুনতে আগ্রহী কীনা। আপনারা যদি কারে যৌন প্রস্তাব দেওয়া যাবে এই নিয়া কনফিউশানে ভুগেন, তাইলে এই বিষয়ে আমার ছোট শিশু কিশোরদের উদ্দেশ্যে ‘যৌন প্রস্তাব ১০১’ নামের একটা লেখা আছে, ঐটা পইড়া দেখতে পারেন।
লাস্টলি, অপরাধরে অপরাধ হিসাবে দেখতে শিখেন। সাবের ভাই নিজের স্ত্রী রাইখা কতজনের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্মতিতে শুইছেন, তা আমার আগ্রহের বিষয় না, আমার অন্যের ব্যক্তিগত জীবনের ভিতরে ঢুকার নোংরা আগ্রহও নাই, কিন্তু উনি যদি একজনের স্তন দেখাইয়া বেড়ানোর ছবিতে উত্তেজিত হইয়া তার অনুমতির অপেক্ষা না কইরা স্তনে হাত দিতে চান, তাইলে তা অপরাধ হয়, এবং আমি সেই অপরাধরে লেখকসুলভ ছাড় দিয়া আমার প্রগতিশীলতার চর্চা করতে রাজি না। এবং সেই অপরাধরে ঢাকার পিছনে আপনারা যারা আমার একটিমাত্র স্তনের দিকে আঙ্গুল তুইলা আমারে বেশ্যা বানানোর প্রকল্পে নামছেন, তাদেররেও আমি সমানভাবে অপরাধী হিসাবে সাব্যস্ত করি। আপনারা ধর্ষকের সমান অপরাধী না হইলেও আপনাদের অপরাধ কম না, কারণ আপনারা ধর্ষকের সহযোগী সাইড-কিক ‘হাফ-ধর্ষক’।
তাই ভিক্টিম ব্লেইমিং এবং স্লাট শেইমিং-রে না বলতে শিখেন। নাইলে কেউ যখন আপনার তিন বছরের শিশু কন্যারে ধর্ষণ কইরা যাবেন, তখন সেই কন্যা শিশুর না গজানো স্তনের দিকে তাকাইয়া আপনি কার উপর দোষ চাপাবেন তা ভাইবা না পাইয়া ডুব দেইখা ডুইবা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হইবেন।
সেইটা আমাদের লেখক সমাজ এবং ফিল্মমেকার সমাজের জন্য অত্যন্ত দুঃখের একটা দিন হবে।
বিনীত
নাদিয়া ‘আরেক স্তন দর্শকের অভাবে কান্দে’ ইসলাম।