হে নারী, জ্বলে ওঠো অাপন শক্তিতে, পুরুষের শক্তিতে নয়। স্বপ্ন দেখো নিজের মতো করে, পুরুষের ইচ্ছেমতো নয়। পোশাক, খাবার, পেশা, শখ এ সবকিছুই বেছে নাও নিজের মতো করে, পুরুষের মতো করে নয়।
চড়ুই পাখি হলে দালানে থাকতে পারবে, কিন্তু বাবুই পাখির মতো স্বাধীনতা পাবে না। গৃহপালিত গরুর মতো অাদর-যত্ন, মুখে লাগাম, পিঠে চাবুক এবং প্রয়োজনে কোরবানি; এমন সম্মানজনক (?) জীবন কি চাও তুমি নারী?
দিনের বেলা উনুনে, রাতের বেলা খেদমতে, এতেই কি তোমার মর্যাদা নিহিত? তোমাকে কুরেকুরে খাবে তালাকের ভয়, দৃষ্টির ভয়, লোলুপীর ভয়...... এ-ই ই কি চেয়েছিলে তুমি?
তুমি পুরুষের কাছে চাইছো অধিকার?
বড্ড হাসালে অামাকে, বড্ড অবাক হলাম অামি!
ধার্মিক তো সবসময়ই ধার্ষিক, কারণ সাহিত্যে পুরুষের নাম রয়েছে 'স্বামী' তথা মালিক। অাবার ওই যে সেই নাস্তিক, যে মহান বিপ্লবী নাস্তিক........ সে-ও নাকি তোমাকে সম্মান দিতে শিখেছে ঠিক ধার্মিকের মতো! তোমার বুক, তোমার চিবুক, তোমার গাল, তোমার হিপ সবই নাকি তার উত্তরাধিকারের সম্পদ। পুরুষ নাকি তোমাকে অনেক স্বাধীনতা দিয়ে ফেলেছে! তোমাকে পরপুরুষের সামনে পর্দা করতে বাধ্য করে না, তোমাকে ইন্টারনেট চালাতে বাঁধা দেয় না, তোমাকে চাকরি করতে নিষেধ করে না!
তুমি গল্প করছো পাশের ফ্ল্যাটের 'ভাবিদের' সাথে; কি মহান তোমার সাহেব!
অামিন জুয়েলার্সে মাসে মাসে গিয়ে তোমাকে অলংকার কিনে দেয়, স্টার জলসার ভাবিদের মতো ড্রেস কিনে দেয়, কেএফসিতে নিয়ে প্রায়ই খাওয়ায়। হে নারী, অার কি চাও জীবনে? একটি গৃহপালিত গরু, কিংবা ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি, কিংবা অাইপ্যাডের মতো গুরুত্বপূর্ণ তুমি!
মাঝে মধ্যে একটু না হয় মারপিট হলো-ই! কিন্তু কিছু মারপিট, রান্নাবাড়া, হাত-পা টিপে দেয়া, সংসার সামলান, শ্বশুর-শাশুড়ি-দেবর-ননদকে খুশি রাখার বিনিময়ে যদি খাদ্য, বাসস্থান, স্বর্ণালঙ্কার, জি-বাংলা ড্রেস কপালে জোটে তাহলে তা মন্দ কি?
অাসলেই কি নারী, তুমি এমন?
অাসলেই কি দেহের বিনিময়ে, বেত্রাঘাতের বিনিময়ে, খাদ্যের বিনিময়ে তুমি এখনো নিজেকে বিক্রি করতে রাজি? এখনো কি তোমার কানে পৌঁছে নি রোকেয়া, সুফিয়া, তসলিমার মুক্তির অাহবান? এখনো কি সময় হয় নি তোমার জেগে ওঠার? পুরুষ কেনো তোমাকে জাগতে বলবে? তুমি কি নিজে জাগতে পার না? তোমাকে জাগাতে অার কত তসলিমার জন্ম নিতে হবে?
এক তসলিমা তো ঝাঁকুনি দিয়েছে পুরুষতান্ত্রিকতার মূল পিলারে। এক তসলিমার ভয়ে হাঁটুকম্পন শুরু হয়েছে তথাকথিত সিংহপুরুষদের! রোকেয়া, সুফিয়া, তসলিমা যা করেছেন তা যথেষ্ট, এবার তোমার করার পালা।
এক পুরুষ তোমাকে পেটায়, বাকি পুরুষেরা তোমাকে সবক দেয়। তুমি অাবারো ভর্তি হয়ে যাও পুরুষের পাঠশালায়, তোমাকে শেখানো হয় 'রুহ অাফজা' সবক। এখন পরিবেশ অনুকূল নহে, ইহা ইহুদির ষড়যন্ত্র, দুশমনের চাল...... তুমি পুরুষের কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থী হয়ে যাও এরপর! অাবার অাঘাত, অাবার ক্ষত হয় তোমার দেহ, কিন্তু পরামর্শের জন্য এগিয়ে অাসে পুরুষ, কিংবা সেই মেদভূঁড়িওয়ালা 'স্টার জলসা ভাবি!' তোমাকে প্রতিবেশীরা ভাবি ডাকে, তুমিও প্রতিবেশী বউকে ভাবি ডাকো, কারণ ভাই সবজায়গায় মুখ্য, অার তুমি গৌণ।
তসলিমার জাগরণ অামাকে অনুপ্রাণিত করেছে, অথচ অামি সেই দলের সদস্য যাদেরকে পুরুষ বলা হয়। অামি তোমাকে সম্মান দিতে শিখেছি, কিন্তু তুমি কি নিজেকে মূল্যায়ন করতে শিখেছো হে নারী? ঘুরেফিরে কি সেই পুরুষতান্ত্রিকতার ফাঁদেই পা দিচ্ছো না তুমি?কি পাও তুমি? ও বুঝেছি...... খাবার, পোশাক, বাসস্থান, পিটুনি সবি তো জোটে তোমার, তাই না? যখনি ঘুরে দাঁড়াতে চাও তখনি তুমি দেখতে পাও ভিন্ন চেহারার কিছু পুরুষ, যারা এতদিন সাধু ছিলো, কিন্তু এখন তারা উলঙ্গ!
যতবার তুমি জেগে উঠতে চাও ততবার তোমাকে পেছন থেকে টেনে ধরে সাধুবাবারা, তুমিও দেখতে পাও সাধুদের নগ্নবদন।
সাধু এবং তার সমগোত্রীয় প্রাণীটি যে একই ঘাটের পুরুষ, একই গোয়ালের পশু। বাঁধ ভেঙে ফেলার কোনো বিকল্প নেই, ভাঙলে সামান্য শৃঙ্খল জড়িয়ে লাভ নেই। তসলিমা নাসরিন যদি তোমাদের জাগাতে না পারে তাহলে শতবছরেও অার জাগতে পারবে না হে নারী।
তসলিমা শতবছরে একটাই হয়, রোকেয়া শতবছরে একটাই হয়। তোমার ভীরুতা, শঠতা, নিচুতা কিংবা নিরবতা অারেক নারীর জীবনে বয়ে অানবে বিপর্যয়, অার সেজন্য কি তুমি দায়ী নও? তোমার শরীরে অাজ যে খামচি বসিয়েছে সে তো কাল অারেক নারীর দেহে খামচি বসাবে। তোমার বুকে যে অাজ হাত দিয়েছে সে তো কাল অারেক নারীর বুকে হাত দেবে। তোমাকে অাজ যে লাথি মেরেছে সে তো কাল অারেক নারীকে লাথি মারবে। অার সাধুবাবারা চিরকাল সবক বিতরণ করবে, যেমন অাজ তোমাকে সবক বিতরণ করছে।
হে প্রিয় পাঠক, অামাকে যতটা নারীবিদ্বেষ শেখানো হয়েছে তুমি ততটা শেখো নি। অাজ একজন মুফতি হিসেবে অামি যদি নারীর প্রতি তোমার চেয়ে বেশি মানবতাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করি তাহলে 'লজ্জা কি তুমি পাবে না?'