শারমিন শামস্

সমাজকর্মী শারমিন একজন ফিল্মমেকার ও সাংবাদিক।

রক্তপাতের বাড়তি ট্যাক্স দিয়ে দ্যাশের উন্নয়ন হবে!

আমার আম্মাদের যুগে পিরিয়ড হইলে মেয়েরা পুরানা কাপড় ব্যবহার করতেন। পুরানা কাপড় ব্যবহারের নিয়ম ছিলো এই রকম- ইউজ কইরা ধুইয়া পরে আরেকবার ইউজ করা হইতো। এই ত্যানা ধুয়া নিয়া বিরাট হুজ্জত করা লাগতো। লোকচক্ষুর আড়ালে, বাড়ির সকল ব্যাডাদের লুকায়া ব্যলকনির কোনাকাঞ্চিতে এই কাপড় ম্যালা হইতো। এরে কওয়া হইতো 'শরীর খারাপের ত্যানা'।

পরে আমার বড় বোনদের যুগে আইলো তুলা। ফার্মেসি থিকে মোটা তুলা কিনে আইনা কাইটা পিস কইরা তাই প্যাডের মত পরতেন তারা।

আমাদের কপাল ভালা। আমরা প্যাডের যুগেই শুধু জন্মাইসি, তা না। আমরা অপেক্ষাকৃত সচ্ছল। তাই পিরিয়ড হইলে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা দিয়া প্যাড কিনি। প্যাড কিনতে পারি বইলা আমার ত্যানা ধুইয়া মেলতে হয় না। তুলা কিনা কাটতে হয় না। ত্যানা কি তুলার চেয়ে স্বাস্থ্যকর এই প্যাড।

আমি কিংবা আপনি প্যাড কিনি, প্যাডের বাইরে আমরা আর কিছু চিন্তা করতে পারিনা। কিন্তু গ্রামে বা শহরে স্বল্প আয়ের কোনো পরিবারে একটা মেয়ের জন্য প্রতিমাসে ১৫০ টাকা প্যাড বাবদ খরচ করা কঠিন। বেশ কঠিন। তাহলে যে বাড়িতে একাধিক মেয়ে আছে, তাদের জন্য কতো কঠিন?

তাইলে বিষয়টা কি দাঁড়ায়?

বিষয়টা দাঁড়ায় এই যে, আজকে আমি বা আপনি প্যাডের যুগে প্রবেশ কইরা অভ্যস্ত হয়া গেলেও অস্বচ্ছল পরিবারের মেয়েরা এখনো সেইখানে প্রবেশ করতে পারেন নাই। তারা আজো সেই ত্যানা আর তুলা যুগে আছেন।

বাজেটে স্যানিটারি প্যাডের উপ্রে ৪৫% সম্পূরক শুল্ক বসায়ে দাম বাড়ানো হইসে। ফলে যে মেয়ে কষ্ট মষ্ট কইরা প্রতিমাসে প্যাড কিনতো, সামনের মাসে সেটা সে কিনবে কিনা সেইটা নিয়া ভাব্বে। যে মেয়ে ত্যানা ফালায়া দিয়া 'এবার থেকে প্যাড কিনবো' বলে ভাবছিলো, সে আবার ওই চিন্তা মাথা থিকা ঝাড়া দিয়া ফালায়া পুরান ত্যানা খুঁজবে। বলা বাহুল্য, জরায়ু ক্যান্সারসহ বহুবিধ রোগের অন্যতম কারণ এই অস্বাস্থ্যকর ত্যানা।

সরকার কারে কোন সুবিধা দিবে আর কারে দিবে না, সেইটা সরকারের ইচ্ছা। এখন সরকারের যদি মনে হয় প্যাড একটা বিলাসদ্রব্য, সেইটা তিনারা মনে করতেই পারেন। হইতেও পারে!! হয়ত ত্যানা পরতে পারাটাই এই দেশে বিরাট ভাগ্যের ব্যাপার। সেইখানে প্যাড পরতেসেন, তাও আবার পাছায়! মানে আপনি পাছায় দেবার জন্য ট্যাকা দিয়া জিনিস কিনেন!! মানে অবশ্যই আপ্নে একজন বিলাসী, বিলাসকাতর। অতএব আপ্নারে বাড়তি টাকা দিতে হবে। মাইয়া মানুষের প্রতিমাসে রক্তপাত পিছু যে বাড়তি টাকা আদায় হবে, তাই দিয়া সরকার দ্যাশের উন্নয়ন করবে। হিসাব পরিস্কার।

অতএব বেশি দামে মূল্যবান প্যাড কিনেন। আর যদি না পারেন, ত্যানা বান্ধেন। ওই অপবিত্র অসভ্য রক্ত একডা কিসু দিয়া আটকাইলেই হয়!

1194 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।