শারমিন শামস্

সমাজকর্মী শারমিন একজন ফিল্মমেকার ও সাংবাদিক।

আমার মি টু কাহিনী

বিতং করে আমার মি টু কাহিনী লিখতে বসলাম। আমার দীর্ঘ জীবনে যত কাহিনী, সব লিখলে জুকারবার্গ পর্যন্ত আমারে ফেসবুক ছাড়া করতে পারে মহাকাব্য ফেদে বসার অপরাধে। তাই একেবারে গোড়া থেকে শুরু করে যে কয়টা মনে পড়ে সিরিয়ালি লিখতেসি। আমি মুক্ত মানুষ। পুরুষ আমার গা হাতাইলে বা ধর্ষণ করলেই আমার জীবন শেষ হয়ে যায় না। সমস্যা হইলো, প্রবল মানসিক চাপ সহ্য করতে হয়। এটা একটা চ্যালেঞ্জ।

কাহিনী -১ 

পড়ি ক্লাস ফাইভে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিত বিভাগের এক অনার্স পড়ুয়া পুরুষ আমাকে অংক করাতে আসে। আমি শুকনা পটকা কালোকুলো রুক্ষ চুলো একটা বাচ্চা। খাটের তলায় থাকে পুতুলের ঘরবাড়ি। স্যার চলে যাওয়া মাত্র সেই খেলনা নিয়ে খাটের তলে ঢুকে যাই। নারীর শরীর কি যৌনতা নিয়া কোনো ধারণাই তৈরি হয় নাই মনে। 

তো একদিন টের পাইলাম, স্যার টেবিলের তলা দিয়া আমার স্কার্টের দিকে হাত বাড়াইছেন। যখন বুঝলাম তিনি স্কার্টের তলা দিয়া আমার উরু স্পর্শ করতে চাইতেসেন, তখন বেজায় অবাক হয়ে গেলাম। কিন্তু মানুষের মজ্জাগত সিক্সথ সেন্স আমাকে জানান দিয়ে গেলো, ঘটনা যা ঘটতেসে, তা মোটেই ভাল না, আর আমার সাবধান হওয়া উচিত। 

আমি সাবধান হইলাম। আম্মা ছিলো তখন হাসপাতালে। বোনদের বলার সাহস পাইলাম না। কারন, দুনিয়াটা ছিলো তেমনই, মনে হইতে লাগলো আমারই দোষ। তাই আমি বাড়িতে আম্মাকে কাজে সাহায্য করতো যে মেয়েটা, মলিনা, ওকেই বললাম ব্যাপারটা। মলিনা গ্রামের মেয়ে। বুদ্ধিমতি। সে ভয়ানক তেজের সাথে আমাকে জানালো এবার থেকে স্যার আসলে সে আমার পাশে পড়ার ঘরে বসে থাকবে। ফলাফল, স্যার কয়েকদিন পর জানালেন তিনি অসুস্থ, আর আসবেন না পড়াতে।

এখন যত স্মুদলি লিখে দিলাম, ঘটনা তত স্মুদ না। আমার শিশুমনের উপর দিয়া ভয়ানক ঝড় গেলো পনেরো বিশ দিন। স্যার চলে গেলে আমি শুধু মুখ হাত ধুইতাম। মনে হইতো আমার শরীরটায় অনেক নোংরা লেগে গেছে।

আমার জীবনে পুরুষের নোংরামির প্রথম ইতিহাস শুনলেন। আজ এই পর্যন্তই, এবার নিজের নিজের কাজে ফিরে যান। টা টা! 


চলমান….

18191 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।