নারীবাদ আসলে কি? নারীবাদ কি আলো ঝলমলে টিভির টকশোতে লিপস্টিক, গয়নাগাটি, বাহারি চুড়ির ঝংকার-সর্বস্বতার নাম? নারীবাদ কি শরীর দেখিয়ে পুরুষের কাঁধে ঝুলে পড়ার মধ্যে জীবনের সফলতা খুঁজে পাওয়ার নাম? নারীবাদ কি এ্যাপের সাহায্যে চামড়া সাদা বানিয়ে ফটো আপলোড করার নাম? নারীবাদ কি “আমারে দেখিয়া পুরুষকুল তাহাদের রসপাত করিয়া ফেলে” এ ধরনের সস্তা কথার নাম? নারীবাদ কি “আমি শরীর দেখাইবো, কিন্তু তুমি তাকাইতে পারিবে না” এ জাতীয় মামাবাড়ির আবদারের নাম?
ইসলামি লেখক কবিতা সুলতানার মতো “ধন্য আমি নারী” কিংবা “ধন্য আমার পিরিয়ড” জাতীয় স্টেটাস দেয়ায় কি নারীবাদিতার কোনো কেল্লা বা তার ফতে হয়?
সে যুগের বেগম রোকেয়ারা সাখাওয়াত হোসেন হয়েছিলেন না বুঝে, কিন্তু এ যুগের প্রায় সব রোকেয়াদের নামের শেষেও কি সাখাওয়াতদের সদর্প উপস্থিতি নেই? অশিক্ষিত, অসহায় রমণীকুল না হয় দেহের বিনিময়ে খাদ্যের আশায় নিজের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র বিকিয়ে দেয় পুরুষের কাছে; কিন্তু প্রিয়াংকা চোপড়াগণও কেন ‘প্রিয়াংকা চোপড়া জোনাস’ হয়ে যায়? আপনারা যখন নারী জাগরণের প্রতীক হিসেবে প্রিয়াংকা চোপড়া জোনাস, সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বা মেলানিয়া ট্রাম্পকে দেখান তখন আমি আপন মনে গেয়ে উঠি “হা হা হা পায় যে হাসি, ভগবান পরবে ফাঁসি, সর্বনাশী শিখায় এ হীন তথ্য কে রে!”
আপনি যদি মেরুদন্ডী হোন তবে শিরদাঁড়া সোজা করে পথ চলুন। পুরুষের কাছে নেতিয়ে পড়ার নাম অধঃপতন। একবার অধঃপতিত হলে চিরকাল পতিত হয়েই থাকতে হবে। পুরুষ যেকোনো প্রকারে আপনার অধোগতি করে আপনার নাম দেবে “পতিতা!” মনে রাখবেন প্রত্যেক পতিব্রতাই হচ্ছে পুরুষের পতিতা (অর্থাৎ পুরুষ মুখে প্রশংসা করলেও মনে মনে পতিব্রতাকে পতিতা বলেই গালি দেয়!) তাই পতিব্রতা, গৃহলক্ষ্মী, সোহাগিনী, ন্যাকা বেগম না হয়ে স্বমেরুদন্ডী মানুষ হোন। কষে লাথি মারুন পুরুষতান্ত্রিকতার অন্ডকোষে!
আমাদের সমাজের নারী তিন প্রকার - (১) স্বমেরুদন্ডী (২) অমেরুদন্ডী (৩) স্বামেরুদন্ডী। প্রথম দুটি আশা করি বুঝেছেন, কিন্তু শেষোক্তটি? মনে হয় বোঝেননি! বরকে স্বামী বানিয়ে বরের টাকায় যারা ফুটানি দেখায় তাদের আমি নাম দিয়েছি ‘স্বামেরুদন্ডী।’
নিজের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখুন। নাস্তিক অাস্তিক অধিকাংশ নারীই রিলেশন বা বিয়ের পর পুরুষের তাবেদার হয়ে যায়, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। বহু নারীবাদী দেখেছি, যাদের নারীবাদিতার বেলুন বরপ্রাপ্তির পর ফুটো হয়ে যায়! তাদের দিবসের নারীবাদিতার প্যারাসুট নিশীথে আলগা হয়ে যায়!
(সবার কথা বলছি না, মেরুদণ্ডী মানুষ এখনও আছে।) নারীবাদ কারো কারো কাছে রোজগার এবং মানপ্রাপ্তির উপায় ছাড়া কিছু নয়। কড়া লিপস্টিক, গাঢ় মেকাপের মধ্যে নারীবাদ নেই; ব্যক্তিত্বের স্বাতন্ত্র্যই নারীবাদীর প্রকৃত বৈশিষ্ট্য। পোশাক, সাজগোজ হচ্ছে ব্যক্তির নিজস্ব অভিরুচি যেখানে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারোরই নেই। পোশাকের বেলায়, সাজের বেলায় একজন নারী যতটা স্বতন্ত্র হবেন মননেও তার ততটাই বা তারচে বেশি স্বাধীনচেতা হওয়া উচিত। ময়ূরী বা শাবানা না হয়ে তসলিমা নাসরিন বা কালিন্দা গ্রাবার হওয়া জরুরি।
পুরুষ আপনাকে দেখলো কি দেখলো না, কিছু মনে করলো কি করলো না, কিছু বলবে কি বলবে না যখন এসব ভাবনার উর্দ্ধে উঠতে পারবেন তখনই আপনি স্বমেরুদন্ডী। সিগারেট খেতে মন চায়, খান। যে কোনো ধরনের পোশাক পরতে মন চায়, পরুন। নাচতে মন চায়, নাচুন; নিজের মতো করেই বাঁচুন, পুরুষের মর্জি মতো নয়। আপনার ক্লিভেজ দেখে পুরুষ তার প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলছে, এমন পুরুষতান্ত্রিক সস্তা সুখ-ভাবনাকেও টাইম দেয়ার দরকার নেই।
এগিয়ে চলুন আপন গতিতে। বিকশিত করুন নিজের চৈতন্যকে। সেলিব্রিটির বউ হওয়ার স্বপ্ন না দেখে নিজের শিরদাঁড়া সোজা করে রাখুন। আপনার পরিচয় আপনাকে দিয়েই, বর দিয়ে নয়। আপনার বর কোন হোমরা সেটা নয়, বরং দেখুন আপনি কি হয়েছেন, কি করেছেন। পুরুষের কাছে নিজেকে সমর্পণ করায় মহত্ব নেই, আছে পরাজয়, শুধুই পরাজয়। পুরুষের কাছে নিজেকে বিকিয়ে দেয়া অপরাধ, ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ!