প্রমা ইসরাত

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী

মানুষ ধুমপান তার যৌনাঙ্গ দিয়ে করে না।

যে ছেলেটি মেয়েদের পাবলিক প্লেসে ধূমপান করা নিয়ে ১২ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের একটা ভিডিও বানালো, সেই ছেলেটিকে বাসে এক নারী তাঁর ঘেটি ধরে তুলে দিয়েছিলো, বাসের সংরক্ষিত ৯ টি আসনের একটিতে বসার জন্য। আর তুলে দেয়ার সময় বলেছিলো মূর্খ, ছেলেটি সেই অপমান মেনে নিতে পারে নি, এবং তাই মনের দুঃখে সে দেখলো টিনের চালে কাক, আমি তো অবাক, কেনো নারী আর পুরুষের সম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, আমার লিঙ্গ আছে খাড়িয়ে মুততে পারি, স্তন নাই শার্ট খুলে হাঁটতে পারি, এইরকম উচ্চমার্গীয় মানব জাতির কল্যাণমূলক দুইটা কোয়ালিটি থাকার পরও নারীদের “কি ভাবে চলিতে হইবে” এই নিয়ে কথা বলা যাবে না কেনো!

পাবলিক প্লেসে সিগারেট খাওয়া এমনিতেই আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। সেটা ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের জন্যেই। কিন্তু ছেলেটি বার্তা দিয়েছে কোনো মেয়েকে পাবলিক প্লেসে সিগারেট খেতে দেয়া যাবে না, কেউ যদি দেখেও তবে সেটা ভিডিও করে যেন ভাইরাল করে দেয়া হয়।

এই ছেলেটার সাথে ওই যে মাদ্রাসার ছেলেগুলো যারা নারীদের জন্য নির্মিত টয়লেট ভেঙে ফেলেছিলো, তাদের রয়েছে হুবহু মিল। এই ছেলেটার সাথে মিল আছে তেঁতুল শফীর, এই ছেলেটার সাথে মিল আছে ওই সমস্ত ছেলেদের যারা গোপনে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও করে পরে সেই সঙ্গীকে ব্ল্যাকমেইল করে, বা তাঁর সম্মান হানি ঘটাতে ভিডিও ভাইরাল করে দেয়, এই ছেলেটার মিল রয়েছে ওই ধর্ষক দের সাথে যারা ধর্ষণ করে ঘাড় মটকে, মাথা মুখ থেঁতলে নৃশংস ভাবে খুন করেছিলো রূপাকে, কিংবা তনুকে, কিংবা শিশু তানহা কে।

হায়াত মাহমুদ রাহাত নামের ছেলেটা এবং প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা ছেলেটা যার নাম সাব্বির তারা দু’জনই আসলে পটেনশিয়াল রেইপিস্ট যারা রেইপ কে নারীর উপর প্রতিশোধ নেয়ার সবচেয়ে বড় অস্ত্র মনে করে, এবং যারা শুধু রেইপ করেই ক্ষান্ত হবে না, সেই নারী কে যত রকম নৃশংস ভাবে অত্যাচার করে মারা যায় তা করে খুন করবে।

কেনো? কারণ পিতৃতন্ত্র তাদের শিখিয়েছে, পুরুষ নারীর উপরে অবস্থান করে। তারা শিখেছে, নারীকে সম্মানের একটি সিলেবাস রয়েছে, যদি সম্মান করতেই হয়, তবে এবং শুধু মাত্র তবেই সম্মান দিতে হবে, যদি ওই নারী সেই সিলেবাস মেইন্টেইন করে চলে। আর তা যদি না হয়, তাহলে সেই নারী কে শিক্ষা দিতে হবে। যেহেতু খুন সহজে করা যায় না, সহজে করা যায় সম্মান নষ্ট, কিংবা সবার সামনে সেই নারীর ব্যাক্তিগত তথ্য সবাইকে জানিয়ে দিয়ে সেই নারীকে সবার সামনে একটা তামাশার বস্তু বানানো যায় তাই সেটা করতে হবে, এবং সেটা এই অত্যাধুনিক যুগে স্মার্ট ফোনে স্মার্টলি ভিডিও করে নানান মাধ্যমে ভাইরাল করে দিতে হবে।

ধূমপান করা নারী দের জন্য আসলে আধুনিক কোনো ট্রেন্ড না। এক সময় ছিলো, যখন এই গ্রাম বাংলার নারীরাই হুক্কা টেনে ধূমপান করতেন। নারীবাদের সাথে ধূমপান করার সম্পর্ক নেই। কিন্তু শুধু নারী বলেই একজন নারী ধূমপান করতে পারবেন না, কিংবা চিপায় চুপায় ধূমপান করতে পারবে, লুকিয়ে করতে পারবে, কিন্তু কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবে, “আমরা হুক্কা টানি না হুক্কার খবর জানি না” এইখানেই নারীবাদ এবং পিতৃতন্ত্রের দ্বন্দ্ব।

5018 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।