মালঞ্চ কণা

নিজের সংগ্রাম নিজে চালিয়ে যাওয়া নিভৃতচারী।

নারীর সংগ্রাম তাঁর নিজের একার

আমি মিন্নি, নুসরাত, সায়মা এদের কাউকে নিয়ে ভাবি না। কারণ এরা নারী, সব দোষ এদের। এদের প্রতি অন্যায় অবিচারের বিচার কিংবা শাস্তি কিছুই হবে না। কাল হয়নি, আজ না, আগামীতেও না। আমরা এদের নিয়ে লিখি, দু চারদিন খুব বিচার দাবী করি তারপর আর কিছুই হয় না।

আমি আমাতে কেন্দ্রীভূত বেশি, যদিও এটা অন্যের চোখে ভালো না। কিন্তু কিছুই করার নেই, এতে আমার কিছু যায় আসেও না। কারণ ঐ শেষ বেলায় আমার আর আমার সন্তানের নিরাপত্তা, খাওয়া-দাওয়া, মাথার উপর ছাদের চিন্তা আমাকেই করতে হয়। সব ঘরের আলো বন্ধ করে যখন বিছানায় গা এলিয়ে অঝোরে বালিশ ভিজাই ওটা কেউ দেখতে আসবে না, কিংবা ঝর্ণার নীচে চোখের পানি ধুয়ে ফেলি সেটাও, আমার ফোলা চোখ দেখে কেউ জিজ্ঞেস করবে না কী হয়েছে! উল্টো বলবে, "অনেক ঘুমিয়েছো, তাই না!"।

যাপিত জীবনে কেউ জিজ্ঞেস করেনি, এখনো না। আর পরে যে করবে এমন আশাও করিনা। যখন আমার প্রাক্তন অস্বাভাবিক মানসিক নির্যাতন করে আমাকেই পাগল প্রমাণ করতে চেয়েছিলো, অকারণে যার তার সাথে জড়িয়ে সন্দেহ করে মান সম্মান ডুবিয়েছিলো, আমি পাতা পাতা ঘুমের ওষুধ খেয়ে মরার জন্য উতলা হয়েছিলাম যে এতো সৎ থাকার পরেও কেনো আমাকে সন্দেহ করে! সেই ওষুধ সাফ করার জন্য আমাকে ছোট্ট নয় বছরের বাচ্চাকে দিয়ে হসপিটালে পাঠিয়েছিলো, তখনো কাছের কেউই বলেনি, তুমি এসব করো না, ওর সংসার করো না, তোমার জন্য আমরা আছি...... না, কেউ বলে নাই। আমাকে উল্টো আরো ভাষন দেয়া হয়েছিলো, মরো বা বাঁচো এখান থেকেই তোমার খাটিয়া উঠবে।

ছোট্ট বাচ্চাটাকে যখন তখন নিতে চাইতো বলে একটা সিস্টেমে যেই আনতে চেয়েছি সে আমার নামে মামলা ঠুকে দিলো যে আমি নাকি বাচ্চাকে আটকে রাখি, নির্যাতন করি, তাঁকে খেতে দিই না, ওর বাবারর সাথে দেখাও করতে দিই না...... ইত্যাদি ইত্যাদি। শুধু তাই না, আদালতে যাওয়ার আগের দিন থানার ওসিকে ঘুষ দিয়ে আমাকে সারাদিন থানায় আটকে রাখলো যেনো আমি কোনো উকিল নিয়োগ করতে না পারি আর মামলায় হেরে যাই। আমাকে বনানী থানার ওসি এও বলেছিলো যে, "আপনার কোনো ভরসা নাই, আপনি কোর্টে যাবেন না, তাই রাতে বাচ্চা নিয়ে থানাতেই থাকেন"। আমি বীনা দোষে দোষী হয়েছি, শাস্তিও পেয়েছি, কুৎসা করছে কাছের দুরের সবাই। আর অন্যায়কারী বুকের সিনা চওড়া করে এখনো ঘুরে বেড়ায়, এখনো আমার বদনাম করে। কারণ আমি নারী, আর নারী মূলত আমাদের সমাজে বেশ্যা।

আমি এগুলো লেখতে চাইনি এখানে, অনেক সংক্ষেপে কয়েক লাইনে লিখেছি এজন্য যে কাল যদি আমি নাও থাকি আমার এই ছোট্ট লেখাটা থেকে যাবে। আমি এমন কিছু না, কেউ না যে আমাকে নিয়া অন্যরা লেখবে, বলবে।

আমি জানি, আপনারা কেউ কেউ মুখ টিপে হাসবেন। যারা মুখ টিপে হাসবেন এখনই হাসেন, পিছনে সমালোচনা করবেন করেন। এতে আমার কিছু যায় আসে না বিকজ আই ডোন্ট গিভ আ ফাক! আমি জানি, নারীর সংগ্রাম তাঁর নিজেকে করতে হয় একা একা।

 

1673 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।