মাহমুদা পারভীন

১৯৭১ সালে জন্ম নেয়া মাহমুদা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে সম্মান শেষ করার পরে "কবি নজরুল সরকারি কলেজ"-এ শিক্ষকতার সাথে যুক্ত আছেন।

ফুলগুলো যেনো কথা (চতুর্থ পর্ব)

বর্ষায় কিশোরগঞ্জের হাওর কানায় কানায় পূর্ণ থাকে পানিতে। এই পানিপূর্ণ হাওর অঞ্চলের একদল তরুণ প্রাণ মুক্তিযোদ্ধা সুনামগঞ্জের বালাট সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে প্রবেশ করেছেন। প্রশিক্ষণের অংশ হিসাবে একরাতে এই দলটি বাগডোগরা এয়ারপোর্টে গিয়েছেন। আজ তাদের ছোট হেলিকপ্টারে উঠবার প্রশিক্ষণ। সময়মতো আকাশে দেখা গেল কাঙ্ক্ষিত হেলিকপ্টার। হঠাৎ হেলিকপ্টার থেকে ভারী একটা কাগজের প্যাকেট ছুড়ে ফেলা হলো। দলনেতা খুলে দেখেন তাদের পরবর্তী নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশ মতো তারা এবার গেলেন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের পাশের এক জায়গায়। এবারও হেলিকপ্টার ল্যান্ড না করে ছুড়ে দিলো নির্দেশের প্যাকেট। এইভাবে বারেবারে উড্ডয়নের স্থান পরিবর্তন করে করে দলের বেশ ক'জন ক্লান্ত হয়ে তাঁবুতে ফিরে গিয়েছেন। ভোররাতে এই দলটি নির্দেশ মতো পৌঁছলো শিলিগুড়ি টু দার্জিলিং রোডের সেবক ব্রিজের কাছে।এইবার হেলিকপ্টার থেকে ভারী দড়ি ফেলা হলো। ক্লান্ত পরিশ্রান্ত দলের কারোরই এই উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা নেই। এই দলের একজন খুব ভালো ফুটবল খেলে, দাবা খেলায় তাকে হারানো প্রায় অসম্ভব, অসীম সাহস আর দৃপ্ত পদক্ষেপে এই ছেলেটা প্রথম এগিয়ে গিয়ে দড়ি ধরে উঠে গেল হেলিকপ্টারে, পেছন থেকে তার দলের বাকি সদস্যরা ভারতের আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে বাংলাদেশের হৃদয় চেরা জয়ধ্বনি ধরলো–– "জয় বাংলা"

দেশমাতৃকার বীর এই মুক্তিযোদ্ধা এবং তার দলের সকলকে কুর্নিশ করি।

অতি পরিচিত এই গাছের নাম "heart of Jesus" এর আদি ভূমি দক্ষিণ আমেরিকা। কিন্তু এই গাছের পাতায় ভাসে বাংলাদেশের হৃদয়।

কোলকাতার জানবাজারের "মাঢ় বাড়ি"তে রানি রাসমণিকে একজন নিস্প্রাণ কণ্ঠে সংবাদ পত্র পড়ে শোনাচ্ছিলো, কিন্তু রাসমণি প্রতিটি খবর খুব আগ্রহ নিয়ে শুনছিলেন। এমন সময় একদল জেলে রানির কাছে এসে কান্নায় ভেঙে পড়লো, কারণ ইংরেজ সরকার জলকর আরোপ করেছে। এখন থেকে গঙ্গায় মাছ ধরতে হলে কর দিতে হবে। এই পানিদারি বা জলকর দিলে হত দরিদ্র জেলেরা একেবারে নিঃস্ব হয়ে যাবে। জেলেরা তাই রানিমার কাছে এসেছে। জনহিতৈষী রাসমণি পরদিন তাঁর ম্যানেজার পাঠিয়ে কোম্পানির কাছ থেকে গঙ্গার ঘুসুরি থেকে মেটিয়াবুরুজ পর্যন্ত অংশটুকু দশ হাজার টাকার বিনিময়ে ইজারা নিয়ে নিলেন। আর রাতারাতি লোহার মোটা শিকল দিয়ে গঙ্গার বিশাল এই অংশটুকু ঘিরে ফেলা হলো। কোম্পানির নানান ধরনের জাহাজ এবার আটকা পড়ে গেল, কোনোটাই আর কোলকাতা বন্দরে ভিড়তে পারছে না। এই অভাবনীয় দৃশ্য দেখার জন্য কোলকাতার অসংখ্য মানুষ নদী তীরে উপস্থিত হয়ে রাসমণির নামে জয়ধ্বনি দিতে লাগলো। হতভম্ব সরকার রানিকে তলব করে এর জবাব চাইলে রানি পরিষ্কার জবাব দিলেন –"গঙ্গার এই অংশ আমার সুতরাং এই অংশে আমি কী করবো সেটা সম্পূর্ণ আমার অধিকার। এখানে সরকারের কিছু বলার নেই।"

হতবাক ইংরেজ সরকার রানি রাসমণির অসাধারণ কূটনৈতিক তৎপরতার কাছে নতি স্বীকার করে ইজারার সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দিলো এবং জলকর প্রত্যাহার করে নিলো। আবার কোলকাতা নগরে রানিমার নামে জয়ধ্বনি শুরু হলো।

তেজী এই রানি রাসমণির অসাধারণ সব জনহিতকর কাজ রয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠা, তৎকালীন হিন্দু কলেজ (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি কলেজ), ন্যাশনাল লাইব্রেরি, বিধবা বিবাহ, নারী শিক্ষা, নারী কল্যাণ এমন অসংখ্য কাজে তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। তেজী এই নারীকে কুর্ণিশ জানাই।

নানা ধরনের ঔষধি গুণ সম্পন্ন তেজী এই মসলার নাম "গোল মরিচ"/"black pepper"। এর pepper নাম এসেছে সংস্কৃত পিপালী শব্দ থেকে।"black pepper" নামটা সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ সরকারের দেশের ভাষার হলেও এর আদি উৎস কিন্তু রানি রাসমণির দেশ ভারত।

ব্রিটিশ ভারতের ফরিদপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ভগবানচন্দ্র বসু সাহসী ও নীতিবান প্রশাসক। ফরিদপুরে তখন চোর ডাকাতের খুব প্রকোপ। ভগবানচন্দ্র এক অপারেশনে বড়ো এক ডাকাত দলকে ধরে এনে আইন অনুযায়ী জেল দিলেন। জেল খেটে ফিরে এসে এই ডাকাতের দল ম্যাজিস্ট্রেটের সরকারি বাংলোতে গভীর রাতে আগুন লাগিয়ে ভয়ংকর কাণ্ড করেছিলো। এর কিছুদিন পর অন্য আরেক ডাকাত জেল খেটে ভগবানচন্দ্রের কাছে এসে কাজ চাইলো কারণ সে ভালো হয়ে যেতে চায়, কিন্তু জেলখাটা আসামিকে কেউ কাজ দিচ্ছে না। মানুষের উপর ছিলো ভগবানচন্দ্রের আসীম বিশ্বাস। ডাকাতকে তিনি নিজের বাড়িতে নিজের বড়ো ছেলেকে দেখাশোনা করার কাজ দিলেন। এই ডাকাত জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভগবানচন্দ্রের পরিবারের সাথে ছিলো। তো ডাকাতের যত্নে বড়ো হয়ে ভগবানচন্দ্রের ছেলেটি বৃত্তি নিয়ে পড়তে গেলো কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়ালেখা শেষ করে দেশে ফিরে প্রেসিডেন্সি কলেজে যোগ দিলো শিক্ষক হিসাবে। প্রথম মাসের বেতন নিতে গিয়ে ভগবানচন্দ্রের ছেলে দেখলো ব্রিটিশ শিক্ষকদের তুলনায় তাঁকে এক তৃতীয়াংশ বেতন কম দেয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদে তিনি তিন বছর বেতন গ্রহণ করেননি।

ভগবানচন্দ্রের অতি মেধাবী এবং অসীম সাহসী এই ছেলে ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বরে জন্মেছিলেন আমাদের বিক্রমপুরের রাঢ়িখালে, তাঁর নাম জগদীশচন্দ্র বসু। মানুষের উপর ছিলো ভগবানচন্দ্রের অগাধ আস্থা, আর তাঁর ছেলে মানুষের পাশাপাশি উদ্ভিদের উপর আস্থা রাখলেন যে মানুষের মতো উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে। জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু সম্পর্কে আইনস্টাইন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলে পরে জগদীশচন্দ্রের প্রাণের বন্ধু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটা কবিতা লিখলেন বিজ্ঞানী বন্ধুর উদ্দেশ্যে –

" বিজ্ঞান লক্ষীর প্রিয় পশ্চিম মন্দিরে

দূর সিন্ধুতীরে

হে বন্ধু গিয়েছো তুমি ; জয়মাল্যখানি

সেথা হতে আনি

দীনহীনা জননীর লজ্জানত শিরে

পরায়েছ ধীরে।"

আমার খুব প্রিয় এই উদ্ভিদের নাম "Peacock plant"

1196 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।