সৈয়দা সুমাইয়া ইরা

চাকুরীজিবি, নারীবাদী।

‘মা’ নামের বস্তুটিকে কি আমরা আদৌও মানুষ ভাবতে পারি!

মা! আমরা মা'কে ভালোবাসি তার হাজার কারণ থাকতে পারে কিন্তু সব কারণের কিন্তু একটাই তাৎপর্য তা হলো মায়ের আত্মত্যাগ! মা আমাদের জন্য রাত জেগে না খেয়ে অপেক্ষা করে যা অন্য কেউ করে না, মা আমাদের জন্য নিজের সুখ শান্তি ত্যাগ করে যা অন্য কেউ করে না, মা আমাদের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে উনুনের আঁচে বসে মজার খাবার রান্না করে যা অন্য কেউ করে না, সব কিছুতেই মা আমাদের জন্য করে আর সেই কারণেই আমরা মা'কে ভালোবাসি। অথচ কোনো চাকুরীজিবি মা যদি এসব না করে কাজের লোক দিয়ে রান্না করায়, সারাদিনের ক্লান্ত মা সন্তানের জন্য বেশী রাত না জেগে ঘুমিয়ে পড়ে, বা সংসারে বনিবনা না হওয়ার জন্য আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এমন মা'কে কোনো সন্তান ভালোবাসে এমন ঘটনা বিরল। 

আমরা ভেবেই নেই যে মায়েরা কেবল আমাদের সুখ শান্তি সমৃদ্ধি কামনা করার জন্যই মা হয়েছে, তাদের নিজস্ব সুখ বলতে কিছু যেন থাকতে নেই! স্বামী যতই অত্যাচার করুক সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে তাকে সব অত্যাচার সহ্য করে সংসার ধর্ম চালিয়ে যেতে হবে এমনটাই আমাদের শেখানো হয় আর আমরা তাই করি।

আমার পরিচিত এক ছেলে আছে তার বয়স যখন ছয় বছর তখন তার বাবা সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়, পরে তার নানা মা’কে অন্য জায়গায় আবার বিয়ে দেয়, কিন্তু সে বিয়ের শর্ত থাকে তারা সন্তানকে মা'য়ের সাথে নেবে না, হতভাগী গ্রামের মেয়ে নিজের সন্তানকে ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়, সেই ছেলে বড়ো হয়ে কোনোদিন মায়ের খোঁজ পর্যন্ত করে না, আমি যদি বলি আপনার কি উচিৎ না মায়ের সাথে দেখা করা বা খোঁজ-খবর করা? তখন বলে -না কারণ সে নিজের সুখের জন্য আমাকে রেখে অন্য জায়গায় বিয়ে করেছে, সে স্বার্থপর!

বাহ! সন্তান বাহ! মা নিজের সুখের কথা ভেবে অন্য জায়গায় বিয়ে করেছে বলে তাকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিলেন! আপনার মা আজ স্বার্থপর হয়ে গেছে, আপনার মা না হয় ভালো মা হতে পারে নি আপনি তো ভালো সন্তান হতে পারেন, আপনি কি পারেন না আপনার বিধবা নিঃসঙ্গ মায়ের জন্য সঙ্গী খুঁজতে! অথচ আমরা সন্তানেরা বিবাহ বিচ্ছেদ করে অবসাদে ভুগলে সবার আগে মা আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান আমাদের কি লাগবে কি করলে আমরা আবার আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পরবো মা তাই করেন, এমনকি আমাদের প্রমোট করেন যেন আমরা নতুন সঙ্গী নিয়ে আবার প্রাণবন্ত জীবন অতিবাহিত করতে পারি। 

কিন্তু আমরা ক‘জন সন্তান পারি ডিভোর্সি মা'য়ের নিঃসঙ্গতা দূর করতে! না পারি না আমরা ভেবেই নিয়েছি মা'য়েরা তাঁদের সুখ শান্তি বিসর্জন দিয়ে সারাজীবন আমাদের পাশে থাকবেন। আর আমরা মা'য়ের এই আত্মত্যাগ নিজের স্ত্রীর মধ্যেও দেখতে চাই, তাইতো সব স্বামীরা চায় তার স্ত্রী মা'য়ের প্রতিরুপ হোক, নিজের সন্তানের জন্য আত্মত্যাগ না করতে পারলে সে আবার আদর্শ মা হয় নাকি! 

আসলে আমরা মা নামক বস্তুটিকে কেবল মা'ই ভাবি কোনোদিন মানুষ ভাবতে পারি নি, যেদিন সন্তানেরা কেবল মায়ের কাছে শুধু প্রত্যাশা নয় মা'য়ের জন্য কিছু করতে চাইবে! যেদিন সন্তানেরা বলতে পারবে ‘আমিই আমার ডিভোর্সি বা বিধবা মা'য়ের সঙ্গী নির্বাচন করবো’ সেদিন সমাজের কারো সাহস হবে না সেই মায়ের দিকে অপরাধীর আঙুল উঠাবে।

1634 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।