নারীবাদের কি একই মুখমণ্ডল? একটি শাখা? একটি বই? একটি কাল? একটি দেশ? একটি আকাশ? একটি জীবন?
কিভাবে সেটি সম্ভব হবে? পশ্চিমা নারীর দৌড় একশো বছরের মাত্র। আর অন্য আরেক বিশাল ভৌগলিক অঞ্চল তাঁদের দৌড় শুরু করেছে মাত্র। কোনো কোনো অঞ্চলে শুরুও হয়নি। আর বাংলাদেশে এখনও সে যুদ্ধ ভেতর বাড়ি থেকে বাহির বাড়ি বেরুনোর। ফুল হাত থেকে থ্রিকোয়ার্টার।
একটি মেয়ে বিকিনি পরবে না বুরকা পরবে বিতর্কটি কিন্তু সেটি নয়। বিতর্কটি হলো নারী বলে তাকে বুরকা পড়তে হবে। নইলে কে কোন পোশাক পরবে সেটি তার পোশাক ‘বোধ’ থেকেই আসে কিন্তু। এমন কি সব পুরুষ এক পোশাক পরছে না। পরে না। কিন্তু একজন পুরুষ কি পোশাক পরবে সেটি নিয়ে কোনো নিয়ম জারি নেই। নারীর ক্ষেত্রে আছে। মূল বিতর্কটি সেখানে। বিষয়ও সেটি। ঠিক এখানে থাকি। মেয়েরা যখন ফুল হাত থেকে কনুই পর্যন্ত এলো মনে করে দেখতে পারি সেটিই কয়েক হাজার বর্গমাইল ভাঙার মতো ব্যাপার হলো। ব্লাউজের ঝুল নাভি থেকে একটু উপরে উঠলো, বেহায়া হলো। মহাভারত ভেঙে পড়লো। ব্লাউজের হাত শর্ট হলে হাতগুলো হয়ে উঠলো চরম নিষিদ্ধ অঞ্চল। পেট পিঠের কথা না হয় উল্লেখ নাই করলাম। স্লিভলেস হাতার ব্লাউজ এখনও ‘অসভ্য’ মেয়েদের।
পশ্চিমের মেয়েরা যখন বললো, এই যে আমি বাহু বের করলাম, মনে রেখো এ বাহু আমার। এই যে আমার লেগস, বের করলাম। তার মানে এই নয় যে আমার লেগস তোমার হয়ে গেল। আমার বুবস যদি জামা ভেদ করে দেখা যায়, মনে রেখো স্টিল আমার বুবস। দেখা গেলেই তোমার ধারনা করার কোনো কারণ নেই ও দুটি তোমার। আর এমনও নয় যে আমার বুবস তুমি পাকা আমের মতোা টিপে টিপে দেখবে। আমার বুবস দেখা গেলেও তা আমার শরীরে অবস্থিত। মালিকানা আমার। এবং দেখা যাওয়া মানে বিনা অনুমতিতে ছোঁয়ার পারমিশনও না। বিষয়গুলো এতই সিম্পল। এই বেসিক লেসনগুলো দেওয়ার দরকার পশ্চিমা নারীরা অনুভব করেছে বেশ কিছুদিন আগে।। তারা বেশ কিছুটা এগিয়েছে। বিষয়টি ‘বোধে’ প্রবেশ করলে ব্রেইন সাড়া দেবে। নতুবা ‘পিনিস’! আর সেটি নারীর থেকে পুরুষের জন্য অবমাননার বেশি বলে আমি মনে করি। কারণ এমন একটি সরল বিষয় পুরুষের মেধায় প্রবেশ করাতে এত কসরৎ করতে হচ্ছে। তবু আমার এখনকার কোর্সটি সে বিষয়টি নিয়ে নয় আসলে। মূল ভাবনাটির কোয়ার্টারেও বিশ্বের এক বিশাল অঞ্চলে প্রবেশ করেনি এটাই আমার বিষয়। এখন আমি নারীদের কথাই বলছি কিন্তু। নারীরাই এখনও প্রস্তুত নয়। নারীর মানসিক প্রস্তুতি এখনও প্রভাতে। তখন আরেক অঞ্চলে বিকেল হয়ে গেছে বেশ কিছুদিন আগে।
নারীবাদের কনসেপ্টে কনফ্লিক্টটি এখানেই প্রকট।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী ‘’মি টু’’ সচেতনতা প্রোগ্রামে এত নারী সাড়া দিয়েছে, তাঁদের না বলা কথা উন্মুক্ত করেছে যা বিস্ময়করভাবে প্রমাণ করে, এতটা পথ পাড়ি দিয়েও নারীর শরীরের অধিকার এখনও নারীর হয়ে ওঠেনি।
নারীর বিনা অনুমতিতে একটি স্পর্শ যতক্ষণ পর্যন্ত নারীর দেহে পড়বে প্রমাণিত হবে এ দেহটি সে নয় অন্য কেউ তার মনে করে। আর যদি তার মনে নাও করে, অন্যের দেহে তার হামলায় সে তার ‘অধিকার’ হিসেবে দেখে। বিষয়টি সেখানেই গুরুতর। ভয়ঙ্কর। সে ‘বোধ’ কেবল পুরুষের নয়, ‘সমাজের’ মগজে প্রবেশ করতে হবে। ‘পুরুষ’ না বলে ‘সমাজ বলছি আমি এ কারনে যে এ সমাজ নারী এবং পুরুষকে গড়ে তোলে আর সেই ডিজাইন অনুযায়ী কেবল পুরুষ নয়, বাংলাদেশের মতো দেশে শিক্ষিত নারীও নারীর ‘শালীনতা’ বিষয়ে যে ‘ধারনা’ অভিব্যক্ত করে তা মূল বিষয়টিকে বিভ্রান্ত করে তোলে। ধোঁয়াটে করে তোলে। মানুষ ভুল বিষয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। জট পাকিয়ে দেওয়ার বিষয়ে পুরুষের মতো নারীও সমান ভুমিকা রাখে।
সমস্যাটি যতটা জটিল আমরা মনে করি, তার চাইতেও জটিল। নারীবাদের জন্ম এবং তার যাত্রা পৃথিবীর একেক জায়গায় এক রকম। এক অঞ্চলে তার জন্ম এবং শিশু থেকে ম্যাচিওরিটির বেশ কিছু ধাপ অতিক্রান্ত। অন্য অঞ্চলে ভ্রূণ পর্যন্ত আসেনি। কোনো কোনো অঞ্চলে তা কেবল লেবার পেইন।
অনলাইনে বাংলাদেশের ‘শিক্ষিত’ নারীদের ‘নারীবাদ’ বিষয়ে পক্ষে বিপক্ষের আলোচনাগুলো সেই ভ্রূণ এবং লেবার পেইন অবস্থাকেই প্রকট করে।