কাবেরী গায়েন

অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ওসাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

কোটার ক্ষেত্রে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব

১। জেলা কোটা বাতিল হোক। যারা বিসিএস পর্যন্ত যান, তাঁরা প্রত্যেকেই ভালো স্কুল-কলেজের সার্টিফিকেটধারী। 

২। নারীরা এতো ভালো করছেন বহুদিন থেকে যে নারীকোটা রীতিমত অপমানজনক অনেক নারীর জন্য। তবে অনগ্রসর এলাকা চিহ্নিত করে কিছু কোটা সেখানে থাকতে পারে। সর্বোচ্চ ৫%। তবে অনগ্রসর এলাকার নারীরাও যদি ভালো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী হন তাঁদের ক্ষেত্রেও এই কোটার বিরোধী আমি। তাঁরা স্বেচ্ছায় বিসিএস ফর্ম পূরণ করার সময়ে নিজেরাই এই কোটার সুযোগ নিতে চান না মর্মে আন্ডারটেকিং দিতে পারেন।

৩। আদিবাসী কোটা থাকতে হবে আরো বহু বছর। পৃথিবীর সব দেশে আছে। ৫% থাকুক।

৪। প্রতিবন্ধী কোটা বাড়ানো হোক। ২%। 

৫। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ নিয়ে ঝামেলাটা হচ্ছে। যুদ্ধফেরত/যুদ্ধে নিহত ভ্যাটারানদের সন্তান-সন্ততি পৃথিবীর সব দেশেই বিশেষ সুবিধা পান। মুক্তিযুদ্ধে কতজন অংশগ্রহণ করেছেন, সেই মর্মে তালিকা নিশ্চয়ই আছে। সেখান থেকে প্রান্তিক মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-সন্ততি/পৌত্র-দৌহিত্রদের সুযোগের পক্ষে আমি। সেই সংখ্যা কোনভাবেই ৩০% হবে না। এমনকি ৫% হবে কি না সন্দেহ।

মুশকিল হলো, এই কোটার সুযোগ নেয়া পর্যন্ত তাঁরা পৌঁছাতে পারেন না। বরং খুব প্রতিষ্ঠিত ঘরের, ভালো স্কুল-কলেজে শিক্ষিত শ্রেণির অনেকে ছেলেমেয়েকে নির্লজ্জভাবে পিতামহ/মাতামহের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি করান বিশ্ববিদ্যালয়ে/ উচ্চ শিক্ষায়তনে। ফের চাকরির সময়েও যদি এই কোটা বহাল থাকে তাহলে সেই সন্তানদের মেধা নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। সচ্ছল, প্রতিষ্ঠিত ঘরের ছেলেমেয়েদের মুক্তিযোদ্ধা পিতামহ/মাতামহ কোটায় উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিরও বিপক্ষে আমি।

আমার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব : প্রান্তিক মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো সন্তান/পৌত্র-দৌহিত্র অভাবের কারণে পড়তে না পারলে তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে, উচ্চ শিক্ষায়তনে ভর্তির সময়ে কোটার সুযোগ পাবে কিন্তু তাদের বিসিএস কোটা থাকবে না। আর যদি ভর্তিপরীক্ষায় তারা কোটা না নেন, তবে বিসিএস পরীক্ষায় পাশ করলে তাঁদের কোটার আওতায় নেয়া হোক। যে কোনো একটা কোটার সুযোগ পাবেন তাঁরা। সেই কোটা তখন সাকূল্যে ৫%-এর বেশি হবে না।

সব মিলিয়ে দাঁড়াবে তখন নারী (৫%)+ আদিবাসী (৫%)+ প্রতিবন্ধী (২%)+ মুক্তিযোদ্ধা (৫%)= ১৭% কোটা। সেটা গ্রহণযোগ্য।

আস্তে আস্তে সে'সব কোটাও তুলে দেয়া হোক। আদিবাসী এবং প্রতিবন্ধী কোটা বহাল থাকবে শুধু তখন, পৃথিবীর যে কোনো দেশের মতো।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর এবং ছাত্রীদের উপর আক্রমণের নিন্দা জানাই।

1493 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।