দেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৭ বছর হয়ে গেলো। অথচ দেশে কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে জনমত যাচাই বাছাই করার রেওয়াজ এখনো চালু হয় নি। কোটা পদ্ধতি নিয়ে যখন এতোই সুড়সুড়ি, তো কোটা পদ্ধতি থাকবে নাকি থাকবে না, থাকলে কতটুকু থাকবে, এর উপর জনমত যাচাই করা হোক। জনমত যাচাই করে সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত জানাক।
খামাখা মুক্তিযুদ্ধের খোটা দিয়ে কোটাকে হজম করার সুযোগ নাই। মুক্তিযোদ্ধারা এই কোটার ভাগ খাওয়ার জন্য কেউ যুদ্ধ করে নাই। দেশের জন্য অকুতোভয় দুঃসাহস নিয়েই তাঁরা বীরের মতো যুদ্ধ করেছেন। সেই হিসাবে এই কোটা পদ্ধতি বরং মুক্তিযোদ্ধাদের সেই দুঃসাহস ও দেশপ্রেমের উপর এক ধরনের মেরুদণ্ডহীনতার প্রলেপ। বরং দুঃস্থ ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যথাযথভাবে সরকারি সহায়তা খুবই প্রয়োজন।
এখনো মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় প্রচুর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। ইতিপূর্বে পাঁচবার মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করার পরও সে তালিকা সঠিক হয় নি। প্রতিবারই তালিকা করার সময় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়েছে এবং পুরনো তালিকা থেকে বাদ পড়েছে অনেক নাম।
সরকার বদল হয় আর মুক্তিযোদ্ধার তালিকাও সরকারের ইচ্ছামতো বদল হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এসব তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সর্বনিম্ন সংখ্যা ছিলো ৭০ হাজার ৮৯৬ এবং সর্বোচ্চ সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি। বর্তমানে ১ লাখ ৩৪ হাজার নতুন আবেদন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ষষ্ঠ তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, একাত্তরে যুদ্ধের সময় কেবল রাজাকার-আলবদর-আলশামস ও পাকিপন্থীরা ছাড়া দেশের বাকিদের কে মুক্তিযোদ্ধা নয়? যে তালিকা করা উচিত ছিলো, সেই রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের তালিকা না করে, আপনারা করলেন মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা।
এটা সম্পূর্ণ একটা ভুল পদ্ধতি ছিলো। সেই ভুল থেকেও আমরা এখনো কোনো শিক্ষা নেই নাই। তখন থেকেই যাঁদের মেরুদণ্ড আছে অথচ দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন, তাঁরা এই তালিকায় ইচ্ছে করেই নাম লেখান নি। কিন্তু সুযোগ সন্ধানী তেলবাজ-চামচারা তখন থেকেই এই তালিকায় ঢোকার জন্য গোষ্ঠীবন্ধ।
একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে কেনো কোটা পদ্ধতিতে মেরুদণ্ডহীনের মতো সরকারি চাকরি নিতে হবে? যাদের মা-বাবারা বীরের মতো যুদ্ধ করেছেন, তাঁদের সন্তানরা কিনা মেরুদণ্ডহীন এক খোটার চাকরি গ্রহণ করবে? আর সেই মেরুদণ্ডহীনতাকে লালন-পালন করার নাম মুক্তিযুদ্ধের খোটা? কোটা না বলে এটাকে সরাসরি খোটা বলুন। যাদের মেরুদণ্ড আছে, তারা কেউ এই খোটা বা দয়াদাক্ষিণ্যের চাকরি করে না।
বরং এই কোটা পদ্ধতির নামে যে দুর্নীতি ও অনিয়ম লালন-পালন করা হচ্ছে, তার সংস্কার এখন সময়ের দাবি। যে কোনো বিষয়ে সরকারের সমালোচনাকে এখন বিরোধীপক্ষ হিসাবে ট্রিট করার একটা রেওয়াজ চালু হয়েছে। অথচ সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা করলেও তা কারো তেমন নজরে আসছে না। কারণ এই তোষামোদী জাতির এটা একটা কুঅভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
সীমিত পর্যায়ে নামমাত্র একটা কোটা পদ্ধতি থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে সেটা কোনোভাবেই ৫৬ শতাংশ মানার মতো নয়। একুশ শতকে যে দেশের ৫৬ শতাংশ কোটায় সুবিধা পায়, সেই দেশে চামচা তৈরি হবে না তো কর্মঠ মেধাবী তৈরি হবে?
আগে ঠিক করেন আপনারা কী চান? চামচা ও অকর্মন্য কর্মীবাহিনী নাকি মেরুদণ্ড আছে এবং যোগ্য ও সবল কর্মঠ কর্মীবাহিনী। তারপর খোটা মারেন। সবকিছুতে মুক্তিযুদ্ধের সংমিশ্রণ লাগিয়ে গা বাঁচানোর চামচা বৃত্তি বন্ধ হওয়াটা খুব জরুরি।