সালমা লুনা

ফিজিক্স আর পলিটিক্যাল সাইন্সে মাস্টার্স করেছেন। লেখালিখি করেন শখে। দায়বদ্ধতা অনুভব করেন নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলায়। হোপ সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন নামে একটি এনজিওর প্রেসিডেন্ট তিনি।

কোনো নারীকেই অসম্মান করা ভীষণ অনুচিত কাজ

গতকাল রাতে খুব অন্যমনষ্ক হয়েই ছেলেমেয়ের পাশে বসে টিভি দেখছিলাম। ছেলের টিভি দেখতে বলার কথায় মনোযোগী হলাম। তারা যেসব চ্যানেল দেখে আমি তা দেখি না। মুভি চ্যানেলগুলো ছাড়া। তাদের অতি প্রিয় চ্যানেলের একটি হলো- MTV। এই চ্যানেলটি আগে শুধু গানবাজনাই দেখাতো। এখন বেশ কিছু জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠানও দেখায়।

আগেও দেখেছি ওই চ্যানেলে এমন কিছু প্রোগ্রাম দেখায় যা আমার কাছে একমনে মনে হয় দেখুক ছেলেমেয়ে, তাদের দেখা দরকার আছে। আরেক মনে- যেখানে দীর্ঘদিনের অন্ধকার জমে আছে, আছে সংস্কারের মতো কিছু খটমটে বিষয়, সেখান থেকে ক্ষীণ আওয়াজ আসে- না দেখাই তো ভালো!

ওই চ্যানেলটি যুগের সাথে চলে এবং অতিমাত্রায় আধুনিক। তাইতো ওতে দেখায় কমবয়সী ছেলেমেয়েরা কীভাবে নেটের ফাঁদে পড়ে নিজেকে বিপন্ন করছে। যৌন হেনস্থার শিকার হচ্ছে। কয়েকটি পর্ব আমিও দেখেছি। খুবই শিক্ষণীয়। গতকাল দেখলাম আরেকটি অনুষ্ঠান করছে তারা। যা খুবই সময়োপযোগী। 

ফেসবুক টুইটার ইন্সটাগ্রামে যেসব সেলেব্রেটি বা সাধারণ মেয়েরা তাদের ছবি পোস্ট করেন তাতে তাদের লিস্টে থাকা বন্ধু বা ফলোয়াররা যেসব কমেন্ট করেন তা প্রায়ই সুখকর হয় না। সেসবে মাঝেমাঝে এত জঘন্য সব মন্তব্য থাকে যে একজন সেলেব্রেটিও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারেন। তেমনি সব মন্তব্যকারীদের কায়দা করে ফাঁদ পেতে ধরার ব্যবস্থা করেছে ওই অনুষ্ঠান। এবং সেই হেনস্থাকারীদের মধ্য থেকে একজনকে খুবই চালাকি করে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের নাম করে টিভি ক্যামেরার সামনেই ওই সেলেব্রেটির সামনে হাজির করা হচ্ছে। তার অপকর্মকে সামনে আনা হচ্ছে। সেই সেলেব্রেটিকে সুযোগ দেয়া হচ্ছে তাকে জেরা করার।

গতকাল ছিলো পিংক খ্যাত নায়িকা তাপসীর পর্ব। একজনকে আনা হয়েছে, যে ছেলেটি তাপসীর ছবিতে অশ্লীল সব কমেন্ট করেছিলো। তাপসীর মতো মেয়েরা নাকি শরীর দেখিয়ে রোজগার করে। শরীর ছাড়া তাদের কিছুই নেই। তাপসী যেন বিশেষ ধরণের অন্তর্বাস পরে তাকে ছবি পাঠায় ইত্যাদি ইত্যাদি।

টিভির সামনে উপস্থাপকের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে প্রথমে ছেলেটি নিজেকে খুব ভালো বলছিলো। সবাই যেমনটা বলে, নারীকে সম্মান করা উচিত, নারীকে তার পোশাক দিয়ে যাচাই না করে মেধা দিয়ে করা উচিত সেইসব ভণ্ডামী কথা। এরপর মুখোশ উন্মোচনের পর অস্বীকার এবং পরবর্তীতে সব প্রমাণ দেখানোর পর মাফ চাওয়া। এবং শেষে তাকে দিয়েই একটি মেসেজ দেয়া হয় যে, এভাবে দু’আঙ্গুলে কয়েকটি শব্দ লিখে কাউকে, কোনো নারীকেই অসম্মান করা ভীষণ অনুচিত কাজ। সে ভুল করেছে, কেউ যেন এই ভুল আর না করে।

খুবই সময়োপযোগী একটি অনুষ্ঠান। কার্যকরী হবে কতটুকু কে জানে! তবে উত্যক্তকারীরা একটি মেসেজ তো পাচ্ছে!

আমাদের দেশে কোনো টিভি চ্যানেল কি এমন অনুষ্ঠান করতে পারবে? পারলেও কি কোনো উত্যক্তকারী স্বীকার করবে নিজের দোষ। নাকি বলবে, নারীরা নারীর মতো না থাকলে আমরা তো এমন করবোই। নারীরা হচ্ছে ছিলা কলা, খোলা মিষ্টি, সুস্বাদু খাবার- আঢাকা থাকলে আমরা মাছি হামলে পড়বোই। দোষ আমাদের না। দোষ নারীরই! সে হোক সেলেব্রেটি কিংবা সাধারণ কোনো ফেসবুকার। সে তার ইচ্ছা বা রুচিমাফিক কাপড় পরতে পারবে না। সে এমনকি কপালে একটা টিপ পরে ছবি পোস্ট করলেও সমাজের স্বনিযুক্ত মোড়লরা তাকে জাজ করতে আসে, এটা ভালো মেয়ে না মন্দ মেয়ে - বলে। ইনফ্যাক্ট তারা এটাও বলে যে মেয়েরা এত ছবিই বা দেবে কেনো? 

কোনো মেয়ের পোশাক, মেয়ের খাদ্য, মেয়ের চলাফেরা আচরণ ঠিক করে দেয় এই মোড়লরা। সম্মান মুখে নয়। থাকে যার যার অন্তরে। পারিবারিক শিক্ষায়। নারীর পোশাক ব্যাপার না। নারী সিগারেট খাইলো না মদ - সেটিও ধর্তব্য না।

যার যার অন্তরে উঁকি দিয়া দেখরে মনা। 
কী দেখলা?

2247 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।