কচি রেজা

কবি কচি রেজার জন্ম গোপালগঞ্জ জেলার গোপালগঞ্জ শহরে। ছোটোবেলা থেকে দেশের বাইরে। বর্তমান বসবাস নিউ ইয়র্ক । পড়াশোনা দেশে এবং নিউ ইয়র্কে। নব্বই দশকের উল্লেখযোগ্য কবি। জন্মঃ ১০ এপ্রিল ! তার প্রকাশিত কবিতার বই-এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ >> অবিশ্বাস বেড়ালের নূপুর --২০১১ >> সে থাকে বুকের বাম পাশে -- ২০১২ >> অন্ধ আয়না যাত্রা---২০১২ >> মমিও কাচের গুঞ্জন--২০১৩ >> কফিনভর্তি কোলাহল –২০১৫ >> মনে করো --২০১৭ সিরিজ কবিতাঃ >> বিজিতা---২০১৪, >> দুই বাংলার যৌথ কবিতা , নাকছাবির ইতিকথা ---২০১২ ছোটগল্প: >> অগ্নি-সোয়ারী --- ২০০৪ >> যে লতার নীলকন্ঠ নাম ---- ২০০৮ সম্পাদিত লিটলম্যাগ: কাল ভাঙ্গো ঢেউ

কচি রেজা’র কবিতা

বিজিতা


বিজিতা, বিজিতা বলে ডাকতে ইচ্ছে করে আজ  
বিজিতা শৈশবের নাম  

বিজিতা, বিজিতা, স্কুলে যাও, মাখন দিয়ে গরম ভাত খাও 
টিচার এসেছে বিজিতা, খেলতে যেওনা  
বিজিতা, বড়োদের কথা শোনো  
বিজিতা, তুমি হবে ইন্দিরা গান্ধী
বিজিতা , জীবন একটা দাগ  

তারপর?  

বিজিতা ,রোজ মুখে তিনবার সাবান দেবে  
বিজিতা , বিণীত হও, জোরে হেসো না  
হারমোনিয়াম নিয়ে বসো  

পুরুষ শিক্ষকের সঙ্গে একা ঘরে পড়বে না  
ছেলে বন্ধুরা চিঠি দিলে মাকে দিও   
বিজিতা, বিজিতা, ওড়না ঠিক ঠাক তো!  

বিজিতা, কাজিন কী বুকে হাত দেয়?  

লুকিও না,   

কিছুই লুকোই না , মা!  



প্রণাম


পায়ে নয়, পায়ে বড্ড ধুলো, বড়ো হাঁটাহাঁটি পায়ের    
প্রণাম করো যদি, এই নাও হাত   
ঠোঁটে নয়, ঠোঁট বড়ো বেশি পাখি     
কবিতায় কবিতায় অমসৃন   
চুম্বন করো যদি ব্যথা পাবে ঠোঁট  


 

 

কনফেশন

নোট চাইতে রোজ বাড়ি আসতো যে সহপাঠি ছেলেটি  
যাকে আমিই উস্কেছি আগে  
আর চুমু খেয়েছি  
অথচ ধরা পড়ে বলেছি, কুত্তা, 
ছোটোলোকেদের একদম প্রশ্রয় দিতে নেই, মা'  

যেমন প্রাইমারিতে কয়েকবার আমি অংকে শূন্য পেয়েছি, বলেছি?  

এতোদিন আমি অনেক মিথ্যে বলেছি, সত্য গোপন রেখেছি   
অবলীলায় নিজের পক্ষে বানিয়েছি শব্দ  

ব্যাংকের পুকুর সাঁতরে এপার-ওপার করতে করতে   
গলার চেইন হারিয়ে মা'কে নির্দ্বিধায় বলেছি,  
সেদিন তো আমি গলায় কিছু পরিই নি মা --'

এইসব অল্প করে কিছু জানালাম আজ, পরে আবার কোনোদিন---  
বলব, সত্যিটাই বলব---- 




অবিশ্বাস বেড়ালের নূপুর


সংসারের নিয়মে আমি এখন জুতোর বাক্সে ঘুমাই ! জুতোর বাক্সে  

ঘুমাতে আমার ভালো লাগেনা তখন পুতুল গুলোর কথা মনে পড়ে !  

পুতুলগুলোও রাতে জুতোর বাক্সে ঘুমাতো !মাঝে মাঝে বিছানায়   

আমার কাছে নিয়ে আসতাম ! দেখতাম পুতুল গুলোর হাসিমুখ !  

পুতুলগুলো একদিন এক বাক্স থেকে আরেক বাক্সে স্থানান্তরিত হয়েছিল ,  

সেদিন ওদের কান্না কিন্তু আমি শুনেছি!  

 

হঠাৎ একদিন বিসর্জনের বাঁশি বেজে উঠলো !   

আমার মায়ের ভারি আঁচলে দুলে উঠলো রুপোর চাবি ! মন্ডপের ছায়ায়  

নিভে গেল চার পাঁচ হাজার নীল বাতি !  প্রতিমার অসহায় কান্না সেদিন  

কেউ  কিন্তু শুনতে পায়নি  !  

আমিও পাইনি ! বরং কাঁধে আঁচল ঘুরাতে শিখেছিলাম !   

অনেক প্রস্তুতির পর শিখেছিলাম কিশোরি চুলে খোঁপা বাঁধতে !   

আমিও সেদিন সেজেছিলাম মিথ্যে মা ! আসলে সব মা-ই মিথ্যে ! 

পুতুলগুলো খুঁজে পাইনি ! দুর্ঘটনায় জ্যোৎস্না হারানো হরিণ কিন্তু  

ছুটেছে ! শান বাধানো সঁড়িতে প্যান্ট ছেঁড়া শৈশব প্রতিবন্ধি চাঁদের   

মতো ডুবে গেছে !
পুতুলের কান্না  আমি আজও শুনতে পাই !  
নতুন শাড়ি, ব্রোকেড বেলাউজ, খোঁপা বাঁধতে আজ আর কষ্টই  

করতে হয়না কোনো!  

পুতুলগুলো কি মরে গেছে ? জানি, মানুষইতো মরে ! আর জানি,   

আমার মা যা জানেনা, পুতুলগুলো আমার বুকে ঘুমাতে ভালোবাসতো !

আজ যখন একটি হাত আমার ঘুমন্ত মুখ হাতড়ায়, চুল বেঁধেছি কিনা  

চোখ ভিজে কিনা, তখন কবরের শেষ কটা বাতিও নিভে যায় ! 
দম আটকে মা যখন বলে, খেলবি? পুতুল বানিয়ে দেব আবার?  

আমার ছেঁড়া কাপড়ের পুতুল কি এত কেঁদেছিল সেদিন আমার মায়ের  

ভাঙা পুতুলের মতো !  

2557 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।