কবির য়াহমদ

সম্পাদক, সিলেট টুয়েন্টিফোর ডট কম।

বিদ্যানন্দকে আইনি নোটিশদাতারাই ❛ব্লগারদের হিটলিস্ট❜ প্রণয়নকারী

প্রতিষ্ঠাতার ধর্মপরিচয়কে সামনে এনে অতি সম্প্রতি একবার বিব্রত করা হয়েছিলো বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনকে অবস্থাটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিলো যে প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাশ বিদ্যানন্দ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। শেষমেশ তার পদত্যাগ গ্রহণ করে নি মানবকল্যাণে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানটি। কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশে মানবিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসা বিদ্যানন্দের সঙ্গে আছেন কিশোর। এতে প্রাথমিক অবস্থায় উগ্রপন্থীদের পরাজয় হয়েছে ভাবা হলেও তারা হাল ছেড়ে দেয় নি বলে মনে হচ্ছে। এবার অন্য এক দিক থেকে টার্গেট করা হয়েছে বিদ্যানন্দকে। এবার সরাসরি ধর্মের নাম নিয়ে এবং সেটা ধর্মীয় অনুভূতির আঘাতের অভিযোগ এনে। অভিযোগকারীদের দাবি বিদ্যানন্দের যাকাত গ্রহণের অধিকার নাই। এ নিয়ে তারা আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে বিদ্যানন্দের চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস ও সাধারণ সম্পাদক শিপ্রা দাসের বিরুদ্ধে।

বিদ্যানন্দের বিরুদ্ধে এবার অভিযোগ উঠেছে ইসলামি শরিয়ত অবমাননার। এই অভিযোগ করেছেন দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাতের সম্পাদক আল্লামা মুহম্মদ মাহবুবুল আলম নামের একজন। তার পক্ষে রেজিস্টার্ড ডাকযোগে একটা নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহম্মদ মাসুদুজ্জামান। আইনি নোটিশে বলা হয়, ❛বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন নামের স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইটের দ্বারা বাংলাদেশের মুসলিমদের যাকাত সংগ্রহ করে এবং সংগৃহীত যাকাতের অর্থ দিয়ে কৃষকের জন্য সার-বীজ, মহিলাদের জন্য গরু-বাছুর, সেলাই মেশিন ক্রয়, রিকশা ক্রয় ইত্যাদি কাজ করে থাকে।❜ তাদের দাবি ❛কেউ যাকাত নিজের ইচ্ছায় কোনো রকম শর্ত ছাড়াই যাকাত গ্রহীতাকে যাকাতের পুরো অর্থের মালিকানা প্রদান করতে হবে; যাকাত গ্রহীতা সেই অর্থ কীভাবে খরচ করবেন সেটার এখতিয়ার তার। যাকাত বিতরণকারী নিজে থেকে কোনো শর্ত আরোপ করতে পারবে না।❜

বিদ্যানন্দের এই যাকাত সংগ্রহ এবং তা দিয়ে করোনাকালে অসহায় মানুষদের স্বাবলম্বী করার এই অভিপ্রায়কে তারা ❛ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত❜ বলে দাবি করেছে। এটাকে নোটিশে ❛শাস্তিযোগ্য অপরাধ❜ হিসেবে উল্লেখ করে এই নোটিশ দাতার ❛দ্বীনি অনুভূতিতে আঘাত❜ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এজন্যে তারা ❛নোটিশের ৩ দিনের মধ্যে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনকে সুস্পষ্ট বিবৃতি দিয়ে শরিয়তবিরোধী পন্থায় যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণ বন্ধ, প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনা এবং পবিত্র দ্বীন ইসলামের অবমাননামূলক কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে আর করবে না এমন প্রতিশ্রুতি প্রদানের জন্য আহবান❜ জানিয়েছে। অন্যথায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

বিদ্যানন্দের বিরুদ্ধে এই আইনি নোটিশের সংবাদ দেশের গণমাধ্যমগুলোতে আসে নি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাজারবাগ দরবার শরিফের ফেসবুক পেজ এবং আল ইহসান ডটনেটের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। গত ১২ মে তারিখে প্রকাশিত কিংবা প্রেরিত এই আইনি নোটিশের জবাবে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন তাদের ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজে কিছু বলে নি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই আইনি নোটিশের সংবাদ প্রচারের পর মঙ্গলবার (১৯ মে) এক পোস্টে বিদ্যানন্দ লিখেছে- ❛❛নৌকা বানানো হচ্ছে দুঃস্থ মুসলিম পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করতে, জালও কেনা হয়েছে। সুন্দরবনে বাঘ এবং কুমীরের কাছে নিহত হওয়া মানুষগুলোর পরিবারকে খুঁজে বের করছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সদস্যরা। তাদের অধীনে আমরা দক্ষিণবঙ্গে এই পুনর্বাসন প্রজেক্টটি করছি। একটু আগে তাদের থেকে নৌকার নির্মাণ কাজের এই ছবিগুলো পেয়েছি। [যাকাত ফান্ডে শুধুমাত্র মুসলিম পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। আমাদের অন্য প্রজেক্টে সকল ধর্মের মানুষই সমান সুবিধা পেয়ে থাকে]❜❜ ধারণা করা যায়, এটা আইনি নোটিশের পর তাদের প্রতিক্রিয়া, যদিও এ সম্পর্কে তারা সুস্পষ্ট বক্তব্য দেয় নি।

বিদ্যানন্দের যাকাত সংগ্রহ করে করোনায় হঠাৎ করে অসহায় পড়ে পড়া মানুষদের দেওয়ার কারণে রাজারবাগ দরবার শরিফ কিংবা এই ধরনের ধর্মব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থে আঘাত লেগেছে সন্দেহ নেই। করোনার সময়ে ❛একখণ্ড বাংলাদেশ❜ হয়ে ওঠা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনে মানুষ নিয়মিতভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছে এবং তারাও মানুষের কাছ থেকে প্রদত্ত অর্থের সদ্ব্যবহার করছে। হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক দিনরাত পরিশ্রম করছেন। বিদ্যানন্দের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমে সহায়তা দিচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা-প্রতিষ্ঠান। এমন অবস্থায় ধর্মব্যবসায়ী এই প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থে আঘাত লেগেছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার যে তারা কম টাকা-পয়সা পাবে সেটা আগে ভাগেই টের পেয়েছে; তাই বিদ্যানন্দকে মানবিক কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে তারা আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে, এবং যাকাত সংগ্রহ থেকে দূরে না সরলে ধর্মীয় অনুভূতির আঘাতের অভিযোগে মামলারও হুমকি দিয়েছে।

রাজারবাগ দরবার শরিফ এবং এদের মুখপত্র দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত সম্প্রতি কারা যাকাত ও ফিতরা পাওয়ার অধিকার রাখে এ সম্পর্কিত এক বক্তব্যে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন কিছু মাদ্রাসা, দরবার শরিফ ও এতিমখানার নামোল্লেখ করেছে। এর বাইরে অন্য কোথাও কেউ যাকাত দিলে সেটা যাকাত আদায় হবে না বলেও দাবি করেছে। অর্থাৎ তাদের দাবিমত ওইসব জায়গায় যাকাত-ফিতরা প্রদান করলে কবুল হবে, অন্য কোথাও দিলে হবে না। তাদের ভাষ্যমতে ❛❛যাকাত-ফিতরা বা কুরবানির চামড়া দিয়ে যারা ছদকায়ে জারিয়ার ছওয়াব হাছিল করতে চান তাদের জন্য একমাত্র ও প্রকৃত স্থান হলো ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরিফ সুন্নতি মাদ্রাসা ও ইয়াতিমখানা’ ৫নং আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরিফ, ঢাকা। মুহম্মদিয়া জামিয়া শরিফ ইয়াতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং যাকাত প্রদানের সর্বশ্রেষ্ঠ হক্ব স্থান এবং একমাত্র কবুলযোগ্য স্থান, যেখানে আপনার যাকাত, ফিতরা, উশর দিলে নিঃসন্দেহে অবশ্যই কবুল হবে।❜❜ ভাবা যায়- যাকাত-ফিতরার কবুলের একমাত্র স্থান নির্ধারণ এবং সিদ্ধান্ত তারা দিয়ে দিচ্ছে। এইধরনের একটা প্রতিষ্ঠান কিংবা গোষ্ঠীর কাছ থেকে বিদ্যানন্দের এই মানবিক উদ্যোগে বাধাপ্রদান অস্বাভাবিক কিছু নয়।

এই ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী এবারই প্রথম আলোচনায় এসেছে এমন না। এর আগেও তারা নানা সময়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিলো। তাদের দাবিমতে বাংলাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো মাদ্রাসাগুলোতেও জাতীয় সংগীত গাইতে হবে এমন নির্দেশনার বিরুদ্ধে তারা হাই কোর্টে রিট করেছিলো। রাজারবাগ দরবার শরিফ বলছে ইসলামের জন্যে এটা তাদের আইনি পদক্ষেপ। ১৭ মার্চ ২০১৮ তারিখের প্রথম আলো অনলাইন জানাচ্ছে- ❛❛মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত গাওয়া বাধ্যতামূলক করে সরকারের সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আনা রিট ‘উত্থাপিত হয় নি’ মর্মে খারিজ করে দিয়েছেন হাই কোর্ট। বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। কুড়িগ্রামের একটি ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম মিয়া ও ঢাকার কদমতলা মাদ্রাসার দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক এ রিট দায়ের করেন।❜❜

২০১৭ সালের ৯ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য অপসারণ চেয়ে হাই কোর্টে রিট করা হয়। আইনজীবী এ কে আজাদের মাধ্যমে রিট করেন আরিফুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। আবেদনে আরিফুর নিজেকে বিশ্ববার্তা২৪ ডটকম নামের একটি অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে ‘মূর্তি’ অপসারণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে রুল জারির আর্জি জানানো হয়। [এনটিভি অনলাইন]

২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনুমোদন ছাড়া কোনো বাড়ি বা ছাদ বা রাস্তায় উচ্চশব্দে গানবাজনা বা কনসার্ট বা সংগীতানুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে না। ঢাকা মহানগরী অধ্যাদেশ ১৯৭৬ এর ২৭ ও ৩১ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশ দেয়া হলো। [জনকণ্ঠ] রাজারবাগ দরবার শরিফের দাবি বাড়ির ছাদে হারাম গান-বাজনা বন্ধের জন্য ঢাকা রাজারবাগ শরিফের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও পুলিশের আইজিপিকে আইনি নোটিশ দেয়ার ৭ দিন পর ঢাকা শহরে বাড়ির ছাদে সমস্ত গান-বাজনা বন্ধে বিজ্ঞপ্তি জারি করলো ঢাকা মহানগর পুলিশ।

‘ধর্ষকের কাছে নারীর কোনো ধর্ম নেই’ শীর্ষক একটি কলাম লেখার কারণে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। দৈনিক ‘আল বাইয়্যিনাত’ মাসিক পত্রিকার সম্পাদক আল্লামা মুহম্মদ মাহবুব আলমের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় মামলাটি নথিভুক্ত হয়। মামলা নম্বর-৩৬। মামলায় তসলিমা নাসরিনসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন, অনলাইন পোর্টাল ‘উইমেন চ্যাপ্টার’ সম্পাদক সুপ্রীতি ধর, সুচিষ্মিতা সিমন্তি ও লীনা হক। [জাগোনিউজ, ২৬ এপ্রিল ২০১৮]

এছাড়াও রাজারবাগ দরবার শরিফের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ৮৪ জন ব্লগারের হিটলিস্ট প্রকাশের। ২০১৩ সালে এই ব্লগারদের তালিকা প্রকাশের পর ব্লগারদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। ব্লগারদের তালিকা প্রকাশের আগে-পরে ধর্মীয় সন্ত্রাসীদের চাপাতির কোপে নিহত হন রাজীব হায়দার (থাবা বাবা), অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় দাশ, ওয়াশিকুর বাবু, নিলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নীল (নিলয় নীল), নাজিমুদ্দিন সামাদ, ফায়সাল আরেফিন দীপন, জুলহাস মান্নান ও তনয়কে। আক্রান্ত হন প্রকাশক টুটুল, লেখক রণদীপম বসু ও তারেক রহিম।

১৫ মে ২০১৫ তারিখে প্রথম আলো পত্রিকায় তালিকা ধরে ব্লগার খুন❜ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়- ❛❛২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির আগে ব্লগারদের তালিকা করা হয়েছিলো। হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে দর-কষাকষির অংশ হিসেবে ১৩ মার্চ সরকার নয় সদস্যের একটি কমিটি করে দেয়। কমিটিতে আইন, তথ্য এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও ছিলেন। সেই কমিটির নাম ছিল ‘পবিত্র ইসলাম ধর্ম এবং মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যকারী ব্লগার ও ফেসবুক ব্যবহারকারীদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ কমিটি’। কমিটির প্রধান ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রয়াত অতিরিক্ত সচিব মাইনউদ্দিন খন্দকার। … কমিটি এপ্রিল মাস পর্যন্ত চারটি বৈঠক করে। কমিটি ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যকারীর নাম আহ্বান করলে বিভিন্ন মহল থেকে সব মিলিয়ে ৮৪ জন ব্লগারের একটি তালিকা দেওয়া হয়। ❜❜

প্রতিবেদনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাত দিয়ে আরও বলা হয়,❛❛৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত কমিটির তৃতীয় বৈঠকে আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত নামের একটি সংগঠন ‘নাস্তিকদের তালিকা’ শিরোনামে ৫৬ জনের একটি তালিকা দেয়।…স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া আনজুমানে আল বাইয়্যিনাতের তালিকায় রাজিব হায়দার ওরফে শোভনের নাম ছিলো। ওই তালিকা দেওয়ার আগেই, ১৫ ফেব্রুয়ারি তাকে হত্যা করা হয়। এরও আগে একই বছরের ১৪ জানুয়ারি তালিকায় নাম থাকা আরেক ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এর পরে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি তালিকায় থাকা মার্কিনপ্রবাসী অভিজিৎ রায়কে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর ঠিক একই কায়দায় হত্যা করা হয় মূলত ফেসবুকে লেখালেখি করা ওয়াশিকুর রহমানকে। তবে কোনো তালিকাতেই ওয়াশিকুরের নাম ছিলো না। সবশেষে ১২ মে সিলেটে হত্যা করা হয় ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে। আনজুমানে আল বাইয়্যিনাতের তালিকায় তার নামটি ছিলো।❜❜

কেবল তাই নয়, কথিত নাস্তিক ব্লগারদের তালিকা দেওয়া নিয়ে হেফাজতে ইসলামকে দায়ী করা হলেও সংগঠনটির আমির আল্লামা শাহ আহমেদ শফী এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্লগারদের কোনো তালিকা দেননি। আল্লামা শফী এক বিবৃতিতে বলেন, ❛❛২০১৩ সালের ৩১ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটিকে যে ৮৪ জন ব্লগারের তালিকা দেওয়া হয়, তা মাসিক আল-বাইয়্যিনাত ও দৈনিক আল-ইহসান পত্রিকার সম্পাদক এবং আনজুমানে আল-বাইয়্যিনাতের কেন্দ্রীয় আহবায়ক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম আরিফের নেতৃত্বে দেওয়া হয়েছিলো। তিনি হেফাজতে ইসলামের কেউ নন এবং উক্ত বৈঠকে হেফাজতের কোনো নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেননি।❜❜ [কালের কণ্ঠ, ২৪ মে, ২০১৫]

এতো এতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, প্রগতির বিরুদ্ধে অবস্থান, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক স্থিতাবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া সত্ত্বেও রাজারবাগ দরবার শরিফ, তাদের মুখপত্র দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত এবং এর সম্পাদক আল্লামা মুহম্মদ মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দৃশ্যমান হয় নি। ফলে এরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। তাদের এই বেপরোয়া অবস্থানের কারণে করোনাকালে মানবিক কাজে এগিয়ে আসা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে এই আইনি নোটিশ এবং তৎপরবর্তীকালের মামলার হুমকি। এখানে বরাবরের মতো তারা নিজেদের মতো করে ধর্মীয় ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে সামনে আনতে মরিয়া।

ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রদত্ত এবং প্রদেয় যাকাত বিদ্যানন্দের মাধ্যমে যদি মানুষের কাজে লাগে তবে ওখানে কারও আপত্তি থাকার কথা ছিলো না। কিন্তু তারা এখানেও আপত্তি করছে এবং নিজেদের প্রতিষ্ঠানগুলোকেই যাকাতের একমাত্র হক্বদার ও যাকাত কবুলের স্থান বলে দাবিও করেছে। এখানে তাদের স্বার্থের বিষয়টি প্রকাশ্য।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন তাদের ওয়েবসাইটে ❛কোভিড-১৯ মোকাবেলায় আপনার যাকাত❜ অংশে মানুষদের উদ্ধুব্ধ করতে বলেছে- ❛❛যাকাত দিয়ে আপনার সম্পদ পবিত্র করুন এবং তাদের আত্মনির্ভরশলী করতে সহায়তা করুন। কোভিড-১৯ পরবর্তী পুনর্বাসন প্রকল্পে যাকাত ফান্ড গ্রহণ করছে বিদ্যানন্দ। হকার কিংবা প্রান্তিক ব্যবসায়ী যারা তাদের মূলধন ভেঙে পরিবারের মৌলিক চাহিদা মেটাচ্ছেন, তাদেরকে সেই মূলধন পুনরায় অর্জনে সহযোগিতা করাই আমাদের উদ্দেশ্য। আপনার দেওয়া যাকাতের টাকায় হয়তো কারো দোকানের পণ্য উঠবে, কারো সেলাই মেশিন হবে আবার কারো হবে লেখাপড়া। আপনার দেওয়া যাকাতের টাকায় অসহায় এক একটি পরিবার হয়ে উঠতে পারে সচ্ছল ও স্বাবলম্বী।❜❜

বিদ্যানন্দ যখন মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে কাজ করছে তখন তাদের এই উদ্যোগে যারাই বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। এখানে কথিত ধর্মীয় অনুভূতির ব্যাখ্যা কিংবা ভুল ব্যাখ্যাকে প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নাই। মানবিক এই উদ্যোগে যারাই বাধা দিতে আসবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সকলের অবস্থান নেওয়া উচিত, রাষ্ট্রের অবস্থান নেওয়া উচিৎ।

1761 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।