মিনার্ভা সেঁজুতি

লেখক ও আবৃত্তিকার

ঘটনাটা আমার জীবনের অনেক ক্ষতি করেছে

আমিও। হ্যাঁ আমিও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছি নানাভাবে নানা সময়। কথায়, চোখ দিয়ে, স্পর্শে। খুব ছোটবেলায় পরিবারের খুব কাছের একজন ঘুমের মধ্যে আমার বুকে হাত দিয়েছিলো। আমি চিৎকার করে উঠেছিলাম কে? কে?

তারপর থেকে এখনো সময় অসময়ে আমি কে কে করে চিৎকার করে উঠি। আমি মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েছিলাম। চঞ্চল, ছটফটে আমি যে চুপচাপ হয়ে গেলাম পরিবারের কেউ বুঝতে পারেনি বা চেষ্টা করেনি জানতে কেনো আমি এমন হয়ে গেলাম! যখন পরিবারের লোকজন আমাকে বাইরের পুরুষদের সম্পর্কে সচেতন করতো তখন আমি মনে মনে ওদের বলতাম, "আমার ঘরও তো তোমরা আমার জন্য নিরাপদ রাখো নি!

"হাইওয়ে" মুভিটাতে আমি বার বার আলিয়া ভাটের জায়গায় আমাকেই দেখতে পেয়েছি। আমি আমার পরিবারকে আমার এ ঘটনার কথা পরে বলেছিলাম। প্রতিবাদ ও করেছিলাম। অনেক বড় প্রতিবাদ। লাভ হয়নি। এই ঘটনাটা আমার জীবনের অনেক ক্ষতি করেছে। সেইসময় তো আর এখনকার আমি ছিলাম না যে লাত্থায়ে নাকমুখ ফাটায়ে দিবো! অতিরিক্ত কোমল একটা মেয়ে কিন্তু মানসিকভাবে অনেক দৃঢ়। কেঁদেছিলাম অনেক কিন্তু প্রতিবাদ করেছিলাম।

এরপর থেকে যতবার কেউ আমাকে বাজেভাবে স্পর্শ করতে চেয়েছে আমি সাথে সাথেই জোর গলায় চিৎকার করে প্রতিবাদ করেছি। একবার ট্রেনের জানালা দিয়ে এক ছেলের কলার চেপে ধরেছিলাম। আরেকবার ঢাকা নিউমার্কেটে এক বেটাকে ছাতা দিয়ে পিটায়ে ছাতা ভেঙে ফেলেছিলাম।

আর্য আজ খেলতে খেলতে ব্লক দিয়ে রাবণ বানিয়ে আমার কাছে এনে বলছে,

-মা তোমাকে রাবণ ধরে নিয়ে যাবে

আমি বললাম

-তাই, আমি কি সীতা?

আর্য বললো

-হ্যাঁ

আমি বললাম

-কিন্তু আমিতো সেই সীতা নই। তাই রাবণ আমাকে এখন আর ধরে নিয়ে যেতে পারবে না।আমি তারে পিটিয়ে মেরে ফেলবো!
একদম ঠিক! আমি এখন তাই করবো!

 

 

 

7126 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।