নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ে দুটো গবেষণা করার সুযোগ হয়েছে। একটি কাজে সাথে ছিলেন আনোয়ারা আপা (সৈয়দ আনোয়ারা হক)। তথ্য সংগ্রহকালে একবার এক তরুণ ইমামের দেখা পেলাম, যে মাদ্রাসা শিক্ষা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে পড়ছে। স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও "গণ্যমান্য" জনা দশেক লোকের সাথে ফোকাসড গ্রুপ ডিসকাশন।
ইমাম সাহেব বললেন, নারী ধর্ষণের কারণ "শয়তানের আসোওয়াছা" ধরনের কিছু একটা। মানে ধর্ষকের কোন দোষ নেই, সব "শয়তান" জাতীয় কিছুর দুষ্টুমি। আপা এতই রেগে গেলেন যে ধমকাতে শুরু করলেন। "তুমি বলছ সমাজবিজ্ঞান পড়েছ, বিজ্ঞানের কোথায় আছে শয়তান? সমাজ বিজ্ঞান কি বলে?" সবাই স্তব্দ। আমি ভাবলাম, আমার তথ্য সংগ্রহ কাজটি মনেহয় আপা পণ্ড করে দিলেন।
তরুণ ইমাম মিন মিন করে যা উত্তর দিল, সেটি কিন্তু ইন্টারেস্টং ছিল। "কোন ছেলে একা ধর্ষণ করেনা, দল বেঁধে করে, দলের প্রভাবে করে।" বুঝলাম সে সমগোত্রীয়দের চাপের কথা (পিয়ার গ্রুপ প্রেশার) মিন করছে।
আমাদের গবেষণায় আমরা জেনেছি, ধর্ষকের একটি বিশ্বাস রয়েছে নারী সম্পর্কে, "নারীরা দুর্বল" তার একটি। এটি পিতৃতান্ত্রিক সামাজিকায়নের শিক্ষা। যদি ধর্ষক পুরুষ মনে করে যে তার ভিক্টিম শেষ পর্যন্ত লড়বে, এবং তার বিশেষ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কাটাকুটি যাবার ভয় আছে, তাহলে সে কিছুটা হলেও নিরুৎসাহিত হবে।
যে কোন মানুষের আত্মরক্ষার অধিকার আইনীভাবে স্বীকৃত। আত্মরক্ষার জন্য যদি কেউ আক্রমণকারীর বিভিন্ন বিশেষ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কাটাকুটি, তারপর গলাকাটা, ইত্যাদি করে, সেটা প্রতিরোধ, আত্মরক্ষার প্রয়োজনে। নারী এবং ছেলে শিশুরাও যদি যৌনসহিংসতার ব্যাপারে, আত্মরক্ষার জন্য, ধর্ষকের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কাটাকুটির সিদ্ধান্ত নেয়, এবং সেটা জানান দেয়, তাহলে কিছু পটেনশিয়াল ধর্ষক ভয় পাবে। ভিকটিম "দুর্বল" নয়, প্রতিরোধ করবে, এই ধারনা দেয়ার একটি সামাজিক উপযোগিতা রয়েছে। (এটি ধর্ষণ বা সহিংসতা পুরো বন্ধ করবেনা, সেটা আমিও জানি)।
ধর্ষণের মত অপরাধের আলোচনায়, আপনার "শয়তান", কিংবা "মানবাধিকার" ইত্যাদি প্রসঙ্গ কেন আনেন বুঝিনা।