কানিজ ফাতেমা

প্রবাসিনী কানিজ ফাতেমা একজন সচেতন নারীবাদী, এবং অনলাইন একটিভিস্ট।

একজন এভ্রিল এবং নারীর বাণিজ্যিকরণ

গত কয়দিন নিউজপোর্টালগুলো এভ্রিল এবং মিস ওয়ার্ল্ড বাঙলাদেশ প্রতিযোগিতা নিয়া ক্রমাগত নিউজ কইরা যাচ্ছে। মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতা যে হচ্ছে তা জানতে পারি এই প্রতিযোগিতায় নাকি নাসার বিশিষ্ট উল্কা বিজ্ঞানী নতুন এক উল্কাতত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন, বছরে একদিন উল্কাপাত হয় না, সেটা হচ্ছে শবে কদরের রাত, এই বিষয়ে এক ছোট বোন কিছু একটা পোস্ট করায়। এরপরেই বুঝতে পারছিলাম, যে প্রতিযোগীতায় বিচারকেরই এই স্ট্যান্ডার্ড সেখান থেকে কোন স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিযোগী আমরা পাইতে যাচ্ছি।

যাই হোক, নিউজপেপার মারফত জানতে পারলাম বিচারকদের রায়ে এভ্রিল মিসওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ হয়নি। হইছিলো জেসিকা নামের একটি মেয়ে। কিন্তু আয়োজকরা ফল পালটায়া এভ্রিলকে বিজয়ী বানায়। অবাক হই নাই। স্বভাব দুর্নীতির দেশ এই বঙ্গে সবই সম্ভব, আর এতো সামান্য সুন্দরী প্রতিযোগিতা। এরপর প্রথম আলোর মারফত জানতে পারলাম এই প্রতিযোগী শুধু যে নিজে অযোগ্য হইয়াও আয়োজকদের কল্যাণে বিজয়ী হইছেন তা নয়, উনি রীতিমত নিজের বিয়ের ব্যাপারটাও গোপন রাখছেন। মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতার প্রথম কন্ডিশান হলো প্রতিযোগীকে অবিবাহিতা হতে হবে, ডিভোর্সিও হওয়া যাবে না। যে আসবে এই প্রতিযোগিতায় তাকে এই রুলস মেনে নিয়াই আসতে হইব। যিনি বিবাহিতা/ ডিভোর্সি তিনি এই প্রতিযোগিতায় অযোগ্য বলে বিবেচিত হইবেন প্রথমেই।

এখন এইনিয়া শুরু হইছে অনলাইনে অনেকের ত্যানা প্যাঁচানো। একজন বলতেছেন সৌন্দর্য কি ভার্জিনিটির সাথে সম্পৃক্ত, যে মিসেস হলে সমস্যা? আমার কথা হলো এখানে তো ভার্জিনিটি নিয়া প্রশ্ন উঠছে না, এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের ভার্জনিটি পরীক্ষা করা হয় বইলা তো শুনি নাই। অবিবাহিতা হইলেই কেউ ভার্জিন, এইটা এই একুশ শতাব্দীতে বইসা ভাবা কোন যুক্তির কথা? আরে ভাই এইটার নামই মিসওয়ার্ল্ড। তাই এই প্রতিযোগিতায় যে আসবে সে নিয়ম মাইনাই আসবে। যতদূর জানি মিস্টার ওয়ার্ল্ডেও বিবাহিত পুরুষ পার্টিসিপেট করতে পারেন না। নারীবাদি বইলাই মিথ্যা এবং দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়া একজন মিথ্যাবাদী মেয়েকে মাথায় উঠায়া নাচার কিছু নাই। দ্বীতিয়ত, ইউটিউবে কয়েকটা পর্ব দেইখা উনাকে কিছুতেই যোগ্য প্রার্থী বইলা মনে হয় নাই। না পারফর্মেন্স, না স্মার্টনেস। ওর থেকে অনেক বেটার প্রতিযোগী প্রথম দশে ছিল। এবং বিচারকদের রায়ে এভ্রিল নাকি প্রথম দশেই ছিলেন না। তাও উনাকে সাপোর্ট দেয়া মানে একসাথে দুইটা মিথ্যা এবং দুর্নীতিকে সাপোর্ট দেয়া। সেইসাথে অনান্য যোগ্য প্রতিযোগীদের সাথে হওয়া অন্যায়কে মাইনা নেয়া।

এভ্রিল বাল্য বিবাহের স্বীকার হয়ে থাকলে উনি যেভাবে সেই পরিস্থিতি থেকে বের হইয়া ঘুরে দাঁড়াইছেন তাকে অবশ্যই সন্মান করি। উনি নিজের যোগ্যতায় দেশের সবচেয়ে ফাস্ট লেডিবাইকার এবং ইয়ামাহা ব্র‍্যান্ডের ব্র‍্যান্ড এম্বাসেডর হইছেন সেটা অবশ্যই এপ্রিসিয়েট করি। যারা উনার আগের ছবি নিয়া ট্রল করতেছেন তাদের কাছে অনুরোধ নিজর টাইমলাইন ঘাইটা আট দশ বছর আগের একটা ছবি বাইর কইরা নিজের খোমাটা দেইখা পরে মানুষরে নিয়া হাসাহাসি করেন। এভ্রিল যে স্ট্রাগল কইরা নিজেকে পরিবর্তন করছেন, নিজেকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসছেন তা অবশ্যই সন্মানের যোগ্য। তবে উনার এইই সন্মান আরও অনেক বাইড়া যাইত উনি যদি মিথ্যা এবং দুর্নীতির আশ্রয় না নিয়া সৎভাবে, আত্মসন্মানের সাথে নিজেকে আরও যোগ্য কইরা তুলতেন।

আর যারা সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা, নারীর পণ্যায়ন হাবিজাবি বলতেছেন, তাদের উদ্দ্যেশ্যে বলি, কমার্শিয়ালাইজেশনের এই যুগে কোন কোন জিনিস নিয়া বাণিজ্য হয় না? পুরুষের শরীর নিয়া যে কি পরিমাণ বাণিজ্য হয় সেইটা তো আন্ডারগার্মেন্টস আর বডিস্প্রের বিজ্ঞাপনগুলা দেখলেই বুঝা যায়। মা বাপের সামনে ভেরি ভেরি সেক্সির ঠ্যালায় টিভিই অফ কইরা দিতে হয়। পুরুষের শরীররে পণ্য করায় কোনও সমস্যা নাই, নারী শরীররে করলেই সমস্যা? কারণ নারী শরীর ট্যাবু? কারণ নারীর শরীর ঢেকে রাখার বস্তু, পবিত্র বস্তু এতে মশা মাছি বসলে পবিত্রতা নষ্ট হবে? নারীর শরীরে অহেতুক পবিত্রতা আরোপের বিপক্ষে আমি, তাই মনে করি পুরুষ যদি তার দৈহিক সৌন্দর্য দেখায়া পয়সা ইনকাম করতে পারে, নারীও পারে। এবং সুন্দর ফিজিক ও ফিটনেসও নারী পুরুষ নির্বিশেষে মানুষের যোগ্যতা বইলা মনে করি। সুন্দর শরীর মেন্টেইন করা যে কত কষ্ট, কত সাধনার সেইটা যখন জিমে যাইতাম, টের পাইতাম।

10432 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।