নারীবাদকে যারা প্রচলিত রাজনীতির মারপ্যাঁচের বাইরে থেকে বুঝতে চান এটি তাদের সম্পূর্ণ একটি খন্ডিত চিন্তা। এই যে মিয়ানমারের চলমান সহিংসতা হচ্ছে এখানে একটা বড় ধরণের নারী নির্যাতনের অপরাধ হচ্ছে। তার মধ্যেও অনেক ক্যাটাগরি রয়েছে। কেউ বার্মি আর্মিদের কাছে ধর্ষিত হচ্ছেন, কাউকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হচ্ছে। কেউ গর্ভের সন্তান নিয়ে ছুটছেন, কেউ সন্তান প্রসব করে ছুটছেন। এছাড়াও আরো অনেক ধরণের যন্ত্রণা পোহাচ্ছেন তারা। এই বিপুল সংখ্যক নারীকে নিরাপদ রাখার জন্য এখন নারীবাদের কাজ কি হতে পারে জাতিগত সহিংসতার বিরোধী হওয়া ছাড়া? আর সহিংসতার বিরোধীতা করতে হলে নারীবাদকে অবশ্যই কথা বলতে হচ্ছে একটি রাষ্ট্রের মিলিটারী এক্সপ্লয়টেশন নিয়ে। একটি যুদ্ধবাজ সিস্টেমের সাথে যা কিছু তার সাথে নারীবাদ এখন না লড়ে উপায় কি আসলে?
রোহিঙ্গাদের মত মিয়ানমারের আরেক জাতিগোষ্ঠী হল কারেন। এই কারেনদের নারীদের সংগঠনের প্রায় ৪৫ হাজার নারী কর্মী রয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়ে খুব স্পষ্ট করে বলছে -এটা স্রেফ একটি গণহত্যা। যারা গণহত্যা করছে তারা যুদ্ধাপরাধী। এদের বিচার দাবি করছে তারা। এমনকি যে সকল দেশ মিয়ানমারকে সামরিক সহযোগিতা প্রদান করছে এদের প্রতিও তারা দাবি জানিয়েছে যে তারা যেন সামরিক সাহায্য দ্রুত বন্ধ করে।
মহান আন্তর্জাতিকবাদ এখন নাই।টিকে আছে উগ্র জাতীয়তাবাদ। এই উগ্র জাতীয়তাবাদীরা এখন নেমেছে এথনো ন্যাশনালিজমকে দমন পীড়নে।তার হাতে এখন মার খাচ্ছে কুর্দিরা, দলিতরা, রোহিঙ্গারা, পাহাড়ীরা। মাইনরিটিকে নিয়ে চাঙ্গা হচ্ছে বিদ্ধেষের রাজনীতি। এখানে কি নারীবাদের বলার নাই? সভ্যতাবিদ্ধেষী প্রতিটা ক্ষেত্রে নারীবাদী রাজনীতি খুবই পরিপূরক একটি চেতনা।কুর্দি নারীরা যেভাবে লড়ে যাচ্ছে এটি শুধুই সমধিকারের লড়াই নয়, কারেন নারীরা যেভাবে দাবি জানাচ্ছে এসব আন্দোলন অবশ্যই নারীবাদের শক্তি কারণ সমাজে যুদ্ধবাজ অবস্থা মানেই নারীর উপর নির্যাতন। ইতহাসে এমন কোন যুদ্ধ নাই যেখানে নারীকে ধর্ষণ করা হয়নি।যুদ্ধ মানেই অনিবার্য নারী ধর্ষণ। ফলে চলমান যুদ্ধাবস্থার বিপরীতে নারীবাদ অবশ্যই রাজনীতি নিয়ে কথা বলবে।
নারীবাদের মনে রাখা দরকার যুদ্ধ সব সময়ই একটি পুরুষতান্ত্রিক ফেনোমেনা। নারীরা কোন কালেই যুদ্ধ সংঘটিত করেনি। যেসকল নারীরা যুদ্ধ করে বীর হয়েছেন এরা সবাই পুরুষতন্ত্রের পাটাতন রক্ষা করার জন্যই রণক্ষেত্রে নেমেছিলেন। সেজন্য যে রাজনীতি যুদ্ধাবস্থা টিকিয়ে রেখে নারীর উপর সীমাহীন নির্যাতন নামিয়ে আনে নারীবাদ সর্বাগ্রে দাঁড়িয়ে তার বিরুদ্ধে কথা বলবে।