কাবেরী গায়েন

অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ওসাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

যমের দুয়ারে দিলাম কাঁটা

[শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের প্রথম শহীদ রাজীব-এর হত্যাকান্ডের পরপর-ই লিখেছিলাম এই কবিতা। সময় কত দ্রুত ফুরায়ে যায়! তারও আগে ফুরায় শপথ। প্রতি বছর ঠিক সময়ে শপথটা মনে করিয়ে দেয় ফেসবুক। ]

এবং যেহেতু কোটি মোমের স্নিগ্ধ শিখায় শাহবাগে

আকাশ-গঙ্গা তৈরী হয়েছিল আগের সন্ধ্যায় , তারও

আগে তিন মিনিটের নিস্তব্ধতায় প্রতিবাদী মহাকাল

নির্মিত হয়েছিলো সারাদেশে উদ্বেল চেতনার রঙমশালে,

রাজীব ভেবেছিলো পথ নিরাপদ হয়েছে, কারণ আলোর

এমন চ্ছটার কাছে অন্ধকার দাঁড়াতেই পারে না।

 

বুক চিন চিন করছিলো বিকেল থেকেই,

সন্ধ্যার ঘোষণায় চিনচিনে ব্যথাটি প্রবল হয়েছিলো শুধু।

শাহবাগে সমবেত সব ভাই-বোনের সাথে বাঁধা আমার যে

হাত, সে হাত বুঝি টুঁটে গিয়েছিলো মূহুর্তের জন্য, অন্যমনস্কতায়;

ভাই, তাই আমি তোকে হারালাম ফের।

রাত ন’টা, পল্লবী, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৩।

 

আমার যে শিশুভাই ইছামতি নদীতে গিয়েছে ভেসে একাত্তরে,

ভাসিয়ে দিয়েছে নিরুপায় মা-বাবা, তার কোন দিন-ক্ষণ কেউ

লিখে রাখে নাই; তার জন্য কাঁদি নাই কোনদিন।

কিন্তু তোর জন্য আকূল কাঁদছি ভাই। কারণ আমার, আমাদের মূহুর্তের

অবসাদে, ক্লান্তিতে কিংবা আপোষের ইঙ্গিতে বিজয়ী থেকে আক্রান্ত হয়েছি

আমরা ফের; লক্ষ্যভেদ করেছে ঘাতক ।

যোদ্ধা কখনো যুদ্ধ অসমাপ্ত রেখে যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়ে না।

যোদ্ধা কখনো ভাইয়ের মৃতদেহ নিয়ে দর কষাকষি করে না।

যোদ্ধারা ফের ফিরে এসেছে ভাইয়ের রক্তের বদলা নেবে বলে।

 

শাহবাগ, তুমি ভাইয়ের কাছে ভাইকে রেখো

শাহবাগ, তুমি বোনের কাছে ভাইকে রেখো

শাহবাগ, তুমি বোনের কাছে বোনকে রেখো

শাহবাগ, তুমি ভাইয়ের কাছে বোনকে রেখো

 

রাজীবের রক্তস্রোত ফের লক্ষ আলোকবিন্দুর আকাশ-গঙ্গা

রাজীবের রক্তস্রোত নৈঃশব্দের বিদ্রোহী মহাকাল

রাজীবের রক্তস্রোত আমার কপালের রাজটীকা

রাজীব আমার ভাই, যাকে আমি দু’বার হারিয়েছি দুই মুক্তিযুদ্ধে।

এবার আমি যমের দুয়ারে দেবোই কাঁটা।

 

( ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩ )

2004 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।