জলি তালুকদার। তাঁর সাথে আমার প্রথম পরিচয় ১৯৯৯ সালে। ছাত্র ইউনিয়ন করার সময়। প্রথম দিন দেখেই আমার চোখে দেখার মধ্যে আশ্চর্য পরিবর্তন খেয়াল করি। তার পোশাক, কথা বলা, সহজ জীবন যাপনের সৌন্দর্য আমাকে আকৃষ্ট করেছিলো।
সেদিন দুপুরবেলা। মিটিং শেষে জলি অফার করলো, চলো ভাত খেয়ে আসি। এবং গৌরাঙ্গ বাজারের একটা হোটেলে। আমি ইতস্থত করছিলাম। অনেক মানুষের সামনে বসে কেমনে মুখ হা করে খাবো? মানুষের সামনে তো কখনো এভাবে খাই নি। সে হাসলো, বললেন, খাও তুমি কারো দিকে তাকিও না। তাহলে কে দেখলো বুঝবা না। তারপর থেকে দীর্ঘদিন আমি তার সাথে শ্লোগান ধরেছি। বক্তৃতা করেছি। লং মার্চ করেছি। সংগঠন করার বাইরেও আমাদের ব্যাক্তিগত বন্ধুত্ব অনেক ভালোবাসার।
তার কাজে কথায় সংগ্রামে ভীষন সততা দেখেছি। তালুকদার হলো আমার গোপন প্রণয়। ওর ত্যাগী জীবন আমাকে থমকেও দেয়। অতোকিছু কেনো আমি পারিনি! কারণ উনিষ বছর আগের কথাই সত্য জলি। তুমি বলেছিলে -বড়জোর তুমি ভালো ফ্যামিলি করতে পারবে, ভালো চাকরি পাবে। কিন্তু শত শত শ্রমিকের বন্ধু বা নেতা হতে পারবে না। যদিও এটা তখন ক্ষোভের কথা ছিলো। আমাকে উদ্বদ্ধ করতেই বলেছিলে। তবু আজ তা চরম সত্য।
জলি আজ শ্রমিক আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবরণ করেছে। মুক্তি চেয়েছেন তার সাথী কমরেডস আর অনুসারীরা। আমি একজন ত্যাগী নেতার জীবনকে নিয়েই ভাবছি। ইলা মিত্র কিংবা মনোরমা মাসিমার সংগ্রামী গল্প পড়েছি। কিন্তু তারই যোগ্য উত্তরসূবী যে আমারই বন্ধু জলি আজ সত্যি হয়ে উঠেছে! তার জন্য আমি গর্বিত। আমিও তার মুক্তি চাই। শোষণের শেকল ভাঙার গানের পাখির মুক্তি চাই। আমাদের জলি কখনো এতোটুকু আপোষ করে নি। লড়াইকে নিত্যকার করেছে। পোশাক কারখানার
মালিকের অন্যায় অচরণের প্রতিবাদে জেলে আছে। সেটাই তো হবার কথা!
রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে শোষণ বিদ্যমান তা জলিরা খোঁজে। তাই জেলখানায় তাদের চ্যালেঞ্জকে বন্দি করবেই।
আটজন কমিউনিষ্ট জেলে আছেন, গরীবের হক আদায় করতে গিয়ে। আমাদের জন্য এটা নতুন প্রেরণাও বটে। জাগুক মানুষ।
জলিকে বন্দী করেছে যে শ্রমিকের জন্য তারাই তার মুক্তি আনবে আমি বিশ্বাস করি।