"চলন্ত বাসে গার্মেন্টস শ্রমিক'কে গণ-ধর্ষণ"! "মোহাম্মদপুরে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের পরে হত্যা"! "বুড়িগঙ্গার তীরে গণ-ধর্ষণের শিকার দশম শ্রেনীর ছাত্রী অনামিকার লাশ উদ্বার! "শিবচরে ৫বছরের প্রথম শ্রেনীর শিশু ছাত্রী ধর্ষণ"! তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মসজিদে আরবি পড়তে গিয়ে ইমাম কর্তৃক ধর্ষিত। বলাৎকার করতে না দেওয়ায় সহপাঠিকে জবাই।..............
এমন সব গরম খবরে জাতি আজ নিমজ্জিত। প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে, এমন কোনো শ্রেণী নাই যেখানে ধর্ষণ হয়না। এই তালিকায় প্লে গ্রুপের বাচ্চাও বাদ পড়ছে না। আর কয়দিন পরে, হয়তো এমন নিউজ প্রকাশিত হলেও অবাক হবোনা যেখানে লেখা থাকবে... নবজাতকের উন্মুক্ত যোনী দেখে, কামাসক্ত পুরুষের লিঙ্গোত্থান! ধর্ষণকালে নবজাতকের মৃত্যু!!

রাজধানী সহ দেশের বিভিন্নস্থানে শিশু নির্যাতন এখন মিডিয়ার লোভনীয় গরম খাদ্য হয়ে উঠেছে। দেশের কোথায়ও শিশু নির্যাতন হলেই সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম সহ সকল গনমাধ্যম কিছুদিনের জন্য হলেও বেশ সরগরম হয়ে ওঠে। অনেকেই বিষয়টা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ভুঁড়ি ভুঁড়ি লাইক-কমেন্টস কামিয়ে নিতেও ভুল করেন না। গভীর রাতে টেলিভিশনগুলোতেও ধোয়া তোলা সেদ্ধ পাতার কাপে চুমুক দিয়ে তর্ক-বিতর্কের ঝড় ওঠে। জয়তু দুনিয়ার সকল মহান ভাবনাবিদদেরকে। মহামারীতে রুপ নেওয়া এই ধর্ষন ও শিশু নির্যাতনকে অনেকই তেতুল তত্বের প্রভাব বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছেন। এখানে ধর্মীয় মৌলবাদীদের শক্ত-পোক্ত ইন্ধন আছে বলে তারা মনে করে থাকেন। অনেকেই আবার আঙ্গুল তুলে জাত-গোত্র অথবা ধর্মকেও দোষারোপ করতে বাকি রাখেন না। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে মায়া কান্নাও করছেন গুটি কয়েক দল-গোষ্ঠী অথবা ব্যাক্তি। সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে আইনের ফাক গলে বেরিয়ে যাচ্ছে ধর্ষকেরা। আর এজন্যই জনগন দিনে দিনে আইনের প্রতি আস্থা হারিয়ে নিজ হাতে ধর্ষকের লিঙ্গ কাটা শুরু করে দিয়েছে। এটা নিয়ে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি বেশ গরম। বাংলা সিনেমার শেষ দৃশ্যে পুলিশের ডায়লগের মতো করেই বলতে চাই "খবরদার আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না"।
কামনা অথবা বাসনা। এটা প্রকৃতির একটা চিরন্তন পরিজাত বিষয়। পবিত্র তো বটেই। বয়সের শুরুতে প্রথম কামনার ঢেউয়ে অনেকেই; অনেক কিছু করে ফেলেন। অনেকে আবার শেষ বয়সে এসে ডাক্তার অথবা কবিরাজেরও শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। কেউ কেউ আবার তার 2stock ইঞ্জিনকে 4stock ইঞ্জিন বানাতে সান্ডার তেল,পান্ডার তেল অথবা জোঁকের তেল ব্যাবহার করে থাকেন। এতে করে 2stock ইঞ্জিন আদতেই 4stock হয় কিনা, সেটা পরের বিষয় হলেও ভয়ঙ্কর কথা হচ্ছে তার এই 4stock ইঞ্জিনটি কিন্তু ম্যানুয়াল ব্রেকেই চলছে। কথাগুলো হাস্যকর শোনালেও এটাই বাস্তবতা। আসলে আমাদের সকলের জন্য দরকার একটা স্থায়ী হাইড্রোলিক ব্রেক। ভাবছেন মজা করছি? না। মজা করছি না। স্পর্শকাতর এই বিষয়টা কোন রষিকতার উপকরন হতে পারে না।
ঘুনে ধরা এই সমাজের প্রতিটা মানুষেরই দরকার একটা শক্ত-পোক্ত; নিরপেক্ষ ও পরিচ্ছন্ন বিবেক। এখানে ইঞ্জিন হচ্ছে আপনার পরিজাত যৌনতার লালসা আর ব্রেক হচ্ছে আপনার পরিছন্ন বিবেক। প্রতিটা পরিছন্ন বিবেকই হচ্ছে হাইড্রোলিক ব্রেক। ইঞ্জিন আপনার, তাই 2stock ইঞ্জিনকে প্রয়োজনের তাগিদে আপনি 4stock ইঞ্জিন বানাবেন কিনা সেটা আপনার ব্যাপার। (যদিও বিষয়টা খুবই মামূলী)। কিন্তু সেই ইঞ্জিন আপনার বিবেকের কাছে কতটা সাঙ্ঘর্ষিক? সেটা ভেবে দেখা দরকার। আপানার হাইড্রোলিক ব্রেক আছে কিনা? আপানার কাছে আপানার মা-বোন অথবা ভাগ্নি-ভাতিজি-শ্যালিকা নিরাপদ কি না? এমন কি আপনার নিজ সন্তানও আপনার কাছে নিরাপদ কি না? অন্ধকারে অথবা নির্জনে আপনি সব যোনীকেই একান্ত নিজের উপভোগের উপকরন মনে করেন কি না? প্যান্টের ভেতর শার্ট গুজে পরা সফেদ ভদ্র মানুষের আড়ালে আপনি নিজের ভেতর পশু পালন করছেন কি না? এই সব কয়টি প্রশ্ন আপনি নিজেই নিজেকে করে দেখতে পারেন।
আসলে আমাদের দরকার একটা সুস্থ বিবেক। কৌশলে অযথা তেতুল তত্ব অথবা অন্য কোন গোষ্ঠীকে দোষারোপ করে দায় এড়িয়ে কোন লাভ হবেনা। একটা কথা মনে রাখা উচিত আমরা ধর্ষিত হচ্ছি অথবা ধর্ষন করছি, তাতে ধর্ম অথবা গোত্রের কিছু যায় আসে না।
আমি ধর্ষিত হই- যখন আমি শিশু অথবা নারী।
আমি ধর্ষণ করি- যখন আমি পুরুষ।
আমি ধর্ষণ করি- যখন আমি পুরুষ।
আমরা ধর্ষন করি- যখন আমরা সঙ্গবদ্ধ পুরুষ সমাজ।
ধর্ষন বলতে কি শুধু মাত্র একটা মানুষ আর একটা মানুষকে তার অনিচ্ছায় জবরদস্তি করে বস্ত্র খুলে নিপীড়ন করাকেই বোঝায়?
বিবেক আমাদের সকলেরই আছে কিন্তু যে বিবেক কট্টরপন্থি অথবা উদারপন্থী যা-ই হোক না কেন অপরাধের সাথে আপোষ করবে না। যে বিবেক পাপ করে আবার গভীর রাতে চোখের জ্বলে পাপমোচনের স্বপ্নে বিভোর থাকবে না। যে বিবেক গঙ্গায় পুণ্য স্নানের অপেক্ষাতে পাপে উৎসাহিত হবে না। যে বিবেক কখনই বিশ্বাস করবে না যে আল্লহ/ ভগবান/ ঈশ্বর/ বিধাতা অনেক ক্ষমাশীল, তাই পাপ করে তার কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি ক্ষমা করে দেবেন। তেমন একটা বিবেকই আক্ষরিক অর্থে হাইড্রোলিক ব্রেক।
আমরা কি চিৎকার করে বলতে পারব- আমি কখনও ধর্ষণ করিনি? আমাদের দ্বারা ধর্ষন সম্ভবও না? ধর্ষন বলতে কি শুধু মাত্র একটা মানুষ আর একটা মানুষকে তার অনিচ্ছায় জবরদস্তি করে বস্ত্র খুলে নিপীড়ন করাকেই বোঝায়? সম্পর্কের অজুহাতে আমার আপনার ঘরের ভেতরেই হয়তো নীরবে-নিভ্রিতে প্রতিদিন অনেকেই ধর্ষিত হচ্ছে। আর চার দেয়ালে্র মাঝে নীরবে গুমড়ে কেঁদে মরছে কিছু অসহায় মানুষ। পর্দার অন্তড়ালের এই সব অভিশপ্ত ঘটনাগুলো দিনের আলোতে আমাদের সামনে উঠে না এলেও, পরিস্থতির ফাক-ফোকর গলে মাঝে মাঝেই বিষয়গুলো সংবাদ মাধ্যমের লোভনীয় খোরাক হয়ে আমাদের সামনে চলে আসছে। সম্পৃক্ত অপরাধীরা সভ্য সমাজে বেশ নিন্দিত হচ্ছে। আর নির্যাতিতদের জন্য আমরা বরাদ্দ রাখছি জিব্বাহ দিয়ে করা দুঃখজনক চু-চু শব্দ। এদিকে আমরা যারা পর্দার ওপাশে ভদ্রতার লেবাসে; বেশ বহাল তবিয়তে কামসুখ উপভোগ করছি সেই আমরা'টা কারা?
তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। উন্মোচন করতে হবে তাদের ভদ্রতার মুখোশ। হোক সে -বাবা-ভাই-মামা-চাচা-ছেলে অথবা অন্য কেউ। আর এই দায়িত্ব সেই সব নারী ও শিশুকেই নিতে হবে। এই বিষয়ে নারী ও শিশু সহ সকলকে সচেতন করে তুলতে হবে। শুধুমাত্র লোক- লজ্জার ভয়ে যদি এই সমাজ়টাকে আমরা একটা পশু যুগের দিকে ঠেলে দেই, তার দায়ভার হয়তো আমরা এড়িয়ে যেতে পারব কিন্তু এর কুফল থেকে আমরা কেউই বাঁচতে পারবো না। দুঃখজনক হলেও চিরন্তন সত্য কথাটি হচ্ছে, এখনই রুখে না দাঁড়ালে, কোন একদিন এইসব নোংরা প্রথাই হয়ে উঠতে পারে এই সমাজের চারিত নিয়ম।