ঝর্ণা আক্তার

প্রকৃতি, মানুষের সরলতা আর ভালবাসেন মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলতে। মানুষের, যেখানে নারী পুরুষের ভেদাভেদ থাকবে না, থাকবে না কোন বৈষম্য, এমন দিনের স্বপ্ন দেখেন প্রতিনিয়ত।

জিরো ফিগারের চক্করে সব হারাচ্ছো মেয়ে

আমাদের মেয়েদেরকে আজকাল স্বাস্থ্য নিয়ে খুব চিন্তিত দেখা যায়। কোনোমতেই গায়ে চর্বি লাগানো যাবে না, হতে হবে একবারে ছিপছিপে। তখন খুব সুন্দর ছবি আসে, বন্ধুরা খুব প্রশংসা করে, কেউ কেউ ঈর্ষাও করে। যাদের বয়ফ্রেন্ড আছে, তারা ছিপছিপে গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে খুব গর্বিত! এইটুকু পাবার জন্য মেয়েরা না খেয়ে থাকছে, ইন্টারনেট ঘেটে নানারকম ডায়েট চার্ট বের করছে। কিন্তু ওইসব অখাদ্য খেতে না পেরে না খেয়ে থাকছে, একবেলা খাচ্ছে তো দুইবেলা খাচ্ছে না। চব্বিশঘণ্টায় একবেলা খাওয়ার ডায়েট চার্টের কথাও শুনেছি!

এইবার আসি আসল কথায়, না খেয়ে, না খেয়ে ছিপছিপে হচ্ছো, দারুণ দারুণ ঈর্ষনীয় ছবি ফেসবুকে দিয়ে খুব বাহবা কুড়াচ্ছো! এখানেই শেষ নয়, তুমি হারাচ্ছো তার চেয়ে অনেক বেশি। তুমি দিনে দিনে মেধাহীন হয়ে পড়বে, কর্মক্ষমতা হারাবে, চুল হারাবে, চেহারার লাবণ্য হারাবে, ত্রিশ আসতে না আসতেই বার্ধক্য তোমার দরজায় টোকা দেবে। তখনো হয়তো তোমাকে দেখে বুঝা যাবে না, তুমি ঠিকই বুঝবে। ক্যালসিয়াম এর ঘাটতিতে সর্বাঙ্গ ব্যথা করবে, চোখে খুব তাড়াতাড়িই ছানি পড়বে।

সুমনার যখন একুশ বৎসর, তখন সে দুই বাচ্চার মা। বার্থ কন্ট্রোল পিল খাওয়া শুরু করার পর হঠাৎ মুটিয়ে যায়, মুখে ব্রণ উঠে। খুব ভেঙে পড়ে সে। শুরু করে নিজের উপর নানান অত্যাচার। তার বাইরের কোনো জগৎ ছিল না, শুধু স্বামীর চোখে নিজেকে আকর্ষণীয়া দেখানোর জন্য রুটি আর ডাল খেয়ে দিনের পর দিন কাটিয়েছে। হ্যাঁ, পরবর্তী পনের বছর বেশ ছিপছিপে ছিলো সে, কিন্তু তার মধ্যেই নানান অসুখবিসুখ বাসা বেঁধেছে তার শরীরে।

এবার নিতুর কথায় আসি, ছোট বেলা থেকেই খুব চটপটে আর মেধাবী সে, দারুণ বুদ্ধিমতীও। না খুব হেলদি  সে ছিলো না, চমৎকার স্বাস্থ্য, সুন্দর চুল আর মেধার ঝলক দিয়ে বাবা মাকে আলোকিত করে রাখতো। এমন মেয়ের মা বাবা হতে পেরে তারা গর্বিত। সেই নিতু ক্লাস এইটে উঠার পর থেকে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিলো। দিনের পর দিন ভাত খায় না, শুধু টুকটাক ফলমূল খায়। এটাতে অতিষ্ঠ হয়ে ভাত খাওয়া শুরু করলেও তাতে চলে চরম অনিয়ম। অসহায় বাবা মার কিছুই করার থাকে না। নিতু তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছে, একবারে ছিপছিপে তরুণী এখন সে। এরই মধ্যে সে পড়াশোনা করার ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছে, অনার্সের রেজাল্ট ভালো না। নিতু এখনো একাহারী, চাকরি করছে, তবে নিজের সাথে যুদ্ধ করে করে টায়ার্ড। তার কর্মক্ষমতা ও পড়াশোনা করার ক্ষমতা নষ্ট করেছে একাহার, অনাহার। এই বয়সেই নানান উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম, প্রতিদিনই জ্বরজ্বর লাগা ও শরীর ব্যথা।

লোপার কথা বলি, খুব মেধাবী, একের পর এক বৃত্তি পেয়েছে, সরকারি মেডিকেলে পড়েছে। একটু মোটা ধাঁচের মেয়ে। মেডিকেলে পড়াকালীন জিম করে জিরো ফিগার করার চেষ্টা চালিয়েছে, তবে খাওয়া দাওয়া করতো ঠিকমতো। এতো এতো পড়ার চাপ! না খেয়ে থাকার উপায় ছিলো না, একটানে পাশ করে বের হয়েছে। কখনো কোথাও আটকায় নি। ইন্টার্নি শেষ করার পর শুরু করে নিজের উপর অত্যাচার। আজ এই ডায়েট তো কাল আরেক ডায়েট। জিরো ফিগারের চক্করে পড়ে, চাকরি তার কাছে হয়ে উঠে বিভীষিকাময়। আর পড়াশোনা সেতো আরও দুঃসাধ্য হয়ে উঠে। আর একটা মেধা টলমল অবস্থায় আছে।

এমনি আরও কত, কে জানে তা! আর কত মেয়ে, এখনো হুশ ফিরবে না? অন্যের চোখে সুন্দরী হওয়ার চেয়ে, সুস্থতা অনেক জরুরী। কর্মদক্ষতা অনেক জরুরী। কিছু প্রশংসা, কিছু মুগ্ধতা সাময়িক সুখ, চিরস্থায়ী নয়। তাইতো বলি, নিজের যত্ন নাও, দক্ষ আর কর্মক্ষম হয়ে উঠো।

6757 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।