সুষুপ্ত পাঠক

বাংলা অন্তর্জালে পরিচিত "সুষুপ্ত পাঠক" একজন সমাজ সচেতন অনলাইন একটিভিস্ট ও ব্লগার।

যে কোনো চিন্তাশীল মানুষ মাত্রই ধর্মে অবিশ্বাসী হতে বাধ্য

সোরেন কিয়ের্কেগার্ডের মতে, ‘খ্রিস্টান ধর্ম হচ্ছে একটি অবাস্তব অযৌক্তিক ধর্ম। তবে এই অবাস্তবতা ও অযৌক্তিকতার কারণে খ্রিস্টান ধর্মের কোনো ক্ষতি হয় নি বরং লাভ হয়েছে, কারণ যে ধর্ম যত বেশি অযৌক্তিক অবাস্তব সে ধর্মে তত বেশি বিশ্বাস করা সহজ’।…

ভাববেন না কিয়ের্কেগার্ড নাস্তিক ছিলেন। তিনি ছিলেন আস্তিক দার্শনিক যিনি নিজেকে একজন ঈশ্বরে বিশ্বাসী মানুষ বলে তার লেখায় দর্শনকে তুলে ধরতেন। এমন কি নিজেকে খ্রিস্টান বলেও দাবী করতেন। কিন্তু প্রচলিত স্বর্গ নরক পরকাল কর্মফল ইত্যাদি সাধারণ প্রচলিত খ্রিস্ট ধর্মীয় মতামতকে হাস্যকর মনে করতেন। কিয়ের্কেগার্ডের ঈশ্বর প্রচলিত ঈশ্বর থেকে দার্শনিকভাবে সম্পূর্ণভাবেই ভিন্ন। এতটাই ভিন্ন যে সেরকম ঈশ্বর আস্তিকতা নাস্তিকতার যে প্রচলিত বিরোধ ঘটায় তার সেরকম কোনো অবস্থান নেই।

নাস্তিকতা যে আসলে প্রচলিত ধর্মগুলোর ঈশ্বর আর তাদের কথিত প্রতিনিধি দাবীদার প্রতারকদের বিরুদ্ধে যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক অবস্থান সেটাও এ থেকে প্রমাণিত হয়। কেননা নাস্তিক দার্শনিক ও সাহিত্যিক জঁ পল সার্ত্র এবং আলবেয়ার কাম্যু তাদের দার্শনিক গুরু হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন আস্তিক দার্শনিক কিয়ের্কেগার্ডকে। কিয়ের্কেগার্ডের ‘আস্তিক্যবাদ’ তাদের নাস্তিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠে নি। তাই দেখা যাচ্ছে উচ্চ মাত্রার আস্তিক দার্শনিকদের সঙ্গে নাস্তিক দার্শনিকদের ‘ঈশ্বর’ সম্পর্কিত বিতর্ক কোনোভাবেই আল্লাহ ভগবান গড ইত্যাদি কাউকে প্রমাণিত করে না। কারণ ঐ ‘আস্তিক’ দার্শনিকরা প্রচলিত আল্লাহ ভগবান গডকে হাস্যকর ছেলেমানুষী কল্পনা বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।

প্রচলিত ঈশ্বরবাদীরা এক্ষেত্রে এইসব ‘আস্তিক’ জ্ঞানী ব্যক্তিদের বক্তব্যকে প্রতারণা করে সাধারণ মানুষদের বুঝায় অনেক জ্ঞানী ব্যক্তিরা তাদের ঈশ্বরকে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। আর আজকালকার নাস্তিকরা দুই পাতা পড়ে নিজেরে নাস্তিক জাহির করে বলে আল্লাহ নাই…।

প্রকৃত পক্ষে কিয়ের্কেগার্ড প্রচলিত ধর্ম ও ঈশ্বরের কাছে একজন নাস্তিকই ছিলেন এবং বস্তুত তিনি তাই ছিলেন কারণ তিনি চার্চের বর্ণিত ঈশ্বরকে নাকচ করে দিয়েছিলেন। কোনো চিন্তাশীল মানুষ মাত্রই ধর্মে অবিশ্বাসী হতে বাধ্য। কারণ যুক্তি ও কমনসেন্সই আমাদের চারপাশের ঈশ্বরের সর্বশক্তিমানের হাস্যকরতা ধরা পড়ার কথা। কিন্তু চতুর ধার্মীক কখনো দার্শনিক, কখনো বিজ্ঞানীদের ‘ঈশ্বর’ কনসেপ্টকে তাদের আবু লাহাবের সঙ্গে যুদ্ধ করা আল্লাহকে বলে চালিয়ে দেয়…।

ঈশ্বরের উচ্চমার্গীয় দার্শনিক অবস্থান নিয়ে আলাপ বা এই ঘরানার আস্তিক নাস্তিক দার্শনিক অবস্থান কখনই নাস্তিকতায় বিরোধ নয়। কারণ এই স্তরের আস্তিক নাস্তিক দুই-ই প্রচলিত ধর্মের কাছে নাস্তিক। কিন্তু এখানেও প্রচলিত ধর্মবাদীদের একটা প্রতারণা ধরা পড়ে। উচ্চমার্গীয় আস্তিক নাস্তিক দার্শনিক অবস্থানের আস্তিক দার্শনিকরা যেসব যুক্তি তাদের নাস্তিক দার্শনিক বন্ধুদের পরাস্ত করতে ব্যবহার করতেন তার দুই একটা কোট করে দেখানোর চেষ্টা করে নাস্তিকতা কতটা ‘অযৌক্তিক’!

তাই নাস্তিকতার মূল কাজই হলো প্রচলিত ধর্মগুলোকে আঘাত করা। নবী অবতার বলে দাবীদার ফ্রডগুলোর বাণী ও কাজগুলোকে তুলে ধরে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা। এটাই নাস্তিকতা। নাস্তিকতা মানেই প্রচলিত ধর্মগুলোর অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার এক ক্লান্তহীন আদর্শ।

2525 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।