জাকিয়া শিশির

পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মী

নারীর যোগ্যতা অযোগ্যতা

নারী কতটা যোগ্য বা অযোগ্য এ সমাজ সংসারে তা নিয়ে চিন্তা আলোচনা সমালোচনার শেষ নেই। স্বভাবতই ভাবনায় আসে কেনো এত চিন্তা, আলোচনা বা সমালোচনা। মূলত, এসব কিছুর পেছনে রয়েছে মানুষের মূল্যবোধ।

একটি জাতির অর্ধাংশই নারী। সেই অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে অচল করে রাখার চেষ্টা আর এক পায়ে হাঁটার চেষ্টা করা একই কথা। প্রকৃতপক্ষে নারীরা পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে বেড়ে ওঠার সুযোগ পান না। নারীর সব ধরনের অমর্যাদা, অধস্তনতা, নির্যাতন ও যাবতীয় দুরাবস্থার জন্য পিতৃতান্ত্রিক মনোভাবই যে দায়ী তা সুশিক্ষিত মানুষ মাত্রেই অস্বীকার করার উপায় নেই। এখনো নারীকে একজন মানুষ হিসেবে মর্যাদা দিতে এই সমাজ অপারগ।

নারীকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে মর্যাদা দিতে অনেকেই কুণ্ঠা বোধ করেন। নারীর যে চিত্র সমাজ ও পরিবারের মর্মমূলে প্রোথিত সেখান থেকে বের হয়ে আসা, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনা খুব কঠিন তবে অসাধ্য নয়। কর্মক্ষেত্র, পরিবার ও সমাজের প্রতিটা স্তরেই পুরুষতান্ত্রিক চিন্তার মানুষ বিদ্যমান। যেহেতু উপার্জন করা পুরুষের কাজ বলে মনে করা হয় তাই তার সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও জীবিকার যুদ্ধক্ষেত্রে মেয়েরা দ্বিতীয় সারির সৈনিকের মর্যাদা পায়। সমাজ ও পারিবারের নিরুৎসাহ নারীকে দুর্বল ও পরনির্ভরশীল করে তুলতে সহায়তা করে। একজন বিবাহিত  নারী কাজে যোগ দেবেন কি দেবেন, না  দিলেও কি ধরনের কাজে যোগ দেবেন তা ঠিক করে দেয় তার বাবা, ভাই, স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকজন, যা একজন নারীকে পুরুষের অধীনস্ত হিসেবেই স্বীকৃতি দেয়ার নামান্তর। ডিভোর্স হয়ে যাওয়া, কুমারী কিংবা বিধবা কোনো নারী যখন সংসার জীবনে সন্তানদের মানুষ করে পেশাগত জীবনে সাফল্য অর্জন করে দৃপ্ত পায়ে হেঁটে যায়, তখন কি বলা যায় যে সে নারী অযোগ্য?

পুরুষতান্ত্রিকতার চরম উৎকর্ষের মাঝেও নারীরা তাদের মতো করে এগিয়ে যাচ্ছে। যেসব নারী পিছিয়ে কিংবা যোগ্যতা ও মেধা থাকার পরও উঠে আসতে পারেন নি খেয়াল করলে দেখা যায় তাদের চলার পথ অনেক বেশি এবড়ো থেবড়ো অথবা তাদেরকে নানা কৌশলে পেছন থেকে টেনে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা তো অবশ্যই দায়ী।

নারীর যথেষ্ট যোগ্যতা ও মেধা রয়েছ। নানা ধরনের প্রতিকূলতা এবং অসহযোগিতার কারণে নারীরা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন না। সমাজে নারী-পুরুষের অবদান কারোর চেয়ে কারো কম নয়। রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিকতা, দর্শন, সাহিত্য, খেলাধুলা কোনো

 

কিছুতেই কি নারী এখন আর পিছিয়ে আছে?

আর এটা নারী তার নিজের যোগ্যতা দিয়েই অর্জন করেছে। নারী তার মেধা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, আদর্শবোধ, যোগ্যতা  দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। একজন নারীকে বলা হয়ে থাকে দশভূজা। দুটি হাত নিয়ে একই সাথে দশটি কাজ সম্পন্ন করে। আবার বিসর্জনও তাকেই দিতে হয়। এমনকি সহনশীলতা, ধৈর্য, আত্মত্যাগ সবকিছুকে একসাথে নিয়েও চলতে হয় । সে তার নিজস্ব প্রতিভাতেই উদ্ভাসিত হয়েছে।

এ দেশের সমাজ ব্যবস্থায় এখনো যদি একজন নারীকে তার প্রাপ্যসম্মানটুকুই না দেয়া যায়, তাহলে নারী-পুরুষের এই ভেদাভেদ কখনো দূর হবে না। একজন নারীকে শুধু নারী হিসেবে নয় বরং একজন মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে । শ্রদ্ধা করতে হবে। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে নারীর প্রতি।

সভা-সেমিনারে নারীর যোগ্যতা নিয়ে অনেক কথা হয়। নারীর জন্য অনেক কর্মসূচি নেয়া হয়। কিন্তু দিন শেষে ঘরে ওই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে। তাই নারী ও পুরুষের মধ্যে জিইয়ে থাকা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে নারীর যোগ্যতা অযোগ্যতা নিয়ে কথা বলার আগে। সমান অধিকারের অর্থ হচ্ছে যোগ্যতা অনুযায়ী অধিকার বা যোগ্যাধিকার।

1738 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।