ধরে নেয়া যাক , পোশাকের কারণেই ধর্ষণ হয়। আর এ কথা মেনে না নিলে ইসলাম অবমাননা হয়। তাহলে কি এই দাড়ালো, ইসলাম বেপর্দা নারীকে ধর্ষণ করা সমর্থন করে? রাস্তাঘাটে বেপর্দা নারীকে ধর্ষণ করে ফেললে, যৌন হেনস্থা করলে ইসলাম কি তাতে বাহবা দেয়? এতে কি আল্লা ধর্ষক কিংবা যৌন নিপীড়ক পুরুষকে বেহেস্ত দিয়ে দেবেন? না দিলে মুসলমান পুরুষগণ নারীর পোশাকের বিধান নিয়ে এত লাফালাফি করছেন কেনো?
একজন নারী যদি বেপর্দা হয়ে রাস্তায় বের হয়; বোরকার কথা বাদ দেন, একদম উলঙ্গ হয়েও বের হয় তাতে তো যা পাপ হবার সেই নারীর হবে। সেই পাপের ভার তো তাকেই তো বহন করতে হবে। ইসলমাই তো দাবি করে, কেয়ামতের দিন কেউ কারও পাশে দাঁড়াবে না, না দাঁড়াবে স্বামী স্ত্রীর পাশে, স্ত্রী স্বামীর পাশে, পিতা সন্তানের পাশে, সন্তার পিতার পাশে। সকলেই না কি ইয়া নফসী ইয়া নফসী জপতে থাকবে। বেপর্দা নারীর পাপের ভার তো কোনো মুসলমান পুরুষের গাঁয়ে বর্তাবে না। তাহলে, মুসলমান পুরুষেরা নারী পোশাকের পেছনে লেগেছে কেনো? তাঁরা কেনো, বেলাজ, বেহায়া, বেপর্দা নারীকে, পাপীষ্ঠাকে পোশাক পড়ার ছবক দেবে? ছবক না শুনলে ধর্ষণ করে ফেলবে? ধর্ষণের বৈধতা দেবে? ইসলাম কি তবে একটি ধর্ষক উৎপাদক ধর্মের নাম?
ইসলাম যদি ধর্ষণকে সমর্থন না করে, তাহলে বাঙলার মুসলমাগণ মোশারফ করীমের কথায় ক্ষুব্ধ কেনো? মোশারফ করীম ধর্ষণের সাথে পোশাকের সম্পর্ক নেই এ কথাটাই তো বলতে চেয়েছেন। আর এর পক্ষে বলতে গিয়ে বোরকার প্রসঙ্গ এনেছেন। উনি দাবী করেছেন বোরকা পরেও নারী পুরুষের লালসা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। তাঁর এই ব্যবহার করা এই "বোরকা" শব্দের ব্যবহার হয়েছে যত কাল। ইসলামের অবমাননা হয়ে গেছে। মোশারফ করীম হয়ে গেছেন ইহুদীদের দালাল, বাংলার মুসলমানগণ হয়ে গেছেন ক্ষিপ্ত। এমন ক্ষিপ্ত যে তাঁকে শেষ পর্যন্ত মাফ চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিতে হলো।
অথচ, বোরকা নিয়ে তাঁর কথাটি কোনো অংশেই ভুল নয়। ইসলামের বিধান পর্দা কিংবা বোরকা নারীকে সুরক্ষা দিতে পারছে না কোনভাবেই। দেশের সবচেয়ে আলোচিত ধর্ষণকাণ্ড "তনু ধর্ষণ" ঘটনায় তনু ছিলো আপাদমস্তক বোরকা পড়া পর্দানশীন। ইসলামের তথাকথিত বোরকা, পর্দা তনুকে রক্ষা করতে পারে নি। তাহলে, ইসলামের বিধান কতটুকু সঠিক? আর সঠিক না হলে, মুসলমানরা খেপল কেনো? শুধু ইসলামী শব্দ "বোরকা" ব্যবহারের কারণে?
মডারেট মুসলমানগণ ইসলামের অবমাননা করতে মানা করেন। যদিও তারাও ইসলামের অনেক বিধানকে সেকেলে বলে উড়িয়ে দেন অথবা বলেন প্রকৃত ইসলামে এসব নেই। তারা সরাসরি বোরকাকে সমর্থন না করলেও তারা শালীন পোশাকের কথা বলেন। ইসলাম না কি বোরকা নয়, পর্দা কিংবা শুধু শালীন পোশাকের কথা বলেছে। যদি ধরেও নিই, শালীন পোশাকের কথাই বলেছে। তাহলেও কি ইসলামের বিধান নারীকে সুরক্ষা দিতে পারছে? দেশের হাজার হাজার ধর্ষণের শিকার নারী কি অশালীন পোশাকে ছিলো?
পোশাকের বিষয় বাদ দিলেও ইসলামের অসংখ্য হাদীস আছে যেখানে নারীকে শয়তানের সাথে তুলনা করা হয়েছে, দাবী করা হয়েছে শয়তান নারীর রূপ ধরে আসে। পরনারীর প্রতি মোহাম্মদের সম্মান এতটুকুই ছিলো যে হাদীসে আছে, যদি কোনো নারীকে দেখে কামোত্তেজনা আসে তাহলে যেন পুরুষটি তাঁর স্ত্রীর কাছে চলে যায়। আর স্ত্রীর প্রতি নির্দেশনা হলো সে যেন স্বামীর লালসা মেটানোর জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকে, এমনকি স্ত্রীটি তখন রান্নায় ব্যস্ত থাকলেও। অথচ, বর্তমান সভ্য বিশ্বে যৌনতার জন্য দু’জনের সম্মতি থাকাটা ব্যক্তি অধিকার। স্ত্রীর অমতেও সংগমে লিপ্ত হওয়াটাও আধুনিক সমাজে ধর্ষণ বলে স্বীকৃত। বাদ দিলাম পরনারী দেখলে যে ব্যক্তির কামোত্তেজনা চলে আসে, সেই মহামানবের লালসাকে প্রশ্নবিদ্ধ করাকে। কিন্তু স্ত্রীকে, একজন নারীকে কেনো সবসময় স্বামীর লালসা মেটানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে? নইলে তাঁকে ধর্ষিত হতে হবে? অথচ এটাই ইসলামের বিধান।
আসল কথা হলো, মডারেট বলেন আর গোঁড়া মুসলমানই বলেন সব শালিকের এক রা। সকলেই ইসলামী বিধানের কথা বলতে চান, আর নারীর জন্য সে বিধান হলো, শালীন পোশাক পরো, পর্দা করো, বোরকা পরো। ইসলাম একটি ধর্ষণপ্রবণ পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম কি না!