হ্যাঁ, আমি একটা সস্তা নারীবাদী কারণ দেখেছি ছোটবেলা থেকে কেবল মাত্র আমার লৈঙ্গিক পরিচয় মেয়ে হওয়ার জন্য আমি বৈষম্যের শিকার।
হ্যাঁ, আমি একটা সস্তা নারীবাদী কারণ ছোটবেলায় আমি যখন বাড়িওয়ালার ছেলের দ্বারা এব্যিউজ হয়ে মায়ের কাছে এসে বলেছি মা মুখ চেঁপে ধরে বলছে চুপ, চুপ, এসব কথা আর কাউকে বলবিনা, তুই আর বাসা থেকে বের হবি না, সেদিন থেকে আমার সকল প্রকার খেলা-ধুলা বন্ধ করে দেওয়া হলো।
হ্যাঁ, আমি একটা সস্তা নারীবাদী কারণ যেদিন আমি বড় ভাই দ্বারা মলেস্ট হয়ে মায়ের কাছে বললাম মা আমাকে সরু চোখে বলে দিলো দোষ আমারই আমি কেনো ওড়না না পরে তার সামনে যাই।
হ্যাঁ আমি একটা সস্তা নারীবাদী কারন আমি দেখে আসছি প্রতিটা ঘরে মেয়েদের ছোটবেলা থেকে এই শিক্ষা দিয়ে বড় করা হয়, তুমি মেয়ে, তুমি আস্তে কথা বলো, তুমি মেয়ে, তোমাকে রান্না শিখে পরের বাড়িতে যেতে হবে, তুমি ধৈর্য্যশীল হও নাহলে সংসার করতে পারবে না পুরুষের সাথে, সংসারের শান্তির জন্য তোমাকেই সব সময় সেক্রিফাইজ করতে হবে, বিয়ের পর স্বামী না চাইলে চাকরী করতে পারবে না, স্বামী পর্দা করতে বললে করতে হবে, তোমার জন্ম হয়েছে পরের ঘর করার জন্য।
হ্যাঁ, আমি সস্তা নারীবাদী কারণ আমি দেখেছি প্রতিবেশী নীলুর গায়ের রং কালো হওয়ার জন্য তার পরিবারের লোক এবং রিলেটিভিরা বলতো এই কালকি মেয়ের বিয়ে কিভাবে দিবে! তার কালো গায়ের রং সাদা করার জন্য হাজার রকম প্রসাধনী আনা হয় শুধু মাত্র তার বিয়ে হবে না এটা ভেবে।
হ্যাঁ, আমি সস্তা নারীবাদী কারণ আমি দেখি আমার ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায় নবম শ্রেণীতেই, বাবা বলে ভালে ঘর পাইছি ছেলের টাকা আছে, তাছাড়া মেয়ে মানুষের এতো পড়ালেখার কী দরকার!
হ্যাঁ আমি সস্তা নারীবাদী কারণ আমি দেখি আমার বান্ধবীর স্বামী তাকে শারীরিক মানসিক নির্যাতন করলেও সে ডিভোর্স দিয়ে বের হতে পারে না নিজে সাবলম্বি নয় বলে। বের হয়ে কোথায় যাবে? বাপের বাড়ির লোক বলবে তুই নিজে ভালো না, পুরুষ মানুষের রাগ একটু বেশীই থাকে, নারীদের মানিয়ে নিতে হয়।
হ্যাঁ, আমি সস্তা নারীবাদী কারণ আমি দেখি এই সমাজে মেয়েদের শিক্ষাগত, পেশাগত জীবনের চেয়েও মাতৃত্বকে মহান করে দেখা হয়, কোনো মেয়ে মা না হলে তার জীবন ব্যর্থ বলা হয়, বন্ধ্যা নারীকে অপয়া বলা হয়।
হ্যাঁ, আমি সস্তা নারীবাদী কারণ আমি দেখি এই সমাজে মেয়েরা উপার্জন করলেও তার নিজের টাকা নিজে ব্যয় করার মালিক সে না, মেয়েরা নিজেদের সুবিধাজনক পোশাক পরা বা খোলার মালিক না। তাকে ড্রেস কোড দেওয়া হয় সে কী গায়ে চড়াবে তার। মেয়েরা নিজের জীবনের সকল সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার মালিক না।
কোনো মেয়ে যদি সমাজের এইসব নিয়ম না মানে, নিজের জীবন নিজের মতন যাপন করতে চায় সে সমাজের চোখে হয়, নষ্টা, উগ্র, বেশ্যা মেয়ে মানুষ। এইসব নষ্টা, উগ্র এবং বেশ্যা মেয়ে মানুষদের মুক্তির জন্য আমি সস্তা নারীবাদী।