আকর দে পিনাক

স্বেচ্ছা রক্তদাতা, ডাটা এনালিস্ট

সৌহার্দ্যপূর্ণ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ি

আমি চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত সীতাকুন্ড পৌরসদরের মহাদেবপুর গ্রামে জন্মেছি। আমার আশেপাশের মানুষেরা আমাকে স্বেচ্ছা রক্তসেবী/রক্তদাতা হিসেবে জানেন। আর এই স্বেচ্ছা রক্তদানের আগ্রহ আসে আমার স্বর্গীয় বাবার কাছ থেকে কারণ তিনি নিজেও অসংখ্য বার স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছিলেন এবং আমি এই পর্যন্ত ১৩বার স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছি।

রক্তদান করতে গিয়ে কখনও জানতে চাইনি আমি কোন ধর্মের বা কোন বর্ণের বা কোন গৌত্রের ব্যক্তিকে রক্ত প্রদান করছি, শুধু জানতে চাইতাম কি সমস্যা/রোগের জন্য উনার রক্ত প্রয়োজন হচ্ছে কারণ আমিতো মানব সন্তানকেই রক্ত দিচ্ছি উনি কোন ঈশ্বরের আরাধনা করেন সেটাতো গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং আনন্দ লাগতো আমার সামান্য এক ব্যাগ রক্ত একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে অংশীদার হচ্ছে এই ভেবে।

২০১৫ সালের রমজান মাসে রক্তদানের একটি অভিজ্ঞতা হয়েছিল। জুয়েল ভাই (সীতাকুন্ডের স্থানীয় ফুটবলার) রক্তদানের আগের দিন সন্ধ্যায় ফোন করে বললেন ক্যান্সার আক্রান্ত উনার এক দূর সম্পর্কের আন্টিকে রক্ত দিতে হবে আমিও সম্মত হয়। পরের দিন দুপুর ১২টায় ক্লাস শেষ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল গেলাম রক্ত দিতে, আংকেল(অসুস্থ আন্টির স্বামী) মেডিকেলের গোল চত্বর থেকে নিয়ে গেলেন আমাকে রক্ত সংগ্রহের জন্য। তারপর বললেন আন্টি নাকি আমাকে একটু দেখতে চেয়েছেন তাই গেলাম। যাওয়ার পরে বসতে দিলেন উনার সিটের পাশেই তার একটু পরেই বেলকনি থেকে মধ্য বয়স্কা আন্টি এসে বসলেন আমার সামনে আর আংকেলকে ফল খেতে দিতে বললেন নিষেধ করা স্বত্তেও উনি ব্যস্ত হয়ে গেলেন।

এরপরের অভিজ্ঞতার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না, আন্টি আমার হাত ধরতে চাইলেন আর আমি হ্যাঁ বলার সাথে সাথে হাত ধরে কান্না করতে শুরু করে দিলেন। কিছুক্ষণ পর দম নিয়ে বললেন উনার ছেলে নেই আর রমজান মাস বলে কোনো নিকটাত্মীয় নাকি রোজার কারণে রক্ত দিতে সম্মত হয়নি! সেদিন আমার চোখেও অশ্রুর সঞ্চার হয়েছিল তবে সেটা আনন্দের আর নিজের ভেতরেই কেমন যেন একটা গর্ববোধ হচ্ছিল। আমি আন্টিকে বলেছিলাম আমার আর উনার রক্তের গ্রুপ একই তাই আমি এসেছি নইলে অন্য কেউ অবশ্যই এগিয়ে আসতো কারণ 'মানুষ মানুষের জন্য'।

তাই সকলের কাছে অনুরোধ করতে চাই আসুন আগে আমরা মানবিকতা সম্পন্ন মানুষ হই, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রকার সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস রুখে দাঁড়ায় আর ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ি।

(Published as part of Social Media Campaign #BeHumaneFirst to promote Secularism in Bangladesh)

3777 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।