আলহাজ্ব মুফতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ

অনলাইন একটিভিস্ট।

গৃহপালিত বধূ ও পুরুষাল্লাহ...

অতি চালাক ধার্মিক পুরুষতান্ত্রিকেরা সহানুভূতিপূর্ণ সম্মান দেখিয়ে ও দেবীত্ব প্রয়োগ করে নতুন তাকিয়া নীতি অবলম্বন করছে। যখনি নারীরা মুক্তির জন্য মরিয়া হয়ে যায় তখনি তাদেরকে 'ধরিয়া বাঁধিয়া' পুনরায় খাঁচায় পোরার জন্য নয়া স্লোগান তোলে চালাক পুরুষরা। চালাক পুরুষদের সবচেয়ে জঘন্য আবিষ্কার হচ্ছে ধর্ম। যখন ধর্মের অসঙ্গতি সমূহ দিবালোকের ন্যায় প্রতিভাত হচ্ছে তখন এরা শ্যাম এবং কুল উভয়টা রক্ষার জন্য নয়া কারবার শুরু করেছে।

এই চালাক পুরুষগণ তাদের নব্য টেকনিক ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ প্রয়োগ করে কিছুকালের জন্য ঈশ্বর এবং আল্লাহকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে, সাথে কতিপয় দাসত্বকামী গৃহপালিত নারীও জুটেছে। যে ঈশ্বরের মৃত্যু হওয়ার কথা ছিলো উনবিংশ শতাব্দীতে সে ঈশ্বর বিংশ শতাব্দীতেও দিব্যি বেঁচেবর্তে আছে!

আল্লাহ, ভগবান ও ঈশ্বরের চেলারা মুক্তচিন্তকদের মতোই নারীকে মানুষ ভাবার জিগির তুলছে, আদতে এটা একটা নয়া দাবার ঘুটি।

এই দাবার ঘুটি চেলে গৃহপালিত পশুর মতো গৃহপালিত বধূ তথা ‘গৃহবধূ’ কালচার বহাল রাখা সম্ভবপর হয়েছে। পুকুরে মাছ সংরক্ষণের মতো নারীকেও সংরক্ষণ করার কোশেশ করা হয়েছে। হালদা নদীতে মাছ সংরক্ষণের মতো নারীকেও মাঝেমধ্যে একটু বড় পরিসরে সংরক্ষণ করার প্রয়াস পেয়েছে পুরুষগণ।

সংসদে সংরক্ষিত, যানবাহনে সংরক্ষিত, চাকরিতে সংরক্ষিত করে পুরুষরা মহাখুশিতে তবলা বাজাচ্ছে। সব সংরক্ষণ কিন্তু দশ পার্সেন্ট ও কুড়ি পার্সেন্টে গিয়ে থেমেছে। নারী কি মানবজাতির দশ পার্সেন্ট? নারী কি মানবজাতির কুড়ি পার্সেন্ট? সংরক্ষিত আসনের প্রতিনিধি কি আদতে স্বাধীন? যার নামেই সংরক্ষণ তার কাজে তো সংরক্ষণ থাকবেই!

নারীর জবরদস্তির বোরকা-মুক্তি হয়েছে, কিন্তু এর বদলে লিপস্টিক মেখে অনুষ্ঠানে গিয়ে ‘ভাবি’ হওয়ার মর্যাদা অর্জিত হয়েছে। এই লিপস্টিক-সর্বস্ব পুরুষের কাঁধে ঝুলে থাকা সংরক্ষিত নারী বুঝতে পারলো, সে একটি সুস্বাদু খাবার, কিন্তু খাবারটা স্বামী নামক প্রভূর জন্যই তৈরিকৃত।

নব্য পুরুষদের মিশন সাকসেসফুল হয়ে গেল -এখন আর ‘খাদ্যকে’ প্যাকেটজাত করার জন্য জবরদস্তি করতে হয় না, খাদ্য এখন নিজেই প্যাকেটজাত হয়ে যাচ্ছে! তীব্র গরমেও সারা শরীরে ভারি পোশাক, ভারি অলংকার, ভারি মেকআপ ভারি চুল, সর্বোপরি ভারি প্যাকেট গায়ে চড়িয়ে প্রমাণ করতে হয়, ‘সম্মানিত সাহেবের সে-ই একমাত্র রাতের খাবার!’

জুনিয়র অফিস কলিগরা অফিসে বসে ফিসফিস করে, স্যারের ‘খাবারটা’ কি সুস্বাদু, কি টেস্টি! সাহেব খুশি, বেগমও খুশি। সাহেব খুশি, কারণ তিনি সুস্বাদু খাবারের মালিক। বেগম খুশি, কারণ তিনি সাহেবের সুস্বাদু খাবার।  গৃহপালিত কুকুর, বেড়াল, গরু, ছাগলকে সবাই যত্ন করে। ধর্মও কিন্তু এই গৃহপালিত পশুকে যত্ন করার আদেশ দিয়েছে, পাশাপাশি গৃহপালিত বধূকে বিশেষ যত্নআত্তি করার নির্দেশ দিয়েছে।

সাহেবরা বুঝতে পেরেছেন, দিনশেষে এ খাবারটি তিনি ই তো খাবেন। খাবারটিও গর্বিণী হয়, সাহেববাবু সারাদিন খেটেখুটে রাত্রিবেলা ঘেটেঘুটে শুধু তাকেই খাবে! খাবার কিন্তু মাল্টিরোল হয় না, তবে খাদক হয়। সুতরাং খাদক একটু আধটু অন্য খাবারে মুখ দিলেও খাদ্যের কোনো অধিকার নেই ভিন্ন খাদকের কাছে যাওয়ার!

যুগ যুগ ধরে এভাবেই খাদক ও খাদ্যে সংজ্ঞায়িত হয়ে আসছে মানবজাতির দুটি অংশ। আর এজন্যই কোনো পুরুষ যদি বলে “গেলো মাসে আমি কুড়িটা মেয়েকে বিছানায় তুলেছি” তাহলে সবাই বলে - মারহাবা, মারহাবা! এতগুলা খাবার খেয়েছো তুমি?

পক্ষান্তরে কোনো নারী যদি একই কথা বলে তখন তাকে মারহাবা তো বলেই না, বরং জগতের সব দোষের বোঝা তার কাঁধে চাপিয়ে উল্লম্ফন করে। ব্রেক দ্যা সাইলেন্স এবং মি টুসহ কিছু বিদ্রোহের লক্ষণ মাঝেমধ্যেই মাথাচাড়া দেয়। ধূর্ত পুরুষেশ্বরগণ তড়িৎ কৌশল আবিষ্কার করে ফেলে, দ্রোহের আগুন নিভিয়ে ফেলে।

নারীকে খাদ্য হওয়ার প্রস্তাব দেয়াটা পুরুষ বাহাদুরের বাহাদুরি। এটাকে প্রত্যাখ্যান করলে পুরুষত্ব অপমানিত হয়। প্রত্যাখ্যানের ‘শাস্তি’ পেতে হয়। রচিত হয় আরেকটি পৌরুষোচিত (?) অধ্যায়। পুরুষেরা তাৎক্ষণিক উষ্ণা প্রকাশ করলেও শেষমেশ দোষটা পোশাক, অলংকার ও পারফিউমের ওপর চাপিয়ে দেয়!

আল্লাহ কেন্দ্রিক সমাজে এই পুরুষত্বের চর্চাক্ষেত্র বেশ উর্বর। কারণ সবরকমের সৃষ্টিকর্তার মধ্যে আল্লাহই সবচেয়ে ভয়ানকরকম পুরুষ, আল্লাহর আসমাউল হুসনা তথা গুণবাচক নামসমূহ সব পুংলিঙ্গের। আল্লাহর বান্দার নাম হয় আবদুর রহিম, যার অর্থ হচ্ছে রহিমের দাস। কারণ আল্লাহ নিজেই রহিম তথা দয়ালু। পক্ষান্তরে  আল্লাহর বান্দির নাম আবদুর রহিমা হয় না, কারণ আল্লাহকে রহিমা বলা যাবে না, তিনি যে পুরুষ! তিনি যে পুংলিঙ্গ! বান্দির নাম হয় শুধুই রহিমা।

ঠিক একই কারণে আল্লাহর বান্দার নাম আবদুল লতিফ হলেও আল্লাহর বান্দির নাম আবদুল লতিফা হয় না। আল্লাহ হচ্ছেন লতিফ, তিনি লতিফা নন কখনোই। আল্লাহ হচ্ছেন পুরুষ, তিনি নারী নন কখনোই।

সুতরাং পুরুষ আল্লাহ কিংবা ভগবান কিংবা ঈশ্বর যে কোনোকালেই নারীকে মেসেঞ্জার, অবতার, মহানারী বানাবেন না তা খুবই স্পষ্ট। এজন্যই মহামানব হয়, মহামানবী নয়। মহাপুরুষ হয়, মহানারী নয়।

আল্লাহকেন্দ্রিক দেশ পাকিস্তানের একজন পুরুষের কীর্তি পড়ে আসি চলুন-

২৯ জানুয়ারি ২০১৮ :

“পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের অ্যাবোটাবাদে মেডিকেল কলেজে তৃতীয় বর্ষে পড়তেন আসমা। ছুটিতে ওই প্রদেশের কোহাত এলাকায় নিজের বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন, পরিবারের সঙ্গেই কাটাবেন ছুটিটা। সে আর হয় নি। ফেরাও হয় নি।

আসমার পরিবারের বরাত দিয়ে কোহাত ডেভেলপমেন্ট অথরিটি পুলিশ স্টেশনের কর্মকর্তা গুল জানান বলেন, স্থানীয় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) এক নেতার আত্মীয় মুজাহিদ আফ্রিদি আসমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু আসমা তাতে রাজি হন নি। আসমাকে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য তাঁর পরিবারকে চাপ দিতেন মুজাহিদ। তিনি বলেন, গত শনিবার আসমা তাঁর এক বোনের সঙ্গে বাড়িতে পৌঁছান। মুজাহিদ এবং তাঁর সহযোগী সাজিদ আসমাকে দেখামাত্র গুলি ছোঁড়েন। এরপর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। আসমার শরীরে তিনটি গুলি লেগেছিলো বলে জানায় পুলিশ। ডন অনলাইনের খবরে জানানো হয়, তাঁকে কাছের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আসমা। মৃত্যুর আগে হাসপাতালে আসমা জানিয়েছিলেন, মুজাহিদই তাঁকে গুলি করেছেন।

আল্লাহকেন্দ্রিক দেশ পাকিস্তানের আরেক পুরুষের ‘পৌরুষ’ দেখে আসি চলুন-

২৬ জানুয়ারি ২০১৮ :

“পাকিস্তানে আট বছর বয়সী শিশু জয়নাব আমিন ধর্ষণ ও হত্যার মূল সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ধরিয়ে দেওয়ার পরও পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জয়নাবের বাবা মুহাম্মদ আমিন এ দাবি করেন।

ডন অনলাইনের খবরে জানানো হয়, গত মঙ্গলবার পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জয়নাবের হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় খুনিকে ধরা সম্ভব হয়। ২৩ বছর বয়সী ওই হত্যাকারী ও ধর্ষকের নাম ইমরান আলী। শাহবাজ শরিফ এ জন্য পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদও জানান।

তবে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জয়নাবের বাবা জানান, তিনি ও তাঁর আত্মীয়রা মিলে ইমরানকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তাঁর দাবির সপক্ষে তিনি একটি ছবিও দেখান। ছবিটি ইমরানের ভাইয়ের বাসায় তোলা। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ইমরান একটি খাটিয়ায় বসে আছেন। জয়নাবের বাবা মুহাম্মদ আমিন বলেন, ‘আমরা ওকে (ইমরান) ধরে পুলিশে দিই।

৪ জানুয়ারি কাসুরে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় জয়নাব। কয়েক দিন পর একটি ময়লার স্তূপ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। জয়নাবের বাবা বলেন, ঘটনার পর দু‘বার তাঁরা ইমরানকে ধরে পুলিশে দেন। কিন্তু পুলিশ দুবারই তাঁকে ছেড়ে দেয়। পরে তাঁরা বিষয়টি পাঞ্জাবের পুলিশপ্রধানকে জানান।”

আল্লাহকেন্দ্রিক সমাজেও ‘মি টু’ এর ঢেউ যখন আছড়ে পড়লো তখন পুরুষাল্লাহর রক্ষকেরা সক্রিয় হয়ে গেলো। তারা মাঠে ঘাটে ধর্মীয় মঞ্চে তাদের পুরুষাল্লাহর নারীবাদীতা নিয়ে উষ্ণ বাক্য কপচাতে লাগলো।

তাদের আল্লাহর চিঠিবাহক নাকি নারীকে খাদ্য না ভেবে মানুষ ভেবেছিলো! মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত দিয়ে নারীবাদীতার বিশাল ত্যানা ছিঁড়েছে তাদের চিঠিবাহক সাহেব।

সবাই যেখানে নারী বনাম পুরুষের সমঅধিকারের কথা বলছে সেখানে চিঠিবাহকের অনুসারীরা কি আর বসে থাকতে পারে? পুরুষাল্লাহর চিঠিবাহকও নাকি নারীমুক্তির কথা বলেছে, তবে সেটা মা-ছেলের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠা এবং মাকে কিঞ্চিত সম্মান দানের মাধ্যমে করেছে সে। চিঠিবাহক সমঅধিকারের ক্ষেত্রটা তথা নারী বনাম পুরুষ কল্পনা করেছেন মা এবং সন্তানের মধ্যেকার সম্পর্কটাকে!

আল্লাহর নিজস্ব দেশ সৌদিআরব তো সবচে বেশি নারীবাদে সরেস দেশ, চৌদ্দশো বছরের ইতিহাসে সেখানে কোনোদিন কোনো নারীকে শাসকের আসনে কল্পনাও করা যায় নি। নারীকে গৃহপালিত পশুর চেয়েও নগণ্য ভাবা হয়েছে সেখানে। গরু ছাগলেরও একাকী চলাফেরার স্বাধীনতা ছিলো, সেখানে নারীর তা-ও ছিলো না।

নারীকে সেখানে শুধুমাত্র গৃহপালিত পশু ছাড়া কিছুই ভাবা হয় নি। সেখানে উটের মাংসের মতো নারীও শুধুই মাংসপিণ্ড, আজওয়া খেজুরের মতো নারীও শুধুমাত্র মিষ্টি খেজুর, কৃষিক্ষেতের মতো নারীও নিছক একখন্ড জমি। তবুও এ নারীই নাকি দোজখে থাকবে অধিক সংখ্যক!

অধিকসংখ্যক দোজখি বানিয়ে, কৃষিক্ষেত্র সাজিয়ে, বুদ্ধিতে কম আখ্যা দিয়ে, সম্পদে (4:11, 4:176) ও সাক্ষ্যদানে (2:282) আল্লাহর লিঙ্গধারীদেরকে দ্বিগুণ সুবিধা দিয়ে সমানাধিকার তৈরি করার কৃতিত্ব আল্লাহর পিতৃতালুকের দেশেই সবচে বেশি।

আল্লাহকেন্দ্রিক সমাজে আল্লাগিরি একটি জনপ্রিয় প্রথা। আল্লাহ নিজেও স্বীয় অনুসারীদেরকে আল্লাগিরি করতে বলেছে তার বানোয়াট বইয়ে (২:১৩৮)

আল্লাগিরির একটি কলিযুগী রূপ হচ্ছে তাহাররুশ। আর জোরপূর্বক মাংস মর্দন করা তো আল্লাগিরির বহু পুরনো রূপ। আল্লাহর রূপকার নিজেই ছিলো লাগামছাড়া, তো আল্লাহ আর কতটুকু ভাল হবে? আল্লাহর রূপকার মাংস দেখলেই লুঙ্গি তুলে দৌড়াতে থাকতো, তো আল্লাহ আর কতটা ভালো হবে? আল্লাহর রূপকার সুযোগ পেলেই এর ওর ঘরে ঢুকে মাংস খেয়ে মেরাজের গল্প তৈরি করতো, তাহলে আল্লাহ আর কতটা ভালো হবে?

আল্লাগিরি, গৃহপালিত পদ্ধতি, মাংসত্ব এর একটি ধাক্কা যে পশ্চিমী সমাজেও লাগে নি তা নয়। সেখানে এখনও গৃহপালিত বধূর নামে তার ‘মালিকের’ পদবি বসে যায়, কিন্তু মালিকের নামের সাথে গৃহপালিত বধূর পদবি বসে না। তাই তো দেখি গৃহপালিতের নাম হয় হিলারি ক্লিনটন, মিশেল ওবামা, মেলানিয়া ট্রাম্প।

ঈশ্বরের স্বজাতির নাম তো সেখানে এমন হয় না -ক্লিনটন হিলারি, বারাক মিশেল, ট্রাম্প মেলানিয়া এমনতো কখনো শোনা যায় না!

আল্লাহর দেশ সৌদি আরবের দশা এক্ষেত্রে আরো গুরুচরণ….. সেখানে গৃহপালিত বধূর নামের সাথে বরের নাম যোগ হয় না, এটা যে খুশির কথা তা নয়। বরেরা এটা করে না, কারণ গৃহপালিত পশুকে মানুষ যতই যত্ন করুক না কেনো তার নাম তো নিজের নামে বসানো যায় না!

পৃথিবীতে যতবারই দ্রোহের আগুন জ্বলেছে ততবারই সুকৌশলে নেভানো হয়েছে আগুন। আল্লাহর লোকেরা ধূরন্ধর বক্তা, ঘাড়কাটা ছুরি, সিক্ত মার্জার ও চতুষ্পদী পলিটিশিয়ান লেলিয়ে দিয়ে আল্লাহকে বাঁচিয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসেছে প্রতিবার।

আমরা আল্লাহর নাম পুরুষাল্লাহ রেখেছি, কারণ তার সব আচরণ, পক্ষপাত, কথাবার্তা পুরুষালি। পুরুষাল্লাহ বড্ড ধূর্ত। মাঝেমধ্যে মুখ ফসকে পুরুষাল্লাহ নিজের ধূর্তামির কথা স্বীকার করেছে! যেমন পুরুষাল্লাহর নিজস্ব বাণীর ৩:৫৪ নং শ্লোক। পুরুষাল্লাহর ২৭:৫০ নং শ্লোক। পুরুষাল্লাহর ১৩:৭২ নং শ্লোক। পুরুষাল্লাহর ৮৬:১৬ নং শ্লোক।

হাজার বছর ধরে চলছে পুরুষাল্লাহর এই তান্ডব ও ধূর্তামি। আল্লাহর প্রজাতি তথা পুরুষকুলের কুল যায় না, জাত যায় না। যত জাত, কুল, মান যায় সবই শুধু আল্লাহর বিপরীত লিঙ্গধারীর।

পুরুষাল্লাহর স্বজাতির লোকের অপরাধে শাস্তি পেতে হয় বিপরীতের। বিয়ে বাঁচাতে অচেনা লোকের সাথে রাত কাটাতে হয় তার। গৃহপালিত গরুকে পুরনো গোয়ালে ফেরানোর জন্য এটা পুরুষাল্লাহর মহা আবিষ্কার (২:২৩০।)

হাজার হাজার বছর ধরে পুরুষ আল্লাহ, পুরুষ ভগবান, পুরুষ ঈশ্বর কর্তৃক মানবজাতির দুটি প্রজাতির একটি অংশকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে। এখন সেই অংশ অর্থাৎ যাদেরকে গৃহপালিত বলা হয়, তারা নিজেরাও (অবশ্যই সবাই না) গোয়ালে থাকতে ইচ্ছুক।

ঈশ্বরের দেশের লোকেরা ঈশ্বরকে খোঁয়াড়ে আটকে দিয়েছে, তাই সেখানে গৃহপালিত বধূ নেই। ভগবানের দেশের লোকেরা ভগবানকে কাপড়চোপড় পরিয়ে, ধুয়েমুছে কিছুটা জাতে তুলেছে; তাই সেখানে গৃহপালিতরা আগের চেয়ে কিছুটা ভালো আছে। অবশ্য এখনো ভগবানের দেশের গৃহপালিতরা গৃহবন্দি থাকতেই বেশি স্বচ্ছন্দ!

আর আল্লাহর দেশসমূহ, সেখানে তো গৃহপালিত বধূরা মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে আরো এক হাজার বছর লেগে যাবে!

আল্লাহর দেশ বাংলাদেশ। এখানে গৃহপালিত পশুর মত গৃহপালিত বধূ কেনাবেচা হয়, কিনতে গেলে দাম দিতে হয়। ক্রীত গৃহপালিত পশুটাকে কেনার সময় যথেষ্ট পরিমাণে সাজাতে হয়। কেনাবেচার একটি চুক্তিও হয় সেখানে, এ চুক্তিকে ‘দেনমোহর’ বলা হয়। এ চুক্তির মধ্যে প্রশ্ন করা থাকে : “কন্যা কুমারী কিনা?” ক্রেতা (পুরুষ) কুমার কিনা, প্রশ্ন করা হয় নি!

প্রশ্ন থাকে : ক্রেতার অন্য কোনো গরু বর্তমান আছে কিনা? যেহেতু একজন ক্রেতা চারটে পর্যন্ত গরু কিনতে পারে। এছাড়া যুদ্ধবন্দিনী, দাসী ও একজন ক্রেতার থাকতে পারে, যা সহস্রাধিকও হতে পারে। ক্রেতার গরু অনেক থাকতে পারে, কিন্তু গরুর মালিক তো একজনই হবে, তাই নয় কি?

আল্লাহর দেশে বেড়ে ওঠা এইসব গৃহপালিত গাভীগুলো যখন ঈশ্বরের দেশে (ঈশ্বর অবশ্য সেখানে এখন গৃহবন্দি) যায় তখন সেখানকার মুক্ত মানুষ পছন্দ করে না তারা, বরং তারা তখন সেখানে খোঁয়াড়ে বন্দি হওয়ার জন্য তান্ডব করে, কান্নাকাটি করে।

তারা গৃহপালিত বধূ তথা পশু হতে চায়, তারা নিজেদের দেহটাকে গরু কিংবা উটের দেহ ভাবতে চায়, শস্যক্ষেত্র ভাবতে চায় (অবশ্য গৃহপালিত পশুরও যতটুকু ব্যক্তিসত্তা বিকাশমান আল্লাহ কর্তৃক ইনজেকটেড প্রজাতিরা তার চেয়েও নিম্নমানে নিজেদেরকে নামাতে চায়!)

পুরুষাল্লাহ নিজেই শস্যক্ষেত্র কাকে বলে সেটা তার বাণীতে বিধৃত করেছে (২:২২৩।)

পুরুষাল্লাহর বাণী বেশ ভয়ানক, যাকে ধরে তাকে গোয়ালের গরু বানিয়ে ছাড়ে। মানবজাতির একটি অংশকে এখন বানিয়েছে পূর্ণ প্রতিবন্ধী। এই প্রতিবন্ধীগুলোর ভাবখানা এমন -আমি তোমার গরু, তুমি আমার মালিক। আমি তোমার খাবার, তুমি আমার খাদক। আমি তোমার হাতে মার খেতে চাই পুরুষাল্লাহর নির্দেশানুসারে (4:34,) প্লিজ আমাকে পেটাও।

আপনি যতই বলবেন, না, তুমি মানুষ; সে এটা মানবে না। সে নিজেকে আপনার হাতে সঁপে দেবে, পেটাতে বলবে, গোয়ালে ভরে রাখতে বলবে, সারা গায়ে জিঞ্জির পরিয়ে রাখতে বলবে! গরুর তো শুধু মুখেই লাগাম থাকে, কিন্তু আল্লাহ কর্তৃক ইনজেকটেড প্রজাতি তথা গৃহপালিত বধূর জাত নিজেদের পুরো শরীরেই লাগাম পরিয়ে রাখে! এই লাগামের জন্য, খোঁয়াড়ে থাকার জন্য, গোয়ালের মালিকের চারটে গরুর একটি হওয়ার জন্য, গোয়াল-মালিকের হাতে চাবুকপেটা হওয়ার জন্য সে কি প্রাণান্তকর প্রয়াস!

আল্লাহর পূজারিরা আল্লাহকে বলে, “বিজ্ঞানময় আল্লাহ।” এটা আসলেই সত্যকথা, নইলে কি এমন সাইকোলজি প্রয়োগ করে আল্লাহ যদ্দরুণ একজন মানুষ নিজেকে নিম্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য কান্নাকাটি করে?

কি এমন সাইকোলজি আল্লাহর আছে যে একজন পূর্ণ মানুষ খোঁয়াড়ে থাকার জন্য মিছিল করে? কি এমন সাইকোলজি আল্লাহর আছে যে একজন পূর্ণ মানুষ গরুর লাগামের মতো নিজের সারাদেহে কালো লাগাম পরানোর জন্য সংগ্রাম করে? কি এমন সাইকোলজি আল্লাহর আছে যে একজন পূর্ণ মানুষ নিজেকে মাংসপিণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আত্মঘাতী হয়?

এ কেমন মানবপ্রজাতি?

এ কি বিচিত্র সাইকোলজি?

এ কি দুর্দমনীয় পশ্চাদপদতা?

এই ইনজেকটেড প্রজাতির জন্যে কষ্ট পায় সত্যিকারের মানুষ, ধর্ষিতা হয় মানুষ, নিগৃহীত হয় মানুষ, বলি হয় মানুষ।

এই ইনজেকটেড প্রজাতির মধ্যে একদল আছে বেশ ধূর্ত, এরা স্বাধীনতার কথা বলে মুখে মুখে। সত্যিকারের মুক্তির কথা শুনলে তারা ভড়কে যায়, তখন ধূর্ত পুরুষতান্ত্রিকদের প্যান্ট চাটে। নারীবাদের কথা বললেই শব্দ পাল্টে মানবাধিকারের কথা বলে!

আসুন পুরুষাল্লাহর একটি বাণী আত্মস্থ করি, দেখি পুরুষাল্লাহ কি বলেছে?

[34] الرِّجالُ قَوّٰمونَ عَلَى النِّساءِ بِما فَضَّلَ اللَّه بَعضَهُم عَلىٰ بَعضٍ وَبِما أَنفَقوا مِن أَموٰلِهِم ۚ فَالصّٰلِحٰتُ قٰنِتٰتٌ حٰفِظٰتٌ لِلغَيبِ بِما حَفِظَ اللَّهُ ۚ وَالّٰتى تَخافونَ نُشوزَهُنَّ فَعِظوهُنَّ وَاهجُروهُنَّ فِى المَضاجِعِ وَاضرِبوهُنَّ ۖ فَإِن أَطَعنَكُم فَلا تَبغوا عَلَيهِنَّ سَبيلًا ۗ إِنَّ اللَّهَ كانَ عَلِيًّا كَبيرًا

পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে (স্ত্রীদের) অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।

পুরুষাল্লাহ, পুরুষতান্ত্রিক এবং দাসত্বের গাভী এদের সম্মিলিত আবিষ্কার হচ্ছে দায়দায়িত্ব বন্টনকরণ। পুরুষের দায়িত্ব হচ্ছে টাকা কামানো, লাঠালাঠি করা ও গোয়ালের গরু সামলানো।

আল্লাহমুখী নারী তথা গৃহপালিত বধূর দায়িত্ব হচ্ছে গায়ের রং ঠিক রাখা, নরম মাংসসমূহ সুডৌল রাখা, চুল সুন্দর রাখা, সর্বোপরি নিজেকে সুস্বাদু এবং আদর্শ খাদ্য হিসেবে সবসময় খোঁয়াড়ের মালিকের জন্য তৈরি রাখা।

তাই তো বয়স বেশি হলে খোঁয়াড় মালিকের কিছু যায় আসেনা, কিন্তু গরুর অনেক সর্বনাশ হয়! বয়সী গরু নাকি খোঁয়াড় মালিকরা কিনতে চায় না! আল্লাহমুখী মাংসপিণ্ড পূর্বে অন্য মালিকের গরু ছিলো, এটা চরম কলংকজনক। খোঁয়াড় মালিকের আরো সাতটা গরু ছিলো, এরা কলংকজনক না। ধর্ষিতা হলে গৃহপালিতের ইজ্জত যায়, খোঁয়াড় মালিকের যায় না! গৃহপালিতের বাবারা ভালো গোয়াল ও খোঁয়াড় মালিকের খোঁজ করে, যাতে তার আদরের গৃহপালিত মাংসপিণ্ড ভালো গোয়ালে ভালো মালিকের তত্ত্বাবধানে খেয়ে পরে নাদুসনুদুস হতে পারে।

মালিক মাংসপিণ্ড খেয়ে ছেড়ে দেয়ার ভয় করে সবসময় মাংসপিণ্ডের বাবা-মা, এজন্যই সিকিউরিটি মানি (মোহর) রাখতে হয় গোয়াল মালিকের কাছ থেকে। অবশ্য পুরুষাল্লাহর বিধানমতে, এই সিকিউরিটি মানি মূলত সিকিউরিটি মানি না, বরং এর মাধ্যমে গরুর চাষযোগ্য জমির মালিকানা পিতার হস্ত থেকে গোয়াল-মালিকের হস্তে অর্পিত হয় (আল হিদায়া, বিবাহ অধ্যায়।)

যুগের পরিবর্তনের সাথে গোয়ালের মধ্যেও এসেছে পরিবর্তন। এখনকার গোয়ালঘরকে বলা হয় ফ্ল্যাট বাসা। প্রত্যেক ফ্ল্যাটবাসায় সযত্নে রাখা গরুরা একে অপরকে ‘ভাবি’ ডাকে, কারণ তিনি তো গৃহপালিত, তাই তিনি মুখ্য চরিত্র নন, মুখ চরিত্র হচ্ছে গোয়াল-মালিক।

গৃহপালিত গরুর ইজ্জতের হেফাজত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাই তার গায়ে চড়াতে হয় পাঁচস্তরের পোশাক, অথচ গোয়াল-মালিকের গায়ে একটি পোশাক থাকলেই চলে!

পুরুষাল্লাহর দৃষ্টিতে, গৃহপালিত প্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে যদি কেউ পাঁচটার বদলে দু’একটি পোশাক থাকে তবে তাকে নাঙ্গা জ্ঞান করতে হবে। এই নাঙ্গার নাঙ্গামির বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এই নাঙ্গাকে বেশ্যা বলতে হবে। এর সাথে যোগ দেয় গৃহপালিত মাংসপিণ্ড সমূহ যারা দু’চার লাখ টাকার বিনিময়ে চাষের জমি কিংবা গোয়ালের গরু হিসেবে বিক্রি হয়েছে কিংবা হবে।

6547 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।