শামা আরজু

নোয়াখালির একটা প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন শামা আরজু।

গল্প নয় সত্যি

মা বলতেন আমার নাকি খারাপ অসুখটা হয়েছিলো। নিওমোনিয়া। বাবা তখন শহরের সেরা পাঁচ জন ডাক্তার নিয়ে এসেছিলেন। সবাই মিলে আমাকে সারিয়ে তুলেছিলেন। কি দরকার ছিলো।

সেই ছোট্টকালেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম এসমাজ আমার জন্য না। সারিয়ে তোলার নাম করে বাবা আমাকে তিলেতিলে মৃত্যুর দিকেই ঠেলে দিয়েছিলেন। আমার বাবা বড় বোকা ছিলেন। একটা কন্যাশিশু না থাকলে কি এমন আসে যায়।


আমার বাবা বোকা ছিলেন। নইলে আমায় পড়ার জগত চেনান! 
আমিও বাবার মতোই বোকা। নইলে প্রতারকের জন্য কষ্ট পাই! নিজেকে দামি ভাবা আমি ওর কাছে শুধু একটু আদরের জন্য এতো কাতর হই। ওকে অবহেলা করার এতোটা সুযোগ করে দেই!

আগে আমি নই ওই ছিলো কাতর। ওর জন্য খুব মায়া হয়েছিলো। আমি মায়ায় জড়িয়ে পড়ি।নিজেকে আর ছাড়িয়ে নিতে পারি না।

ওর কাতরতা নেই মায়াও নেই। বুঝি। কিন্তু নিজেকে বোঝাতে পারলাম কই?

এখনই মরলে চলবে না, নইলে এতো অপমান অবহেলার চাইতে মরে যাওয়াই ভালো ছিলো। কতোগুলি ঘুমের বড়ি খেলেই শান্তির মরণ। মরার জন্য না খেলেও ওকে ভুলে থাকার জন্য ইদানীং প্রায়ই অনেক ঘুমের বড়ি খাই। ঘুমিয়ে থাকলে ওকে মনে পড়বে না। যে ঘুম না চাইতেই পায়ে পায়ে গড়াতো আজ সেই ঘুমেরও ওর মতোই অবস্থা আমাকে পাত্তাই দেয় না। পায়ে গড়ানো জিনিস আজ মাথায় নিতে চাইলেও আসে না।

আমি সারবেলা কাতর কান পাতি ফোনে। কাতর তাকাই পথের দিকে। দূর্বল শরীরকে আরও দূর্বল করি। তিলে তিলে মরি। ওরা বড়ো বেশি বাস্তববাদী। প্রয়োজনের বাইরে এক পাও দেয় না। প্রয়োজনে খুব দামী বানায় প্রয়োজন ফুরালেই হয়ে যাই ছুঁড়ে ফেলা টিস্যুপেপার। এসব তো আগেই জানতাম।তবু ও সময়মতো মনে থাকে না। একটুখানি আদরের জন্য কী ভীষণ কাঙাল হয়ে যাই। অনেকটাই কুকুরের মতোই। একটুখানি মাথায় হাত বুলালে সে কি আনন্দ কুকুরের!

আমি তার দরোজায় দাঁড়িয়ে কান পেতে শুনি ভেতরে বউ বাচ্চা নিয়ে খেলা দেখে পরম আনন্দে। আমি দরোজার বাইরে চাপা আর্তনাদ করি। ওর কানে পৌঁছায় না।

একদিন এমন আর্তনাদ ও করেছিলো। আমি তাকে বুক পেতে দিয়েছিলাম।

3765 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।