ফারজানা কবীর

এক্টিভিস্ট

পুত্রের জননীরা

সিভিল সমাজের সবচেয়ে বড় ক্রিমিনালের জন্মদাত্রী হলো ছেলের মা। যতো বদমাইশ ছেলে দেখবেন তার সাফল্যের পিছনে একটা মা থাকে। এই সাফল্য তৈরির ইতিহাস ছোট বেলা থেকেই শুরু হয়। ছেলের পেছনে আটটা ডিম নিয়ে ঘুরে যাতে সে অন্তত চারটা খায়। অথচ খাওয়ার নিয়ম একটা। বাসার কাজ কর্ম কিছু শেখায় না। শিক্ষা সহবত তো নাই। আমি অনেক ছেলে দেখেছি তারা হাত দিয়ে কিভাবে ভাত খেতে হয় শেখে নাই, হাতের চেয়ে বড় লোকমা নেবে। মুখভর্তি করে খাবে যা পেটে গিয়ে আটকে থাকে। এরা যেখানে যায় মনে করে এটা তাদের বাসা। মেয়ে দেখলেই মনে করে মেয়ারা তাদের সেবা দিতে বাধ্য থাকবে।

পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাও শেখে না। ছেলেরা অন্তর্বাসটা পর্যন্ত ধুতে পারে না। তাদের সবচেয়ে বড়ো দু:খ তাদের রান্না করে দেয়ার কেউ নাই। তার চেয়ে বড় দু:খ তাদের বউ এর রান্না মা'র মত হয় না। এক বয়স থেকে তারা বাইরে ঘোরাঘুরি শুরু করে ফলে তাদের পারিবারিক কম্যুনিকেশন কী হওয়া উচিৎ সে সম্পর্কে ধারণা হয় না। বাইরে আড্ডা দিয়ে মেয়েবাজি এবং সিগারেট খাওয়া ছাড়া কিছুই শেখে না। নারীদের সন্মান শেখার আগে পর্ণ সাইট চিনে যায়। এই জন্য দেখা যায় উচ্চ শিক্ষিত হীরার মতো ছেলেটিও নারীদের সঙ্গে মার্জিত এবং সঠিক ব্যবহার শেখে না। প্রত্যেক ছেলে গ্রুপে একটি ছেলে থাকে যে নিয়মিত পতিতালয় যাওয়া আসা করে। সেই ছেলের মা এবং বন্ধুরা এটা জানলেও তারা লজ্জা পায় এ বিষয়ে কথা বলতে ।

এবার দেখি বিপরীত চিত্র। মেয়েদের কাপড়ে ফুল তলা থেকে তুলসি তলা সব সেখানে হয়। আর বলা হয়, বাইরে যাইস না। এতে নাকি ছেলেরা খারাপ হয়।

আমি ভেবেছিলাম শুধু আগের জেনারেশনের মায়েদের এই সমস্যা। এখনকার নিজের অধিকার সচেতন নারীরাও ‘জানেনে! আমার ছেলে মাংস ছাড়া ভাত খেতে পারে না‘ এই ধরনের ন্যাকা টাইপ বক্তব্য দিয়ে অশেষ তৃপ্তি লাভ করে। আর এভারেজে সব মা একটি পেটমোটা অবস ছেলে বাচ্চা নিয়ে ঘুরে। আমি আমার নারীবাদি বান্ধবীদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম। কথা তো কমবেশি হয়। তোমার ছেলেদের ঘরের কাজ কিছু শেখাও? তারা তখন নিছক মা হয়ে মুখ ঝামটা দিয়ে বলে, সময় আসলে সব শিখে যাবে।

কখনও যদি ছেলের মাকে ছেলের দুস্কর্ম নিয়া বিচার দেন। তাহলে গর্বিত মায়ের উত্তর পাবেন আমার ছেলে যা করে করুক আপনার কী?

মেয়ের মায়েকে গিয়ে একই কথা বলেন। সে অসহায় কন্ঠস্বরে বলবে, হ্যাঁ ভাবি, মেয়েটাকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি। ভাল ছেলে থাকলে খবর দিয়েন। যেনো মেয়ে তার মেয়ে না, ’বোঝা’।

এই ভাবে করে পুরো পৃথিবী কু-জাত পুরুষে ভর্তি হয়ে যায় এবং সব বদমাইশ ছেলেদের প্রবল ভাবে মা ভক্ত হওয়ার প্রবনতা তৈরি হয়।

পুরুষ দোষ করলে তার শাস্তির অর্ধেক তাদের জননীদের দেয়ার ব্যবস্হা থাকতো তাহলে সমাজে নারী নির্যাতন অনেকাংশেই কমে যেতো।

1147 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।