সুষুপ্ত পাঠক

বাংলা অন্তর্জালে পরিচিত "সুষুপ্ত পাঠক" একজন সমাজ সচেতন অনলাইন একটিভিস্ট ও ব্লগার।

ফালানীর ভাই-বেরাদাররা এখন কই সবাই?

অবশেষে রাঙামাটির বিলাইছড়িতে দু’টি মারমা কিশোরী বোনকে ধর্ষণ করার খবরের সত্যতা মিলেছে। ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ ভুক্তভোগী পরিবারটির সংবাদ সম্মেলনের সংবাদ প্রকাশিত করেছে। ৫-৬ জন বাঙালি মারমা পরিবারটির বাড়িতে ঢুকে কিশোরী দুইবোনকে ধর্ষণ করে। বিলাইছড়ির ফারুয়া আর্মি ক্যাম্পে এই ঘটনা যাতে জানাজানি না হয় সেটা নিশ্চিত করতে পরিবারটিকে নির্দেশ দেয়। চাকমা রানী য়েন য়েন নিশ্চিত ভিকটিম কিশোরীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। নির্যাতিত কিশোরী দু’জন এখন রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে। ভিকটিম সূত্র দাবি করেছে সন্ত্রাসী খোঁজার নাম করে সেনা সদস্যরা এই কাজটি করেছে।

বাংলাদেশের কোথাও সিভিল এড়িয়ায় সেনা ক্যাম্প নেই। একমাত্র পার্বত্য অঞ্চল ব্যতিক্রম। কাজেই আমরা সব সময় নির্ভয়ে থাকি সেখানকার আইন-শৃঙ্খলার নিয়ে। সেনা ক্যাম্পের অধীনে থাকা একটি স্থানে দিন-দুপুরে কাদের এতখানি সহস হলো! এর আগেও ক্যান্টমেন্ট এরিয়াতে সোহাগী জাহান তনুকে রেপ পরবর্তী হত্যা করা হয়। আমরা যারপরনাই শংকিত এই ভেবে যে, কার এমন বুকের পাটা সেনানিবাসের সংরক্ষিত স্থানে ধর্ষণ করার সাহস করে! দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর নাকের ডগায় কারা এমন বেপরোয়া হতে সাহস করে?...

বাংলাদেশে এ ধরণের নিউজ বড় কোনো মিডিয়াতে প্রকাশিত হয় না। সাধারণ ভাসুরের নাম যাতে মুখে নিতে না হয় সেটাই কারণ। কিন্তু বড় মিডিয়াতে প্রকাশ না হলে ঘটনার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেন। তাই দ্বিধাগ্রস্ত হতে হয় সবাইকেই। দু’দিন আগে ঘটনা জানার পর তাই যা লিখেছিলাম তা অনলি মি করে দিয়েছিলাম। আজ সেটাই পুরোটা নিচে দিয়ে দিলাম-

ফালানীর ভাই-বেরাদাররা এখন কই সবাই? রাঙামাটিতে আজকে মারমা এক কিশোরীকে (এখন জানা গেছে তারা দুই বোন) ধর্ষণ করা হয়েছে। সংবাদ মাধ্যম বিবরণ দিয়েছে, ‘সুবেদার এর নেতৃত্বে ফারুয়া সেনা ক্যাম্পের একদল সেনাসদস্য ঐ সময় উক্ত অরাছড়ি গ্রামে আসে। এসময় সেনাদলের দুই সদস্য তল্লাশীর কথা বলে উক্ত ধর্ষিতা কিশোরীর বাড়িতে প্রবেশ করে কিশোরীর বাবা-মাকে বাড়ির বাইরে আসতে বাধ্য করে। এরপর সেনাসদস্যদের মধ্যে একজন দরজায় অস্ত্র নিয়ে থাকে, অপরজন উক্ত মারমা কিশোরীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় কিশোরী চিৎকার করলেও অস্ত্রের মুখে বাবা-মা এগিয়ে আসতে পারে নি’ (সূত্র: ডেইলি সিএইচটিডটকম)।

আহা এদেশে ইজরাইলের ‘দখলদারী’ নিয়ে কত কান্নাকাটি হয়। অমিতাভ বচ্চন কেনো ইসরাইল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সলফি তুললো তার কৈফিয়ত চাওয়া হয়। সূচির নোবেল ফেরত চায়। ফালানীর ঝুলন্ত লাশ ফ্রেমে আটকে রাখে। আর আমাদের পাহাড়ে অন্যায়, জুলুম, দখলদারীর যারা প্রতিবাদ করে তারা সব বিচ্ছিন্নতাবাদী! তাদের খোঁজে ঘরে তল্লাসীর নামে অবাধে ধর্ষণ চালালেও এদেশের মানবতার কিছু ছিড়া যাবে না…!

কিছুদিন আগেই আপনারা ধুমধাম করে ‘ফেলানী দিবস’ পালন করলেন। ভারতীয় জওয়ানকে তো অন্তত বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ান করা গেছে কিন্তু তনু ক্যান্টমেন্টে রেপ হয়েছিলো তাই তার বিচারটাই হলো না। কল্পনা চাকমা জলপাই রঙের ঘূর্ণিতে হারিয়ে গেছে।… আপনারা তো ‘কল্পনা দিবস’ পালন করলেন না? মারমা কিশোরী ধর্ষিতা হলে আমাদের কি? সে না মুসলমান না বাঙালি! আপনারা গরীবের মেয়ে ফালানীর জন্যও কাঁদেন নি। এই নাটকটা করেছেন আপনাদের বুক ভরা ভারত বিদ্বেষ আর হিন্দু বিরোধীতার বিষ থেকে যা মানসিকভাবে দ্বিজাতি তত্ত্ব থেকে লালন করে আসছেন। কত বড় বরাহ আপনারা! …

2442 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।