অনেকে ধারণা করেন ঈশ্বর আছে। কেন? অনেকে ধারনা করেন ইশ্বর নেই। কেন? ইশ্বর আছে কি নেই, এটার উত্তর আসলে দেয়া সম্ভব নয় এই অর্থে যে, আমরা কেউ ঈশ্বরকে প্রমাণ বা অপ্রমাণ করতে পারছি না। তবে ঈশ্বর থাকুক আর না থাকুক, মূল প্রশ্নটি হচ্ছে, "ঈশ্বর কতটা জরুরি?"
যুগ যুগ ধরেই দর্শন, যুক্তি এগুলোই সত্য অনুসন্ধানের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়েছে, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য -প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রচলিত ধর্ম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে! তা সেটা সক্রেটিসের সময়েই হোক কিংবা গ্যালিলীও-এর সময়ে। সেটা মানুষ বুঝেও বোঝে না বা বোঝার চেষ্টা করে না, আসল সমস্যাটাই হচ্ছে এই জায়গায়!
এবার আসা যাক প্রচলিত ধর্ম এবং ধর্মগ্রন্থগুলোর দিকে-
প্রত্যেকটা ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ, স্বার্থোদ্ধত পুরুষমানুষের সৃষ্টি, এসব ধর্ম, ধর্মগ্রন্থের ভিতর মানবতা নাই, মানবতা থাকে মানুষের ভিতর।
অনেকেই এসব ধর্মগ্রন্থের ভিতর থেকে কিছু বাক্য নিয়ে এসে যুক্তি উপস্থাপন করেন কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, এই যুক্তিগুলো কিন্তু মানুষের মুক্ত চিন্তার ফলে আরও যুক্তিসঙ্গত ভাবে চিন্তা করা সম্ভব, যেখানে ধর্ম মানুষের চিন্তাকে একটি গণ্ডির মধ্যে আটকে ফেলছে!
মানুষ অনেক ক্ষমতা নিয়ে এ পৃথিবীতে আসে, অনেক প্রতিবন্ধকতার জন্যই সে তাঁর ক্ষমতা কাজে লাগাতে পারে না,
সভ্যতার সূচনালগ্নেই, যা দিয়ে, সভ্যতা বিকাশের পথে ভয়াবহ প্রতিবন্ধকতার দেয়াল তৈরি করা হয়, তা হচ্ছে প্রচলিত ধর্ম। এ প্রতিবন্ধকতা না থাকলে মানুষ অনেক এগিয়ে যেত। অনেকের ধারণা যে, ধর্ম যদি না থাকত তাহলে তো পৃথিবী রক্তে ভেসে যেত! এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল কারণ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে যে সত্য আমরা দেখতে পাই তা হলো, এ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত রক্তপাত হয়েছে, তার ভেতর সবথেকে বেশি রক্তপাত হয়েছে ধর্মের কারণে।
ধর্ম পাপ আর পূণ্যের কথা বলে কিন্তু পাপ আর পূণ্য কী? পাপ আর পূণ্য দিয়ে, যে পাপ আর পূণ্য করছে সে ছাড়া, আরেকজন মানুষের কী কোনো ক্ষতি হয়? কোনো উপকার হয়? সভ্যতা বিকাশের পথকে সুগম করে, পাপ আর পূণ্য? মানুষের ভেতর কী পাপ আর পূণ্য বোধ থাকা উচিৎ? নাকি ন্যায়-অন্যায় বোধ থাকা উচিৎ?
যে কোনো অপরাধী'ই অপরাধ করবার পেছনে কারণ দেখায় আবার অনেক অপরাধী, অপরাধ করবার সময় বোঝেই না যে, সে অপরাধ করছে, তার কাছে তখন অপরাধটাকেই স্বাভাবিক বলে মনে হয়!
আবার কিছু অপরাধী থাকে যারা অপরাধ করার পর অনুশোচনায় ভোগে এবং এ থেকে বেরিয়ে আসবার জন্য সে আরেকটি অপরাধের পথ বেছে নেয়!
ন্যায়-অন্যায় বোধ কী? তা অপরাধী জানে না কারণ তার ভেতর ন্যায়-অন্যায় বোধ কাজ করে না! অপরাধীর ভেতর যদি ন্যায়-অন্যায় বোধ কাজ করত তাহলে সে অপরাধ করতে পারত না। সমস্ত মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ হতে হলে একজন মানুষের যে শিক্ষা প্রয়োজন তা হল, প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা। ধর্ম কী মানুষকে সেই শিক্ষা দেয়?-
অনেক শিক্ষাই হয়ত ধর্ম দেয়, তবে ধর্মের শিক্ষার মধ্যে যে বৈষম্য! অসহিষ্ণুতা! বিদ্বেষের বীজ গুলো রয়ে গেছে এটা অস্বীকার করার যে কোনো উপায়'ই নেই।
একটি মানব শিশু প্রথা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না তার মস্তিষ্কে প্রথা ঢুকিয়ে দেয়া হয়। প্রাথমিক পযায়ে'ই শিশুটিকে শেখানো হয় লিঙ্গের দ্বৈততা আর বলা বাহুল্য যে, যে কোনো দ্বৈততাই বিরোধ সৃষ্টি করে। কিন্তু সত্য হচ্ছে প্রতিটি মানুষ সব সময়'ই এক একলা পৃথক সত্তা মাত্র। যে শিক্ষা মানুষকে প্রকৃত মানুষ হবার শিক্ষা দেয় না, সে শিক্ষা মূল্যহীন। শিক্ষা ব্যবস্থায় মূল্যহীন শিক্ষা বর্জনীয় নয় কী?
একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার গোড়ায় যদি গলদ থাকে, তাহলে সে দেশের মানুষ প্রকৃত শিক্ষা পায় না, সে দেশে শিক্ষিত জাতি তৈরি হয় না, সে দেশ থেকে উন্নতি আশা করা বোকামি।
প্রকৃত শিক্ষা অর্জিত হবার রাস্তা খুঁজে পাওয়া যায় সহনশীলতার শিক্ষার মাধ্যমে। এবং প্রকৃত জ্ঞান পূর্ণতা লাভ করে সহনশীলতার মাধ্যমে। চিন্তা- জ্ঞানের পথে, বোধকে জাগ্রত করে। চিন্তাকে মুক্ত করে রাখতে হবে, নাহলে সমাজের দেওয়া, ধর্মের দেওয়া সীমানাতেই থেমে যেতে হবে। নাহ্, থামা যাবে না.... যেতে হবে দিগন্তে....