বাংলাদেশ সরকারে লক্ষ্য পার্বত্য চট্টগ্রামকে ট্যুরিজম বিজনেজ এরিয়ায় পরিণত করা। ইতোমধ্যে পাহাড়ি এলাকার ঐতিহাসিক নামগুলো মুছে দিয়ে নীলগিরি, সাজেক ভ্যালী, নীলাচল, ইত্যাদি বাহারি নাম দিয়ে পাহাড়ে নিরীহ খেটে খাওয়া সহজ সরল মানুষগুলোর জমি দখল করে অনেক ট্যুরিস্ট স্পট নির্মাণ করা হয়েছে। এসব বেশিরভাগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে দেশের অন্যতম বৃহৎ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
পাহাড়ে বেড়াতে আসা ট্যুরিস্টরা পাহাড় দেখতে দেখতে একসময় বোর হয়ে যাবে। তারা পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খাবারের পাশাপাশি আরো নতুন কোনো খাদ্য খেতে চাইবে। পাহাড়ের ডিফারেন্ট টেস্ট নিতে চাইবে। এখনো অনেকে ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে চায়, ন্যুনতম চক্ষুলজ্জার কারণে মুখফুটে বলতে পারে না। অনেকে আবার সেই ন্যুনতম চক্ষুলজ্জা আর মানসম্মানের কোনো প্রকার তোয়াক্কা না করে সরাসরি বলে ফেলে যে পাহাড়ে কোথায় কোথায় পাহাড়ি মেয়ের সাথে রাত কাটানো যায়, দুই এক ঘন্টা শোয়া যায়!
এমন অবস্থা চলতে থাকলে একদিন এসব পাহাড়ি মেয়ে সন্ধানীদের সেসব নোংরা ইচ্ছেগুলো পূরণ হতে খুব বেশি অসুবিধে হবে না।
নিয়ন্ত্রনহীন পরিস্থিতির চাপে পড়ে পাহাড়ি মেয়েদের বাধ্য করা হবে বিভিন্ন কুকর্মে লিপ্ত হতে। ট্যুরিজম তখন আর শুধুমাত্র ট্যুরিজম থাকবে না, পরিণত হবে সেক্স ট্যুরিজমে। বিদেশ থেকে রিক্রুট করা হবে ইন্টারন্যাশনাল সেক্স ওয়ার্কার। তাদের নিবীড় সংস্পর্শে পাহাড়ের অপেশাদার মেয়েরাও চরম পেশাদারিত্বে পরিণত হবে। পাহাড়ের বিপথগামী সুযোগ সন্ধানী অনেক ছেলে অল্প সময়ে অধিক ইনকামের লোভে পড়ে হয়ে যাবে সেই সেক্স ট্যুরিজমের দালাল। ট্যুরিজম, সেক্স ট্যুরিজমের পাশাপাশি এসব রিলেটেড আরো বিভিন্ন বিজনেস শুরু হবে।
ট্যুরিজম বিজনেজ এরিয়ায় খোলা হবে বিদেশী স্ট্যান্ডার্ড মদের ফ্যাক্টরী। এখনো দেশের অনেক স্বনামধন্য বিভিন্ন গ্রুপ অব কোম্পানিরা পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকা ইজারা দিয়ে রেখেছে। বিভিন্ন হোটেল, মোটেল, রিজোর্ট বানিয়ে জায়গাগুলো দখল করে রেখেছে। এরাই একসময় সেই ব্যবসাগুলোর প্রতিনিধিত্ব করবে।
পাহাড়িদের ধ্বংস আর নির্মূলকরণের সূত্রে ধবংসযজ্ঞের যাবতীয় অনুষঙ্গ, অনুসিদ্ধান্ত যোগ হবে একের পর এক।
২০১৫ জানুয়ারির দিকে এক কানাডিয়ান ভদ্রলোককে নিয়ে বান্দরবানে গিয়েছিলাম। তিনি প্রথমেই যেতে চাইলেন নীলগিরি। আমি তাঁকে বললাম, "আমি নীলগিরি যেতে পারব না, আমি যাব না।" তিনি আশ্চর্য হয়ে বললেন যে, "আমি এত আশা নিয়ে বান্দরবান এলাম নীলগিরি যাওয়ার জন্য, আর তুমি বলছ যাবে না!" তারপর তাঁকে আমি নীলগিরিতে কেনো যাবো না ডিটেইলস বললাম। বললাম, দেশের সেনাবাহিনী এখানকার নিরীহ ম্রো-দের গ্রামসহ উচ্ছেদ করে এই নীলগিরি বানিয়েছে। আর সেখানে আমি মউজমাস্তি করতে একজন ট্যুরিস্ট হয়ে যাবো, এটা আমি পারব না। আপনি গিয়ে বেড়িয়ে আসেন।
ভদ্রলোক আমার কথা শুনে আমার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বললেন, "আমিও আর যাব না। ওখানে কারোরই যাওয়া উচিৎ না"।
একজন দূর দেশের কানাডিয়ান ভদ্রলোক আমার এক কথাতেই আমাদের দুঃখ উপলব্ধি করতে পেরেছেন। দুঃখ লাগে, এই দেশেরই কোটি কোটি মানুষ খুব কাছ থেকেও আমাদের বোঝে না, আমাদের দুঃখ বোঝে না! তারা শুধু মায়ানমার, ফিলিস্তিন বুঝে।