অনন্যা চাকমা ননা

লেখক ও ব্লগার।

দলীয় স্বার্থ পরিত্যাগ করুন, জুম্মো জাতির অস্তিত্ব রক্ষা করুন

চুক্তি প্রত্যাখান করে যদি ইউপিডিএফ দলের জন্ম না হতো তাহলে জাতির রুপক, অনিমেষ কুসুমপ্রিয়, প্রদীপলালসহ অনেক মেধাবী সন্তানকে হারাতে হতো না। মূল পিসিজেএসএস ভেঙ্গে এম এন লারমা দল সৃষ্টি না হলে মেধাবী সন্তান সুদীর্ঘকে জাতি হারাতো না।

ইউপিডিএফ থেকে বিতাড়িত হয়ে তপন জ্যোতি চাকমা সেনা সহায়তায় ও এম এন লারমা দলের প্রশ্রয়ে গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ গঠন না করলে আরেক জনপ্রিয় মেধাবী সন্তান মিঠুনকে জাতি হারাতো না। মিঠুন চাকমার হত্যাকান্ডের পর পর যদি গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ ও এমএন লারমা দল ডিজিএফআই কর্তৃক নির্দেশিত ও চাপিয়ে দেয়া ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসতো তাহলে শক্তিমান চাকমা হত্যাকান্ডের শিকার হতেন না। তপন জ্যোতি ওরফে বর্মাকেও এভাবে নির্মম মৃত্যু বরন করতে হতো না।

আর চুক্তি পরবর্তী ইউপিডিএফ গঠিত না হলে পুরো পাহাড় সেটলারদের অভরায়ণ্যে পরিণত হতো। কারণ, চুক্তি অনুযায়ী পিসিজেএসএসকে সবগুলো অস্ত্র জমা দিতে হয়েছে। সেটলার বাঙ্গালিদের তখন পাহাড়ের আনাচে কানাচে ঘোরাফেরা করতে কোনো ভয় থাকতো না। এতে বনে জঙ্গলে কাজ করতে যাওয়া পাহাড়ি নারীদের ওপর ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা অহরহ ঘটে যেতো। দীর্ঘ সময়েও যেহেতু চুক্তির মূল বিষয়গুলো বাস্তবায়ন হয় নি তাই সেটলার কর্তৃক ভূমি দখলের পরিমাণ বর্তমানের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে যেতো।

পিসিজেএসএস কর্তৃক চুক্তি স্বাক্ষর পাহাড়ি জনগণের স্বার্থে। চুক্তি প্রত্যাখান করে ইউপিডিএফ দল গঠন হয়েছিলো পাহাড়িদের স্বার্থে। এমএন লারমা দল গঠন তাও পাহাড়িদের স্বার্থে। হ্যাঁ, সবকিছু পাহাড়িদের স্বার্থ বিবেচনা করে করা হয়েছিলো। কিন্তু দুঃখের বিষয় দল গঠনের পর জাতির স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে সবদলের কার্যক্রম পরিচালিত হয় দল এবং ব্যক্তি স্বার্থে।

দলের আধিপত্য বিস্তার করতে সবদলই কোনো না কোনো সময়ে প্রতিপক্ষ দলকে দূর্বল করতে নির্লজ্জভাবে সেনাবাহিনীর সহায়তা গ্রহণ করেছে। আর সেনাবাহিনীও কখনো চায় নি পাহাড়ে নির্দিষ্ট বা কোনো একক দল শক্তিশালী হয়ে উঠুক। যখনই বুঝতে পেরেছে একটা দল শক্তিশালী হয়ে উঠছে তখনই বিপক্ষ দলের মাধ্যমে সে দলের সাংগঠনিক শক্তি এবং বিকাশের ক্ষেত্র দূর্বল করে দেয়।
জাতির স্বার্থে গঠিত আঞ্চলিক দলগুলো সবকিছু জেনে বুঝে শুধুমাত্র দলীয় স্বার্থে ডিজিএফআইয়ের কৌশলের নিকট ধরা দেয়।

মেধাবী হলেও শক্তিমান চাকমা তার মেধাকে সঠিক জায়গায় ব্যবহার করেন নি। তার হত্যাকান্ডের পর আওয়ামীলীগের বক্তব্যতেই বোঝা যায় তিনি পাহাড়ের নাকি আওয়ামীলীগের। আর যে ব্যক্তি বা দল নিজের স্বজাতীয় বিপ্লবী নারী নেত্রীদের অপহরণ করে, ভয় ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন ধরণের জবান বন্দি রাখে, মুক্তিপণ নেয় সে দল বা ব্যক্তি জন ধিকৃত হয়। নিক্ষিপ্ত হয় আবর্জনায়।

দল গঠন করা খারাপ কিছু না। খারাপ হচ্ছে জাতির স্বার্থ পরিত্যাগ করে দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া। জাতির স্বার্থকে প্রাধান্য দিলে যতই মত, পথ, আদর্শের পার্থক্য থাকুক কোনো দলই প্রতিপক্ষের লোকজনকে খুন, অপহরণ এবং উচ্ছেদ করতো না।

সময় এখনো কিছুটা রয়েছে। প্রতিশোধ মূলক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসুন, দল, মত যা কিছু হোক জাতীয় স্বার্থের কথা ভাবুন।

1205 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।