আইনের একটা ব্যাপার হচ্ছে, আইন, সংখ্যায় লঘু মানুষদের বিচার করে। বৃহৎ সংখ্যার অপরাধীদের আইন দ্বারা নিবৃত করা যায় না।
যে দেশে যৌন হয়রানীকে, একটা বৃহৎ অংশ তাদের সংস্কৃতি মনে করে সেই দেশে শুধু আইন দিয়ে হবে না, দরকার একটা সামাজিক বিপ্লব। ব্যাপারটা অনেক কঠিন। কারণ কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক, মানুষেতেই সুর-অসুর। অসুর থেকে সুর হতে পারা টা চর্চার বিষয়। অনেক অনেক চেষ্টা আর সাধনার পর একজন মানুষ সত্যিকার অর্থে মানুষ হতে পারে।
১৪মে ২০০৯ মহামান্য হাইকোর্ট একটি দিকনির্দেশনামূলক নীতিমালা প্রদান করেন।
নীতিমালার ৪ ধারায় যৌন হয়রানীর সংজ্ঞা বলা হয়েছেঃ
ধারা ৪ (১) যৌন হয়রানী বলতে বুঝায়-
ক) অনাকাঙ্খিত যৌন আবেদনমূলক আচরণ (সরাসরি কিংবা ইঙ্গিতে) যেমনঃ শারীরিক স্পর্শ বা এ ধরনের প্রচেষ্টা;
খ) প্রাতিষ্ঠানিক এবং পেশাগত ক্ষমতা ব্যবহার করে কারো সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করা ;
গ) যৌন হয়রানী বা নিপীড়নমূলক উক্তি।
ঘ) যৌন সুযোগ লাভের জন্য অবৈধ আবেদন।
ঙ) পর্ণোগ্রাফী দেখানো।
চ) যৌন আবেদনমূলক মন্তব্য বা ভঙ্গী।
ছ) অশালীন ভঙ্গী, অশালীন ভাষা বা মন্তব্যের মাধ্যমে উত্ত্যক্ত করা, কাউকে অনুসরণ করা বা অশালীন উদ্দেশ্য পূরণে কোনো ব্যক্তির অলক্ষ্যে তার নিকটবর্তী হওয়া বা অনুসরণ করা, যৌন ইঙ্গিতমূলক ভাষা ব্যবহার করে ঠাট্টা বা উপহাস করা।
জ) চিঠি, টেলিফোন, মোবাইল, এসএমএস, ছবি, নোটিশ, কাটুন,বেঞ্চ, চেয়ার -টেবিল, নোটিশ বোর্ড, অফিস, ফ্যাক্টরী, শ্রে্ণীকক্ষ, বাথরুমের দেয়ালে যৌন ইঙ্গিতমূলক অপমানজনক কোনো কিছু লেখা।
ঝ) ব্লেকমেইল অথবা চরিত্র লঙ্ঘনের উদ্দেশ্যে স্থির বা ভিডিও চিত্র ধারণ করা।
ঞ) যৌন হয়রানীর কারণে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং শিক্ষাগত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হওয়া।
ট) প্রেম নিবেদন করে প্রত্যাখাত হয়ে হুমকী দেয়া বা চাপ প্রয়োগ করা।
ঠ) ভয় দেখিয়ে বা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বা প্রতারণার মাধ্যমে যৌন সম্পর্ক স্থাপন বা স্থাপনে চেষ্টা করা।
মনে হল আপনি এই সংজ্ঞা টি হয়ত জানতেন না। আরো বেশ কয়েকটি আইন আছে, সেইটাও আপনার জানার কথা। না জানলেও সেইটা নিজের স্বার্থে জেনে নিয়েন। কারণ দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে আইন জানতে আপনি বাধ্য। আদালত ধরেই নেয় আপনি দেশের সকল আইন-কানুন-বিধি জানেন।
এই ব্যর্থ প্রচেষ্টা কেনো করলাম জানি না। করলাম, হয়তো ওই প্রবাদ, "বাঙালি কে হাইকোর্ট দেখাও" সেইটার দায় মেটাতে।
আপনার পোস্ট পড়লাম। নাদিয়া ইসলামে আপনি মুগ্ধ। আপনি এতোই মুগ্ধ যে নাদিয়া ইসলাম কে আপনি লেখক সমাজের "মেনকা" বানিয়ে দিয়েছেন। এবং অন্যান্য বিশ্বামিত্রদের ধ্যান ভাঙ্গানোর দায়ে আপনি তাকে দোষী সাবস্ত করছেন। ওয়াও।
লেখা দেখতে লেখকের প্রোফাইলে আপনি ঢুকেছেন, এবং লেখার পাশাপাশি তার সমস্ত ছবি দেখে আপনি একটা যৌনতামূলক বিনোদন নিয়ে ফিরেছেন। এবং সঙ্গে সঙ্গে আপনার সূচনা বক্তব্য হয়ে গেল, সেই লেখকের বুক এবং বুকের উপর তার প্রাক্তন প্রেমিকের ট্যাটু। তার আকর্ষনীয় চেহারা, তার পোশাক তার বাদ বাকি যাবতীয় যতকিছু।
সেক্সুয়াল বিহেইভিয়ার সম্পর্কে আপনার যে নূন্যতম কোনো ওরিয়েন্টেশন নাই সেটা বোঝা গেল আপনার পোস্টে। সেটা আপনার দোষ না। আমাদের দেশে যৌনতা যেখানে ট্যাবু, নারী কে যেখানে একটা যৌন সামগ্রী রূপে দেখা হয় সেখানে আপনার কাছ থেকে এইরকম পোস্ট পাওয়া অস্বাভাবিক না।
আমাদের দেশের শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষের মনমানসিকতা ঘুরে ফিরে এইরকমই। এখন তারা যে লেভেলেরই, যে শ্রেণী পেশারই হোক না কেনো।
আপনি এবং আপনার মতো যারা ভাবেন, তাদের অনেকেরই হয়ত নাদিয়া ইসলামের সাথে নানান রকম সম্পর্ক করার ফ্যান্টাসি জাগ্রত হতে পারে। আপনাদের চিন্তার প্রতিবন্ধকতা কিংবা, দারিদ্রতা টা এটাই যে আপনারা এর চেয়ে অন্যকিছু ভাববেন, সে টা সম্ভব না। ব্যাঙ এর লাফানোর যেমন লিমিটেশন থাকে, ঠিক তেমনি এইরকম যৌন কাঙ্গাল মানুষ দেরও ঘুরে ফিরে একই কাহিনী। সেই লেভেলের মানুষদের জন্য আমার একটি প্রশ্ন, আচ্ছা আপনারা নাদিয়ার সাথে সময় কাটাবেন কি করে? তাকে চুমু খেতে হলে তো আপনাদের ব্রাত্য রাইসুকেও চুমু খেতে হবে। আপনাদের মন কি এতো উদার? নাকি তখন ব্রাত্য রাইসু লেখা আছে নাকি অনন্ত জলিল লেখা আছে সেইটা ম্যাটার করে না?