আমরা ভালোবাসার জন্যই বেঁচে থাকি অথবা ভালোবাসাই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। প্রাণীকূলের জন্য ভালবাসা আবশ্যক। তা যেমন একটি পাখির জন্য, তেমনি একটি মাছের জন্য, ঠিক তেমনি কথাটি গাছের জন্যেও প্রযোজ্য। গাছে পানি দিয়ে যেমন গাছের যত্ন নিই, তেমনি প্রেম দিয়ে আমরা মানুষকে বা মানব হৃদয়কে বাঁচিয়ে রাখি। আমার আজকের বিষয় ভালোবাসা বা প্রেম নিয়ে। প্রেমটা নারী -পুরুষের বা কিশোর-কিশোরীর প্রেমও হতে পারে। প্রেমের বয়সে কম বেশ সকলেই প্রেমে পড়ে, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীর প্রেম। এটা হরমোনের কারণেই হয়, না চাইলেও বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ কাজ করে। এটা মানুষের জৈবিক চাহিদা, আমরা উপেক্ষা করতে পারি না, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আবার অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তা যৌন বিকৃতিতে পরিণত হয়। যৌন চাহিদা যাতে যৌন বিকৃতিতে পরিণত না হয়, তার জন্য নিজেকে বুঝাতে হবে। বুঝাতে হবে আমরা সমাজে বসবাস করি। সুন্দরভাবে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারি, তার জন্যে কিছু অপেক্ষা করতে হবে। নিজেকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে হবে সব কিছুর আগে। শরীর চাইলো বলেই আমি যেখানে সেখানে, যখন তখন যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াবো এর কোন মানে হয় না। যৌন চাহিদা আর যৌন বিকৃতি দুটি সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। যৌন বিকৃতির ফলে মানুষ হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আজকাল অহরহই রেইপ হতে দেখা যায়। যেমন ধরা যাক, ফেইসবুকে কোনো মেয়ে যখন তার সুন্দর ছবি পোস্ট করে, তখন তার অসংখ্য মেসেজ আসতে থাকে তার রূপের প্রশংসায়। এমন না যে, যারা এইসব মেসেজ দেয়, তারা একজনকেই দেয়, তারা কমপক্ষে বিশ /পঁচিশ জনকে এই জাতীয় মেসেজ দেয়, যাকে বলে বড়শি ফেলা। যে টোপ দেবে সেই ধরা খাবে। তা একজন, দুইজন, তিনজন হতেই পারে। আহাম্মকের সংখ্যা তো আর কম নয় দুনিয়ায়। সবার অবশ্য তারা রূপের প্রশংসা করে না। মানুষ বুঝে বুঝে প্রশংসা করে। যে কবিতা লিখে তারে কবিতা দিয়ে টোপ ফেলে। কেউ কেউ আবার গান পাঠায়, এতো বাছাই করা গান, শুনলে মনে হবে আপনার জন্যে তার প্রেম কাতর হৃদয় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে আরেক পার্টি আছে, শুভ সকাল, শুভ দুপুর, সন্ধ্যা, বিকেল, রাত, শুভ মাঝরাত দিতেই থাকবে, একটা রিপ্লাই করেছেন তো, সে কথার জালে আটকাবে। এমন কথা বলবে আপনি উত্তর না দিলে হৃদয়ে জ্বালা শুরু হবে।
এটা শুধু ফেইসবুকের কাহিনী বললাম। এর বাইরে বিয়ে বাড়িতে দেখা, স্কুল- কলেজের গেইটে দেখা, স্কুল কলেজের কথা নাই বলি, আত্নীয়ের আত্নীয়, পাড়ায় নতুন ভাড়াটে হয়ে আসা, বান্ধবীর চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো ভাই, কথা আর না বাড়িয়ে যা বলতে চাই কোনভাবে না হয় প্রেম হয়েই গেলো এদের কোন এক জনের সাথে চলতি পথে। কয়েকটা ডেটিং হয়েই গেলো। সামনে জন্মদিন একবস্তা বা বিশাল এক ঝুড়ি ফুল আর কেক নিয়ে হাজির হয়ে আপনাকে বা তোমাকে এমন সারপ্রাইজ দিলো বয়ফ্রেন্ড যা জীবনে নিজের বাপ -মা'ও করেননি। আবেগে চোখ দিয়ে পানি চলে আসলে বুকে ঝাপাইয়া পড়লেন। সেও বুঝতে পারলো কিভাবে আপনাকে ঘায়েল করা যায়। বাসায় গিয়ে আপনার রাগ হলো মা- বাবার প্রতি, যারা জীবনে কোনোদিন আপনার বার্থডে সেলিব্রেশন করেননি। আপনার মনে হলো মা-বাবা আপনাকে নিয়ে যতোটা ভাবেন না, প্রেমিক আপনার ব্যাপারে তারচেয়ে বেশি সিরিয়াস। আপনি তাকে মন খুলে পরিবারের গোপন, খুটিনাটি কথা বলতে থাকলেন, সে আপনাকে জামা, কসমেটিক গিফট করার পাশাপাশি, ব্রা-প্যান্টি সহ স্যানিটারি ন্যাপকিনও কিনে দেয়। সে আপনাকে নিজের বউ মনে করে, এমনকি বন্ধু মহলে আপনাকে তার বউ বলেও পরিচয় করিয়ে দেয়। আপনি যেই কাজ করতে আগ্রহী, সেই কাজে পরিবার দেয় বাধা আর সে দেয় উৎসাহ। আপনি বুঝতে পারেন, পরিবার আপনাকে মোটেও বুঝে না, যতোটুকু সে বুঝে। আপনি স্বপ্ন বুনতে থাকেন, সে পাশে থাকলে, আপনি অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবেন। সে সেটা শুধু বুঝে তা নয়, এমনও বলে, পরিবার বেশি বাড়াবাড়ি করলে, তার কাছে চলে যেতে। আপনিও তাই ভাবেন। এবার সে আপনাকে বিশ্বাস দেয় সব কিছুর আগে আপনার পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তবেই বিয়ে, আপনিও মনে করেন, একদিন সবাইকে দেখিয়ে দেবেন এই ছেলে ভুল ছিলো না, এই ছেলে কোনোদিন আপনার খারাপ চায়নি। তারপর যেদিন ছেলেটি ওফার দিল, শারীরিক সম্পর্ক তৈরী করার আপনার মোটেও খারাপ লাগেনি, কারণ আপনি জানেন সেই আপনার স্বামী। বিয়ে না হলেও মনে মনে তাকে ছাড়া দুনিয়ায় আর কোনো পুরুষকে আপনি কল্পনাও করেননি। আর সেতো চায়ই আপনি পড়াশোনা শেষ করুন সব কিছুর আগে। তাই বিয়ের কথা এখন তোলার কোনো মানেই হয় না। এভাবে একদিন, দুইদিন, তিনদিন, শারীরিক সম্পর্ক হওয়ার পর আপনার নিজেও বিষয়টিকে উপভোগ করতে শুরু করেছেন। মাঝেমধ্যে এইসব দৃশ্যের ছবিও তুলে রাখেন দুজনে মজা করে। নিজেদের সুন্দর মুহূর্তের ছবি দেখে শিহরিত হন নিজেরাই। হঠাৎ একদিন দেখলেন কিছু নিয়ে মতের মিল হচ্ছে না বা ছেলেটা বিপদে পড়েছে, ভবিষ্যৎ বউ হিসেবে তাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করার কথা সে বলছে, আপনি টাকার জোগাড় করে দিতে পারছেন না, তখন দেখলেন তার আরেক রূপ। সে সমানে আপনাকে খোঁটা দিয়ে যাচ্ছে, এতোদিন আপনার পিছনে টাকা খরচ করার। বন্ধু বান্ধবদের বলে বেড়াচ্ছে আপনার নিচে সে কতো টাকা খরচ করে আসছে এতোদিন। আপনার কাছের বান্ধবীরাও আপনাকে দোষারোপ করছে, প্রেমিকের টাকা ভাঙ্গিয়ে খাওয়ার জন্য। যখন উপায় নেই, তখম পরিবারকে জানালেন তাকে টাকা দিতে। পরিবারের তো আগে থেকেই এই ছেলেকে পছন্দ না, তারা সহজ সমাধান দিলেন এই ছেলেকে ছেড়ে দে। আপনিও নিজের ভুল বুঝতে পেরে দূরত্ব তৈরি করলেন। এরমধ্যে একদিন জানতে পারলেন বাজারে আপনার ভিডিও একটি ভাইরাল হয়েছে। মানুষ ছিঃ ছিঃ দিচ্ছে, পরিবারে বাপ, ভাইয়ের সামনে মুখ দেখাতে পারছেন না। আত্নীয় স্বজন ফোন করে যা তা বলছে আপনার পরিবারের মানুষকে। বন্ধু-বান্ধব আপনাকে এড়িয়ে চলছে, কারণ তাদের পরিবারের লোকজন আপনার সাথে চলতে নিষেধ করেছেন। আপনার মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। মামলা করেছেন, পুলিশি জেরায় আপনি হয়রান, আপনার পরিবার হয়রান।
