দিলশানা পারুল

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে পড়াশোনার পাশাপাশি লম্বা সময় ধরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সাথে যুক্ত ছিলেন দিলশানা পারুল। দশ বছর বামপন্থি রাজনীতির সাথে ‍যুক্ত ছিলেন, তারপর দশ বছর এনজিওতে শিক্ষা গবেষনা এবং বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করেছেন। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় এডুকেশন সেক্টরে কাজ করছেন। এর পাশাপাশি অনলাইনে লিখালিখি করেন।

মেয়েদের আত্মবিশ্বাস কম কেন?

বাঙালি মেয়েদের ক্ষেত্রে আমি কমন যে সীমাবদ্ধতাটা খেয়াল করেছি সেইটা হচ্ছে আত্মবিশ্বাসের অভাব। জড়সড় তটস্থ হয়ে থাকা মেয়েগুলোকে খুব ভালো করে অবজারভ করে বোঝার চেষ্টা করেছি এর শুরুটা আসলে কোথায়?

আমার কাছে মনে হয়েছে শরীরের বাঁক নিয়ে আমরা মেয়েরা এত ব্যাতিব্যস্ত থাকি, এত অস্থির থাকি বাঁক লুকানোর জন্য যে এই বাঁকগুলোকে আর এক সময় নিজের শরীরের অংশ ভাবি না। ইচ্ছে হলেই আমাদের মেয়েরা এক দৌড় লাগাতে পারে না শরীরের বাঁক স্পষ্ট হবে বলে। প্রয়োজন হলেই বাস ধরার জন্য বা বন্ধুকে ধরার জন্য দৌড় লাগাই না। এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়েগুলোও না। সেই যে কৈশোরে মা বা খালা বা বড় বোন শরীরের বাঁক কে চিনিয়েছে তারপর বলেছে বাপু সামলে যেন দেখতে খারাপ না লাগে! বাঁক লুকাও নইলে লোকে কি বলবে?

ওই যে পাছে লোকে কি বলবে ৬০ বছরের বুড়ি হওয়া অব্দি আমরা সেইটা ছাড়তে পারি না। দৌড় দেয়ার আগে দশবার ভাবি আমাকে কেমন দেখাবে। এই মনস্তত্ত্বের সাথে আসলে পোশাকের সম্পর্ক নাই। কারণ আমি এমন অনেক নারী কে চিনি স্রেফ শাড়ি পরেই এরা র্দূদান্ত সাহসী, আত্মবিশ্বাসী। মিটিং করছে, মিছিল করছে, বড় বড় সেমনিারে বক্তব্য দিচ্ছে তার পোশাক তার আত্মবিশ্বাসে কোথাও চিড় ধরাচ্ছে না। আবার ফ্যাশনবল এমন অনেক মেয়ে কে দেখেছি ফ্যাশন করে প্যান্টের উপর একটা আটোসাটো টি শার্ট জড়িয়েছে ঠিকই কিন্তু নিজের উপর চার আনা বিশ্বাস নাই। চোখ মুখে জড়তা, অস্বস্তি, নিজেকে ক্রমাগত মেয়ে হিসেবে আবিষ্কারে বিব্রত।

অনেককেই দেখি ওড়নার উপর দুনিয়ার তাবত রাগ ঝাড়েন। নারীর মনস্তত্ত্ব না পাল্টে আসলেই শুধু যদি ওড়নাটা ফেলে দেন কোনো লাভ হবে? আমি যখন চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যেতাম কখনোই ওড়না ছাড়া যাই নাই, এবং নারী পুরুষ সবাইকে পিছনে ফেলে ফার্স্ট হয়েই চাকরি গুলো পেয়েছি। আমার ওড়না কিন্তু আমার আত্মবিশ্বাসে কখনো চিড় ধরায় নি। এইটা একটা পোষাকের অংশ। দ্যাটস অল। 

শাড়ি বা প্যান্ট শার্ট বা বোরখা সবই পরিধেয় বস্ত্র। পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় নিয়ে মেয়েগুলো ঠিক করে সে কি পরবে (প্রচ্ছন্নভাবে বললে সমাজ ঠিক করে দেয় নারী বা পুরুষের পোষাক কি হবে)। নারীর আত্মবিশ্বাস তৈরিতে পরিধেয় পোষাক হচ্ছে সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে শেষে ভাবার জিনিস। অথচ অনেককেই দেখি নারী অধিকার এর কথা শুরু করেন মেয়েরা কি পোষাক পরলো না পরলো এইখান থেকে। যে কোনো মেয়ের তার প্রাপ্য সম্মান এবং অধিকার আদায়ের প্রথম শর্ত হচ্ছে নিজেকে বারগেইন পয়েন্টে নিয়ে আসা। মানে পরিবারের সাথে সমাজের সাথে নিজের অধিকার নিয়ে যেন বারগেইন করতে পারে সেই যোগ্যতা অর্জন করা। পোষাক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে বা ওড়না ফেলে দেয়ার মধ্যে দিয়ে কি সেই যোগ্যতা অজর্ন হয় না হবে ?

( বি:দ্র: চাইলেই এই লিখাটায় মেয়েদের আত্মবিশ্বাসের পিছনে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থা কেমন করে কাজ করে দেখাতে পারতাম। কিন্তু এই কাজটা আর করবো না । মেয়েদের দায়িত্ব আসলে মেয়েদের নিতে হবে, এর কোনো ব্যতয় নাই )

2061 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।