আচ্ছা, মুরুব্বীদের সামনে সিগারেট খাওয়া বেয়াদবী কেনো? না এ প্রশ্নটা আমার না, এক মার্কিন অধ্যাপকের। ১৯৯৯ সালে আমেরিকাতে যখন পড়তে আসি, তখন একদিন সকালবেলা দেখলাম বিভাগের সামনে মাটিতে বসে ষাটোর্ধ অধ্যাপক মহিলা প্রথম বর্ষের তিন ছাত্র-ছাত্রীর সাথে বসে সিগারেট ফুঁকছেন। ছাত্র-ছাত্রী তিনজন উনার সাথে বসে সিগারেট টানছে আর আড্ডা দিচ্ছে। আমিও যেয়ে ওদের সাথে বসলাম এবং বোকার মতো বললাম আমাদের দেশে মুরুব্বীদের সামনে সিগারেট খওয়া চরম বেয়াদবী। উনি জিজ্ঞাসা করলেন কেনো? আমি বললাম জানি না কেনো। তিনি তখন বললেন, তোমরা তাহলে কিভাবে খাও, আমি বললাম লুকিয়ে যাতে সিনিয়র কেউ না দেখে। তিনি আবার বললেন, এটা কি হিপোক্রাসি নয়, আমি বললাম হ্যাঁ হিপোক্রাসি।
পুরানো এ কথা মনে পড়লো মেয়েদের সিগারেট খাওয়া নিয়ে হটাৎ করে কোনো এক অর্বাচীন বালক এক ভিডিও বানানোতে এটা নিয়ে হইচই হওয়াতে। বাংলাদেশের নারীদের “আদব-কায়দা” শিখানোর ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থেকে সুইপার সবাই এক জোট। যেকোনো উসিলাতেই চলে নানাবিধ জ্ঞান দেবার প্রতিযোগিতা। এমনকি এক নারীও সুযোগ পেলে আরেক নারীকে আদব-লেহাজ সম্পর্কে জ্ঞান দিতে শুরু করেন। তো যে বালক নারীদের এত আদব কায়দা শিক্ষা দিতে চায় সে আবার এমন এক মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেছে যার গানের কথা হলো “তুমি কুত্তার চেয়ে হারামী।“ বেশ! বুঝা গেলো আদব কায়দার ধরণ। ভিডিও লিঙ্ক কমেন্ট বক্সে।
আচ্ছা, বাংলাদেশে মেয়েদের সিগারেট খাওয়া নিয়ে জাত সমাজ গেলো বলে সোরগোলের কারণ কি? নিম্নবিত্ত মহিলারা সব সময় প্রকাশ্যে বিড়ি খান, তখন কোনো উচ্চবাচ্চ নাই, তো হটাৎ মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্তের মেয়েদের প্রকাশ্যে ধূমপান নিয়ে সমস্যার কারণটা কি? এর উৎস কি? ইরান, মধ্যপ্রাচ্যের রক্ষণশীল দেশগুলিতেতো মহিলারা প্রকাশ্যে বোরকা, হিযাব, নিকাব পরেই ধূমপান করছেন। সে সমস্ত দেশে কাউকে এটা নিয়ে মাথা ঘামাতে বা ফতোয়া দিতে দেখা গেলো না, তো বাংলাদেশের মধ্যবিত্তের নারীকে ধূমপান করতে দেখলে সহ্য করতে না পারবার কারণটা কি? নাকি মেরুদণ্ডহীন মধ্যবিত্ত পুরুষরা মনে করেন ধূমপান হচ্ছে পুরুষত্বের প্রতীক? এখন এ প্রতীকখানাও যদি নারীরা নিয়ে নেয় তাহলে আর পুরুষত্ব দেখাবো কিভাবে এ ভেবেই কি এত রাগ?