বৈশালী রহমান

রিসার্চ এসিস্টেন্ট, নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা।

ধর্ষণের পেছনে সেক্সুয়াল ড্রাইভের তেমন কোনো ভূমিকাই নেই : আছে ক্ষমতা প্রদর্শন এবং এগ্রেশন

অর্থনীতিতে ফ্রি রাইডার্স প্রব্লেম নামে একটি থিওরি আছে। প্রাইভেট গুডস্, পাবলিক গুডস্, নন এক্সক্লুডেবল্ গুডস্ ইত্যাদি অর্থনীতির জার্গনের কচকচিতে না গিয়ে সহজভাবে বলা যায়, ফ্রি রাইডার্সরা হচ্ছে সেই প্রজাতির প্রাণী যারা সুবিধা নেবে ঠিকই, কিন্তু সেই সুবিধার জন্য বিন্দুমাত্র মূল্য পরিশোধ করতে বা এফোর্ট দিতে রাজি না।

আমেরিকায় ম্যাকডোনাল্ডস্ বা কেএফসিতে, অথবা ইউনিভার্সিটির অধিকাংশ ডাইনিং এ কিছু খেলে খাবারের প্যাকেট ফ্যাকেট ইত্যাদি নিজ দায়িত্বে ফেলতে হয়। কাজটা করা হয় এ কারণেই যাতে করে টেবিলগুলো খানিকটা হলেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে। এর ভেতরে কিছু প্রাণী পাওয়া যাবে যারা পরিষ্কার টেবিলের সুবিধাটা নেবে ঠিকই, কিন্তু নিজের খাবারের প্যাকেট নিজে পরিষ্কার করবে না। এরা ধরেই নেবে, "আরে আমি করছি না তো হয়েছে কী, জর্জ তো করবে (থিওরির ভাষায় "George will do this")। এই প্রাণীগুলোকেই বলা হয় ফ্রি রাইডার্স। আমাদের আশে পাশে আমরা এরকম প্রচুর প্রাণী দেখতে পাই। এই যেমন ধরুন, কলা খেয়ে খোসাটা রাস্তায় ফেলে দিলো বা থুতু ফেললো যেখানে সেখানে।

ট্রেনে বা বাসে আমরা দেখি থুতু পা পানের পিকের ছড়াছড়ি, চিপসের প্যাকেট ফেলে নোংরা করে রাখা, অথবা প্রস্রাবের তীব্র গন্ধ। যে প্রাণীগুলো এই কাজ করে, সেগুলোকে বলে ফ্রি রাইডার্স। লক্ষ্য করুন, এরা জনসম্পদের সুবিধা নিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেটা পরিষ্কার রাখার জন্য যে নূ্ন্যতম এফোর্ট দরকার, সেটা দিচ্ছে না। অন্তত চিপসের প্যাকেট কোনো ব্যাগে জমিয়ে রেখে ডাস্টবিনে ফেলা যায়, প্রস্রাবটা বাসে বা ট্রেনে না করে কষ্ট করে বাথরুম খুঁজে বের করে করা যায়, কিন্তু না। এরা তাও করবে না। এর মূলে রয়েছে ওই মানসিকতা, "আরে আমি না করলে কী হইছে, জর্জ তো করবে!"

অর্থনীতির অনেক থিওরি কিন্তু সমাজের মানুষের মানসিকতা যাচাইয়ে ব্যবহার করা যায়। আবার মানুষের সাইকোলজির অনেক কিছু অর্থনীতির থিওরিতে প্রতিফলিত হয়। যেমন, অর্থনীতির মূল ভিত্তিগুলোর মধ্যে একটিই হচ্ছে মানুষের অভাবের কোনো শেষ নাই। একটা পূরণ হবে তো আরেকটার উদয় হবে। যাহোক, আমরা আলোচনা করছিলাম ফ্রি রাইডার্স প্রব্লেম নিয়ে। মানুষ কেনো ফ্রি রাইডার্স হয় এটা নিয়ে অনেক তত্ত্ব আছে। কিন্তু আমার মতে মানুষের যে সাইকোলজিটা এই ফ্রি রাইডার প্রাণীগুলোকে সৃষ্টি করে সেটা হলো দায় এড়ানোর প্রবণতা বা অন্যের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা। অন্যের ঘাড়ে কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার প্রবাদটা এই থিওরি থেকে এসেছে কিনা কে জানে!

যাহোক, এই যে মানুষের এই দায় এড়ানোর প্রবণতা, এটা থেকে উদ্ধার পাওয়ার উপায় কী? উপায় সিম্পল্। যে দায় এড়াতে চায় তার ঘাড়ে যেমন করে হোক সেই দায়টা চাপিয়ে দেওয়া। তার দোষের দায়িত্ব, সমাজের প্রতি সে যে ক্ষতিসাধন করছে সেটার দায়িত্ব এমন একটা ব্যবস্থার মাধ্যমে তার উপরে চাপিয়ে দেওয়া এবং সেটা এমনভাবে নজরদারী করা যাতে করে সে কোনোভাবেই দায় এড়িয়ে যেতে না পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যেসব দেশে রাস্তায় থুতু ফেললে দুই’শ ডলার জরিমানা হওয়ার আইন আছে, এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘুষ টুষ না খেয়ে সেই আইনের প্রয়োগ করে, সে দেশের খুব কম মানুষই সাহস করে রাস্তায় থুতু ফেলবে। একইভাবে যে দেশের ড্রাইভারদের গরু ছাগল চিনলেই গাড়ি চালানোর লাইসেন্স দেওয়া হয় সে দেশের তুলনায় যে দেশে রীতিমতো দুই স্তরের পরীক্ষা দিতে হয় লাইসেন্স পাওয়ার জন্য এবং প্রতি পদে পদে বিরাট অংকের জরিমানা এবং লাইসেন্স হারানোর ভয় থাকে, সে দেশের ড্রাইভাররা স্বভাবতই বেশি সাবধানী। অতএব, সেসব দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হারও কম থাকে।

উপরের বিষয়গুলোর সাথে মনে হয় আমাদের দেশের অধিকাংশ জনগণই একমত হবেন। যেমন, কেউ রাস্তায় থুতু ফেললে বা দেয়ালের গায়ে মুতলে সেটা সম্পূর্ণই যে রাস্তায় থুতু ফেলেছে বা দেয়ালে মুতেছে তার দায়। কোনো অবস্থাতেই সেটা খোলা পড়ে থাকা রাস্তা, বা রাস্তার উপর ন্যাংটা দাঁড়িয়ে থাকা দেয়ালের না। কাজেই গালি যদি কাউকে দিতেই হয়, জরিমানা বা শাস্তি যদি কারো হতেই হয় তবে সেটা যে রাস্তায় থুতু ফেলছে তাকেই দিতে হবে। রাস্তা বা দেয়ালকে না।

ঠিক তেমনি কেউ খুন করলে যে খুন করেছে, দোষ আমরা তাকেই দিই, একমাত্র আত্মরক্ষার ক্ষেত্র ছাড়া। অমুকে আমাকে উত্তেজিত করেছে, তাই আমি তাকে খুন করেছি, এই "যুক্তি" ধোপে টেকে না। কিন্তু আমাদের দেশে সকল হিসাব উল্টে যায় যখন একটা ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। সেক্ষেত্রে ধর্ষককে বাঁচাতে গিয়ে যেমন তেমন উদ্ভট লজিক খাড়া করে ধর্ষকের অপরাধের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানোর মাধ্যমে ধর্ষকের দায় হালকা করার জন্য সবাই ব্যাকুল হয়ে পড়ে।

সেরকমই একটি উদ্ভট লজিক হচ্ছে ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাককে দায়ী করা। যে গ্রুপটা এই কাজটা করছে, একসময় তাদের দাবি ছিলো যেসব মেয়ে কম কাপড়চোপড় পরে শুধু তারাই ধর্ষিত হয়, বা যেসব মেয়ে ঘরের বাইরে বের হয়, পার্টিতে যায় শুধু তাদের সাথেই রেপের মতো ঘটনা ঘটে। কিন্তু তাদের ধারণা স্বাভাবিকভাবেই ভুল প্রমাণিত করে এরপর বাচ্চা মেয়ে, মাদ্রাসা পড়ুয়া বাচ্চা ছেলে, সালোয়ার কামিজ উইথ ওড়না পরা তরুণী, এমনকি তাদের "আদর্শ" বোরকা হিজাব পরা নারীরাও রেপড হতে লাগলো। শুধু তাই নয়, পরিবারের সদস্য, যেমন বাপ, ভাই দ্বারা নারীদের ধর্ষণের সংবাদ খবরে আসতে লাগলো। দেশে যতো বেশি বোরকা হিজাব পরিহিত নারীর সংখ্যা বাড়তে লাগলো, ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনের ঘটনাও ততোই বাড়তে লাগলো।

এখন তারা কী করবে? নিজেদের রেপিস্ট ভাইবেরাদরদের ইজ্জত বাঁচানোর দায় তো তাদেরই, তাই না? আফটার অল, একসময় এরা যখন রেপ করবে, বা এদের বাপ, ভাই, সন্তান বা পরিবারের সদস্যরা রেপ করবে, তখন তাদের পাছার চামড়া বাঁচানোর জন্য আগে থেকেই তো যুক্তি খাড়া করা লাগবে নাকি? তো, তারা কী লজিক দিলো? তারা লজিক দিলো, অন্য নারীদের পোশাক দেখে নাকি পুরুষরা নিজেদের কন্ট্রোল করতে পারে না। এজন্য যাকে সামনে পায়, এমনকি সেটা দুই মাসের শিশু হোক না কেনো, তার ওপরেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই "থিওরি"র সাথে তাল মেলালো অসংখ্য উচ্চশিক্ষিত মানুষও।

অথচ পৃথিবীতে ধর্ষণের কারণ ও ধর্ষকের মানসিকতা নিয়ে যে অসংখ্য গবেষণা হয়েছে, সেগুলোর অল্প কয়েকটা সারাংশ পড়লেও তারা জানতে পারতো, ধর্ষণের পেছনে সেক্সুয়াল ড্রাইভের তেমন কোনো ভূমিকাই নেই। এটা পুরোটাই ভায়োলেন্স, ক্ষমতা প্রদর্শন এবং এগ্রেশন। কারো যদি কাম জাগে, তবে হস্তমৈথুন করে বা অন্য নারীর সাথে তার সম্মতিতে সংগম করেই যৌনতৃপ্তি পাওয়া যায়, রেপ করে নয়। যৌনতাড়না প্রশমনই যদি ধর্ষণের মূল উদ্দেশ্য হতো, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধর্ষক ভিক্টিমকে মারাত্মকভাবে আহত করতো না। শুধু যৌন তাড়না প্রশমনেই সীমাবদ্ধ থাকতো। তাছাড়া শিশুদেহ যৌনকার্যের উপযোগী নয়। কাজেই শিশু ধর্ষণকারী আসলে অন্য নারীর কম কাপড় দেখে যৌন তাড়নার বশবর্তী হয়ে শিশু দেহের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে, এটা মূলত ধর্ষকের দায় কমানোর বা অপরাধ হালকা করার প্রচেষ্টা মাত্র। কোনো যুক্তিও নয়, গবেষণা বা তথ্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত কোনো থিওরিও নয়।

যদি তাই হতো, তবে বাংলাদেশে বোরকা হিজাব পরা নারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে ধর্ষণের সংখ্যা কমে যাওয়ার কথা ছিলো। সেটা কিন্তু হয়নি, হয়েছে বরং উল্টোটা। বাংলাদেশে ধর্ষণ বেড়েছে আমাদের নিজেদের মানসিকতার কারণে। আমরা খুন করলে খুনির দোষ দিই, যে খুন হয়েছে তার নয় (ধর্মীয় ...ভূতির কারবার ছাড়া, সেক্ষেত্রে আমরা শুয়োরের মতো ঘোঁৎঘোৎ করে খুনির পক্ষ নিই), চুরি, ছিনতাই করলে চোর ছিনতাইকারীকে পারলে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলি। কিন্তু ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে আমাদের পুরো এটিটিউডটাই চেইঞ্জ হয়ে যায়। আমরা তখন ৩৬০ ডিগ্রি এঙ্গেলে ঘুরে গিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে খোঁজার চেষ্টা করি মেয়ের "চালচলন" ঠিক ছিলো কিনা, পোশাক ঠিক ছিলো কিনা। যদি পোশাক এবং চালচলন সংক্রান্ত আমাদের এসিড টেস্টের মাপকাঠিতে মেয়ে কোনোভাবে উতরে যায় তবে আমরা খোঁজার চেষ্টা করি ধর্ষকের সামনে অন্য মেয়েরা "অঙ্গ প্রদর্শন" করে ঘোরাফেরা করে নিরীহ নিষ্পাপ সরল ধর্ষকটিকে "উত্তেজিত" করেছে কিনা। ধর্ষকের সাথে সমাজ ও পরিবেশ পরিস্থিতির "মানবতার কোনো ফাঁক" থেকে গেছে কিনা। তবুও আমরা ১০০% দায় ধর্ষকের ঘাড়ে চাপাতে রাজি নই।

আমাদের দেশে রাস্তায় নারীর মোবাইল ছিনতাই হলে আমরা ছিনতাইকারীর পেছনে দৌঁড়াই। কিন্তু নারীর বুকে হাত দিয়ে চলে গেলে "মেয়েমানুষ এত কথা বলে না" বলে মেয়েটাকেই চুপ করানোর চেষ্টা করি। ধর্ষককে সামাজিকভাবে বয়কট করার বদলে, শেইমিং করার বদলে বয়কট করি, শেইমিং করি ভিক্টিমকে। আমরা ধর্ষককে বুক ফুলিয়ে ঘোরার সুযোগ দিই, আর পরতের পর পরত কাপড় জড়াতে থাকি ভিক্টিমের গায়ে শেকলের পর শেকল পরাতে থাকি নারীর পায়ে। আমাদের পুলিশ ধর্ষণের মামলা নিতে গরিমসি করে। আমাদের ততোধিক হাস্যকর ফরেনসিক বিভাগগুলো ধর্ষণের প্রমাণ খোঁজে "টু ফিঙ্গার" টেস্ট নামক বর্বর প্রথার মাধ্যমে।

আমাদের দেশে আদালতে রেপ ভিক্টিম কয়জনের সাথে ইতোপূর্বে শুয়েছে বা কতো রাতে বাসায় এসেছে এই মাপকাঠিতে ভরা আদালতে তার চরিত্র বিশ্লেষণ করা হয়, যাতে করে রেপের মামলা হালকা করা যায়। যেন ইতোপূর্বে কারো সাথে শুলেই তাকে রেপ করা জায়েজ! ছিঁচকে চুরির মামলার বিচার হয় বাংলাদেশে। ধর্ষণের মামলা পড়ে থাকে যুগের পর যুগ। এই দেশে ধর্ষণ হবে না তো কি সুইজারল্যান্ডে হবে? বাংলাদেশের রেপিস্টরা খুব ভালোভাবেই জানে তারা রেপ করার পরে সম্পূর্ণ দায় কখনোই তাদের ওপর আসবে না। একদল ঝাঁপিয়ে পড়বে ধর্ষণের শিকার নারীর পোশাক কী ছিলো সেটা নিয়ে, একদল শুয়োরের বাচ্চা ঝাঁপিয়ে পড়বে সমাজের "নষ্ট নারীরা" কী কী ভাবে শরীর প্রদর্শন করে ধর্ষককে উত্তেজিত করেছে তা নিয়ে, একদল মানবতামারানি আসবে ধর্ষণ করতে গিয়ে ধর্ষকের অঙ্গহানির ঘটনা কতোটা "অমানবিক" সেই বিচার বিশ্লেষণ নিয়ে। আর বিচার ব্যবস্থা তো বলাই বাহুল্য। ধর্ষণ প্রমাণ করতে গিয়ে যতোবার মৌখিক ধর্ষণের শিকার হতে হয় মেয়েটিকে, সে ভয়ে অনেকে মামলাই করে না, আর হাস্যকর তদন্ত ব্যবস্থার কারণে ধর্ষকের খালাস পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অন্তত নব্বই পার্সেন্ট। বিচারে দোষী প্রমাণিত হলেও সেই বিচারের দিন আসতে আসতে ধর্ষকের এমনিতেই মরার বয়স হয়ে যায়।

অতএব, নারীর ওপর যতোই বস্তার পর বস্তা কাপড় চাপান না কেনো, তাদের যতোই ঘরের ভেতরে সিন্দুকের মধ্যে তালাবদ্ধ করে রাখেন না কেনো, এমনকি যদি ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে "ন্যাংটা নারী" দেখার সকল সম্ভাবনা বাতিল করে দেন না কেনো, গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, ধর্ষণ কমবে না। ধর্ষণ যদি কমাতে হয় তবে ধর্ষক যাতে দায়মুক্তির কোনো সুযোগই না পায় সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে। অর্থাৎ, ধর্ষণের পরে "মেয়েরা এমন পোশাক পরে ক্যান" ইত্যাদি

ছাগলামি করে ধর্ষকের অপরাধের বোঝা হালকা করা যাবে না। পুরুষ শুধুমাত্র একটি লিঙ্গ থাকার কারণে মেয়েদের তুলনায় ক্ষমতাশালী এবং কর্তৃত্বশীল, এসব আদিম যুগের বর্বর ধারণা যে ভুল এই শিক্ষা ছেলেমেয়েদের জন্মের পর থেকেই দিতে হবে। নারীর সম্মান তার ভ্যাজাইনার মধ্যে থাকে, এই ধারণা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। কারণ, ধর্ষকেরা মূলত ধর্ষণ করে নারীর তুলনায় তারা কতোটা ক্ষমতাশালী সেটা বোঝানোর জন্যে, অথবা নারীর "ইজ্জত ছিনিয়ে" তাকে অপমান করার জন্যে, এবং আমাদের এই বিশ্রী সমাজ ব্যবস্থায় ধর্ষক তার উদ্দেশ্য পালনে একশ ভাগ সফল হয়। ধর্ষকের জন্য মানবতা আপাতত এক সাইডে সরিয়ে রেখে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা যতোই বড়ো বড়ো বুলি ছাড়ি না কেনো, মৃত্যুভয় আমাদের সবার মধ্যে আছে, রেপিস্টের মধ্যেও আছে।

ধর্ষণের জন্য ফাঁসির ব্যবস্থা থাকলে সেটা অন্য সম্ভাব্য ধর্ষকদের জন্য সতর্কবাণী হিসেবে কাজ করবে। শুধু সর্ব্বোচ শাস্তির ব্যবস্থা রেখে আইন তৈরি করলেই হবে না। সেই সাথে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে প্রতিটি থানায় আলাদা মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে এবং সেই সেলের রিপোর্টিং কর্মকর্তা হবেন পুলিশের একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা।

এক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন নিশ্চিত করা গেলে খুব বেশি লোকবলেরও প্রয়োজন হবে না। বাংলাদেশে এমনিতেই শিক্ষিত বেকারের অভাব নেই। তাদেরকে বসিয়ে না রেখে এভাবে অন্তত জনসম্পদে পরিণত করা হোক। ধর্ষকের সাথে সাথে প্রতিটা ধর্ষণের ঘটনার পরে যেসব লোক ইনিয়ে বিনিয়ে ধর্ষকের কার্যকলাপ জাস্টিফাই করার চেষ্টা করে (এই যেমন আজকালকার নারীরা ইত্যাদি ইত্যাদি) এদের অনলাইন কার্যকলাপ গোয়েন্দা বিভাগের মাধ্যমে নজরদারির আওতায় আনা হোক এবং এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। দুই একটার শাস্তি হলে হাজার শুয়োরের বাচ্চার ঘোঁৎ ঘোঁৎ বন্ধ হবে।

ধর্ষণ বন্ধ করতে চান? তবে নজর দিন ধর্ষকের মস্তিষ্ক এবং লিঙ্গ নিয়ন্ত্রণের উল্লিখিত উপায়গুলোর দিকে। নারীর পোশাক এবং চালচলনের দিকে নয়।

1824 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।