ফারজানা কাজী

সমাজ কর্মী

.ধর্ষণ হলো নারীকে অধীনে রাখার পুরুষতান্ত্রিক উপায়

নারীর ওপর শক্তি প্রয়াগের চরম রূপ ধর্ষণ। ধর্ষণ যতোটা অবদমিত যৌনতা, তার চেয়ে বেশি নারী বিদ্বেষের প্রকাশ। অনেকেই দাবি করেন, ধর্ষণ বিকারগ্রস্ত লোকের বিকৃত কাজ। কিন্তু ধর্ষণ মোটেই বিকারগ্রস্তের রোগ নয়, এটি পুরুষতন্ত্রের রোগ, সচেতন ভাবে নারীকে সন্ত্রস্ত রাখার উপায়। পুরুষতন্ত্র উৎসাহ দেয় ধর্ষণে। সমাজও ধর্ষণকারীর পক্ষে। ধর্ষণ একটি রাজনৈতিক অপরাধও বটে। নারীকে অধীনে রাখার উপায়, নারীর ওপর বল প্রয়োগের প্রধান অস্ত্র। ধর্ষণকে রাজনৈতিক রূপ দিয়েছে পুরুষতন্ত্র। 

ধর্ষণ যে একটি রাজনৈতিক ব্যাপার এটি বোঝা যায় কোনো দখলকারী সেনাবাহিনী কতৃক অধিকৃত অঞ্চলের নারীদের ধর্ষণের ঘটনায়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কতৃক ৩ লক্ষ বাঙালী নারী ধর্ষিত হয়েছিলো। আজকে বাঙালি সেনাবাহিনী দ্বারা পাহাড়ি নারী ধর্ষিত হয়। রক্ষক পালন করছে ভক্ষকের ভূমিকা। মারমা মেয়ে ধর্ষণের ঘটনায় বড় বড় সংগঠন, নামীদামী লেখনগণ নীরব। কিছু কিছু আাদিবাসী ও নারী সংগঠন ছাড়া হয় নি কোনো প্রতিবাদ। কারণ ওরা পাহাড়ি তাই!

একদিকে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের আশ্বাসের বাণী, অন্যদিকে ধর্ষণ, খুন, অপহরণের উৎসব চালাচ্ছে সরকার। আমাদের মানবতার মা কই? সকল মানবতা মুসলমান রোহিঙ্গার জন্যেই কেবল?

১৩ ও ১৮ বছরের মারমা বোন দুটি ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার করা যায় নি। পরিকল্পনা করেই হয়তো অপহরণ, ধর্ষণ করা হচ্ছে। তা না হলে জড়িতদের খুঁজে বার করা যেতো। ধর্ষণ, জাতিগত হামলা, আতঙ্ক ছড়ানো পাহাড়ের নিত্যদিনের ঘটনা। যার অনেক খবর মূলধারার সংবাদপত্রে প্রকাশ হয় না। ঘটনা বড় আকারে ঘটে গেলে খুব সংক্ষিপ্ত ভাবে ছাপানো হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম এখনো সেনা শাসিত এলাকা। দেশের এক তৃতীয়াংশ সেনা এখনো সেখানে মজুদ কেনো যদি শান্তিচুক্তিই হয়ে থাকবে?

সারা বিশ্বেই বিদ্রোহ দমনের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে ধর্ষণ। যুদ্ধে পরিকল্পিত ভাবেই নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের ঘৃণ্যতম দৃষ্টান্ত দেখা গেছে বসনিয়ার যুদ্ধে, সিয়েরা লিওনে, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এবং পৃথিবীর বহু দেশেই। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্রোহী আদিবাসীদের জাতিগত নির্মূলের ঘৃণ্য কৌশল পাহাড়ি নারী ধর্ষণ। ৭১ সালে বাংলাদেশের নারী ধর্ষণের জন্য পাকিস্তানি সেনাদের বিচার হয় নি। পার্বত্য চট্টগ্রামেও ধর্ষক সেনা সদস্য থেকে শুরু করে বেসামরিক সৈন্য এবং সেটেলারদেরও বিচার হয়নি, হবেও না। পাহাড়িদের বাড়িঘর পুড়িয়ে, গুম, হত্যা, ধর্ষণ করেও বিচার নেই। খুনি, ধর্ষকেরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এ দেশে বিচার পাওয়ার প্রত্যাশাও বৃথা! দেশ জুড়ে তো বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে!

1765 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।