ফারজানা কাজী

সমাজ কর্মী

এ দেশ কি ধর্ষকের অভয়ারণ্য হবে?

মেয়েটি বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ঢাকা আইডিয়াল ল’ কলেজে এলএলবি শেষ পর্বের অধ্যয়নরত ছিলো। পাশাপাশি ইউনিলিভার বাংলাদেশের প্রমোশনাল বিভাগে শেরপুর জেলায় কাজ করতো।

শুক্রবার সে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার উদ্দেশ্যে ছোঁয়া পরিবহনের একটি বাসে সন্ধ্যা সাতটার দিকে রওনা হয়। ওই দিন মেয়েটি ছাড়াও মাত্র পাঁচ/ছয়জন যাত্রী বাসে ছিল। সে ছাড়া অন্য সব যাত্রীরা সিরাজগঞ্জ মোড় এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তে নেমে যায়। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার সময় মেয়েটি একাই বাসে ছিলো।

বাসটি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কাছাকাছি এলে বাসের হেলপার শামীম তাকে জোর করে বাসের পেছনের আসনে নিয়ে যায়। এসময় মেয়েটি তার কাছে থাকা পাঁচ হাজার টাকা ও মোবাইলফোন শামীমকে দিয়ে তাকে ধর্ষণ না করতে অনুরোধ করে। কিন্তু শামীম জোরপূর্বক প্রথমে তাকে ধর্ষণ করে। পরে অপর হেলপার আকরাম ও জাহাঙ্গীর তাকে ধর্ষণ করে।

একপর্যায়ে ঘাড় মটকে মেয়েটি হত্যা করা হয়। পরে মধুপুর উপজেলা সদর অতিক্রম করে বন এলাকা শুরু হলে পঁচিশ মাইল নামক একটি জায়গার রাস্তার পাশে লাশ ফেলে রেখে চলে যায়।

কি চলছে দেশে? একটির পর একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলছে!

এরা কি মানুষ? পশু এদের আমি কিছুতেই বলতে পারি না। পশুরা এতো নৃশংস হয়না। মনুষ্যত্বের এতো অবনতি হয়ে গেছে? একটি মেয়ে একা ঘর থেকে বের হতে পারবে না? তাহলেই হায়েনারা ছিঁড়ে ফেলবে? কোনো স্বাধীনতা নারীর থাকবে না? কোনো ধর্ষণের কখনো বিচার হবেনা? একটির পর একটি ধর্ষণ হতেই থাকবে?

শিক্ষায়, যোগ্যতায়, যুক্তিতে কোনো ভাবেই না পেরে অসভ্য, বর্বর পুরুষ শুধু তার একটি অপদার্থ অঙ্গটিরই ব্যবহার করতে জানে।

মেয়েরা এদেশে স্বাধীন ভাবে চলবে? মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে? তা তো হবেনা, তাকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হবে।

এখনো কি আবাল জনগোষ্ঠীরা বলবে মেয়েটির পোশাক ভালো ছিলোনা? একা একা কেন বাসে উঠলো? সব পুরুষ এক না? হ্যাঁ, বলবে এখনো….এ দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী রাম আবাল। এরা কোনো হিংস্রতা-নৃশংসতার প্রতিবাদ করেনা বরং যে নৃশংসতার শিকার হয় তার সমালোচনাতেই মেতে ওঠে। আসলে এরাও একেকটা অসভ্য, বর্বর, নারীবিদ্বেষী ওই ধর্ষকদের মতো।

কোনো ভাবেই পুরুষ তার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে না কিন্তু নারীকে বলবে পোশাক ঠিক করতে। নারীকে খোয়াড়ে পুরতে চাইবে।

খুব অবাক লাগে- এদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা নারী। কিন্তু এখানেই নারী নিরাপদ নয়। কেন এই নারী নেতাগণ ধর্ষণের ব্যপারে মুখ খুলছেন না? কেন একটি ধর্ষণেরও বিচার নিশ্চিত করতে পারছেন না?

এ দেশ কি তবে ধর্ষকের অভয়ারণ্যে পরিণত হবে?

2115 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।