এলিজা আকবর

ব্যক্তি জীবনে শিক্ষকতা পেশার সাথে যুক্ত এলিজা আকবর একজন সচেতন সমাজকর্মী এবং নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী লেখক।

সব পুরুষই মস্তিষ্কে ধর্ষক

সব দেশেই, সব পুরুষ'ই সম্ভাব্য ধর্ষণকারী। পৃথিবীতে পৌরাণিক কাল আর নেই, তাই দেবতারা আর ধর্ষণ করে না। তবে আজকাল আমি, তুমি, সে এবং আমরাই প্রকৃত ধর্ষণকারী।



ধর্ষণকারীর দেশ মহাদেশ, শিল্পোন্নত-অনুন্নত সমাজ সংস্কৃতি, ধর্ম বলতে কিছু নেই। ধর্ষকরা সবসময়ে সবার মাঝেই আছে, ছিলো এবং থাকবেও। তবে বাংলাদেশের ধর্ষকরা প্রায় উদ্যত শিশ্ন তুলে ঝড়োময় খবর করে যায়। তার প্রভাবও আমরা দেখতে পাই কম-বেশি সবার মাঝে। পত্রিকা খুললেও দেশের পাতায়, পাঁচ থেকে দশটা ধর্ষণের খবর থাকবেই। শুধু ধর্ষণ'ই নয়, ধর্ষণের পর ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়। এই দেশে পিতা ধর্ষণ করে কন্যাকে! জামাতা ধর্ষণ করে শাশুড়িকে! গৃহশিক্ষক ধষর্ণ করে ছাত্রীকে! ঈমাম ধর্ষণ করে আমপাড়া পড়তে আশা কিশোরীকে! দুলাভাই ধর্ষণ করে শ্যালিকাকে! শ্বশুর ধর্ষণ করে পুত্রবধুকে! বৃদ্ধ ধর্ষণ করে শিশুকে! এক ধর্মের মানুষ ধর্ষণ করে অপর ধর্মের মানুষকে! এ রকমই অসস্পর্কিত ধর্ষণ চলছে দেশ জুড়ে, পৃথিবী জুড়ে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, পুরুষ কেনো ধর্ষণ করে? এ সম্পর্কে দেখা যায় তিনটি তত্ত্বঃ

একটি নারীবাদীদের, একটি সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীদের, ও একটি জীববিজ্ঞানীদের। তবে সবটাতে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায় না। কিন্তু জীববিজ্ঞানীদের ধর্ষণতত্ত্বে বেশ সত্য রয়েছে, যাকে বলা হয় জীবতাত্ত্বিক সত্য, নারীবাদীদের তত্ত্বে রয়েছে সামাজিক -সাংস্কৃতিক সত্য, যা বিবর্তনের বর্তমান পর্যায়ে, জীববৈজ্ঞানিক সত্যের থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জীববিজ্ঞানের সূত্রে দাবি করে যে -হত্যা, স্বৈরাচার, পীড়ন, লুন্ঠন, শোষণ, প্রভৃতি প্রবণতা উদ্ভূত হয়েছে, বিবর্তনের ফলেই।

তবে কথা থাকে যে, বিবর্তনের সূত্রের সাহায্যে সামাজিক, রাজনীতিক অন্যায়কে বিধানসম্মত করাও য়ায় না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে,

ধর্ষণকে উত্‍সাহিত করে বা করছে পিতৃতান্ত্রীক সমাজ ও ধর্ম। কিন্তু উপায় কী আছে? যা আছে, তা কি  যথেষ্ট? এ সম্পর্কে বাংলাদেশের আইন যা বলে। তা একটু জেনে নেয়া যাক -নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) – এর ৯ ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের অপরাধের যে সকল শাস্তির বিধান রয়েছে তা হলো-  

ধর্ষণের ফলে কোনো নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে ধর্ষণকারীর জন্য রয়েছে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং ইহার অতিরিক্ত অনূন্য এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ডের বিধান৷ একাধিক ব্যাক্তি দলবদ্ধভাবে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করলে ধর্ষণ কালে বা ধর্ষণের পর যদি তার মৃত্যু ঘটে তবে উক্ত দলের সকলের জন্যই এই শাস্তি প্রযোজ্য হবে। ধর্ষণের চেষ্টা করলে ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ দশ বছর এবং সর্বনিম্ন পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং এর অতিরিক্ত অর্থদন্ডেরও বিধান । কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানো বা আহত করার চেষ্টা করলে ধর্ষণকারী যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবেন। আইন প্রণয়ন  করা আছে কিন্তু  এর যথাযথ প্রয়োগ  আমরা দেখি না।

এবার একটি পরিসংখ্যানের দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক-

বাংলাদেশ পুলিশের তৈরি পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ১৬ মাসে ( ২০১৬-২০১৭) ২৭ হাজার ৪৩৮টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে অধিকাংশ ঘটনা বিচারের অপেক্ষায়। আমাদের ধারণা বেসরকারি পরিসংখ্যান আরো বেশি হবে। আবার ধর্ষণের শিকার সব শিশুর মামলার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন

-এর মাধ্যমে অভিযুক্তদের কম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে। কিন্তু কতজন শিশুর ধর্ষণ মামলা, ট্রাইব্যুনালের আওতায় আনা হয়েছে এবং শাস্তি নিশ্চিত করা হয়েছে? আমাদের কাছে সঠিক পরিসংখ্যানও নেই। ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেফতার এবং কঠোর শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা হোক। ধর্ষণ প্রতিরোধে, পরিবার, সমাজ এবং নারীর'ও কিছু দায়-দায়িত্ব রয়েছে।

এ লক্ষ্যে, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। ধর্ষণ প্রতিরোধের জন্যে নারীকে হয়ে উঠতে হবে শিক্ষিত, আর্থসামাজিক এবং শারীরিক শক্তিতে শক্তিশালী। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ধর্ষণ প্রতিরোধ এবং প্রতিকার অসম্ভব কিছু নয়।

 

101573 times read

নারী'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত নারী'র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় নারী কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। নারীতে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।